|
|
|
|
লিফটের খাঁজে ৭ দিন আটক ‘ম্যাও’, উদ্ধার করল দমকল |
ঋজু বসু ও জয়তী রাহা • কলকাতা |
ঠিক যেন সেই ‘হযবরল’র গল্প। তবে গাছতলার বদলে এক অফিসবাড়ি। বরাহনগরে গোপাললাল ঠাকুর রোডে পূর্ত দফতরের অফিসের মাথায় ফ্ল্যাট তোলা হচ্ছে। ছ’তলা বাড়িতে চলছে লিফট বসানোরও তোড়জোড়। ওই লিফটের খাঁজেই ভেসে আসছে একটানা ‘ম্যাও-ম্যাও-ম্যাও’।
সেই ‘ম্যাও’ সামলাতেই মঙ্গলবার সকাল ন’টা থেকে প্রাণপাত করে চলেছেন ষাটোর্ধ্ব এক প্রৌঢ়া। অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসারের স্ত্রী ঝর্না মণ্ডল। বেড়াল-কুকুর নিয়ে ঝর্নাদেবীর ‘আদিখ্যেতা’ মোটেও পছন্দ নয় তাঁর স্বামীর। কিন্তু তাতে কী? চাকুরে ছেলে-মেয়ের থেকে নেওয়া হাতখরচের টাকায় সকাল-সন্ধে পাড়ার খান ২৫-৩০ কুকুর-বেড়ালকে ভাত, মাছ, মাংস, বিস্কুট খাওয়ানোর ‘পুণ্যকর্মে’ বিরাম নেই ওই গৃহবধূর। অতএব সকাল-সকাল বাড়ির পাশের সরকারি অফিসে ‘বেড়াল বন্দি’ হওয়ার কাণ্ডে তিনি আর কী করে স্থির থাকতে পারেন! |
|
স্থানীয় থানায় ফোন করে কখনও শুনতে হয়েছে, ‘রাস্তার বেড়ালের জন্য আপনার এত মাথাব্যথা কীসের?’ কখনও দমকলের মুখঝামটা, ‘খেয়ে-দেয়ে কাজ নেই, এই গরমে এখন বেড়াল নামাতে যাব!’ কেঁদে-কেটে পশুপ্রেমীদের সংস্থা, সংবাদমাধ্যম কাউকে ফোন করতে বাদ রাখেননি ঝর্নাদেবী। শেষটায় মুশকিল-আসান হলেন পশুপ্রেমী বিধায়ক তথা অভিনেত্রী দেবশ্রী রায়। দেবশ্রী রায়ের ফোন পেয়েই বেড়াল উদ্ধারে শশব্যস্ত দমকলমন্ত্রী জাভেদ খান। সন্ধে পুইয়ে অবশেষে মাঠে নামে দমকলবাহিনী।
বেড়াল কখন লিফটের ফাঁকে আটকাল, তা কেউ দেখেনি। তবে ঝর্নার কথায়, “আমি খবরটা সকালে পেলেও ও নির্ঘাত দিন সাতেক ধরে লিফ্টে আটকে ছিল। ধবধবে হুলোসোনার শরীরটা একেবারে ভেঙে গিয়েছে! ওকেও তো আমি রোজ খেতে দিই। ক’দিন ধরেই হুলোটাকে দেখছিলাম না।” এ দিন সকালে প্রিয় হুলোর খোঁজ পেয়ে তাকে প্যাকেটে করে ভাত ছুড়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করেছিলেন ঝর্না। কিন্তু নিশানা ঠিক হয়নি। মন্ত্রীর নির্দেশে বেড়াল উদ্ধারে নামলেও সে আঁচড়ে দিতে পারে ভেবে চিন্তায় পড়েন দমকলকর্মীরা। সন্ধে সাড়ে সাতটা নাগাদ পাঁচতলা অবধি মই লাগাতেই সুড়সুড় করে নেমে দে-দৌড় হুলোর। ঝর্নাদেবীর কাজ অবশ্য তখনও সারা হয়নি। সারা দিন লিফটের ধারে হত্যে দিয়ে পড়ে থাকার পরে ‘হুলোসোনা’কে মাছ-ভাত খাইয়ে তবে তাঁর মুখে হাসি ফুটেছে। তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে হুলোবাবাজি এর পরে এক চোখ বুজিয়ে ফ্যাঁচ ফ্যাঁচ করে হেসেছে কি না, তা অবশ্য জানা যায়নি। |
|
|
|
|
|