|
|
|
|
মাধোপুর এখন মোর গাঁও |
স্বপন সরকার • পটনা |
গ্রামের রাস্তা ঘাটে, বাড়ির চালে নির্ভয়ে নেচে বেড়ায় ময়ূর-ময়ূরী। বর্ষায় পেখম তুলে নাচে তারা। মানুষের সাহচর্যে এতটুকু অস্বস্তি নেই তাদের।
বিহারের পূর্ব চম্পারণ জেলার গ্রামটির আদি নাম মাধোপুর-গোবিন্দ। কিন্তু গত ছ’দশকের এই ময়ূর-সহবাসে আশপাশের মানুষের মুখে মুখে গ্রামের নাম বদলে গিয়েছে, হয়েছে ‘মোর গাঁও’। এ বার গ্রামটিকে নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে রাজ্য প্রশাসন। জাতীয় পাখীর এই বিচরণ ভূমিকে কেন্দ্র করে গ্রামীণ পর্যটনে ইৎসাহিত প্রশাসন গ্রামের নাম পাল্টে ‘ময়ূর বিহার’ করার কথা ভাবছে।
নোর গাঁওয়ের বাসিন্দা প্রমোদ কুমারের কথায়, “ বছর ষাটেক আগে শোনপুরের মেলা থেকে চন্দ্রিকা সিংহ নামে এক গ্রামবাসী এক জোড়া ময়ূর কিনে নিয়ে আসেন। তার থেকেই গ্রামে ময়ূরের সংখ্যাবৃদ্ধি।” এখন গ্রামে ময়ূরের সংখ্যা শতাধিক। গ্রামবাসীদের দৈনন্দিন জীবনের সুখ-দুঃখের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে ময়ূররা। প্রমোদের কথায়, “ওরাও এখন এই গ্রামের বাসিন্দা।” তাদের কেউ কোনও ক্ষতি করে না? প্রমোদ বলেন, “না। এখনও পর্যন্ত এমন ঘটনা ঘটেনি। আর এমন কাজ করলে তার শাস্তি যে মারত্মক হবে সে কথাটাও আমরা জানিয়ে রেখেছি।” গ্রামবাসী সন্তোষ সিংহের মতো গ্রামবাসীরা এর জন্য গর্ব অনুভব করেন। তাঁর কথায়, “আমরা এই ময়ূরদের নিয়ে সুখে থাকি। বাচ্চা এবং মহিলারা ময়ূরদের সঙ্গে থাকায় তাদের মেজাজও ভাল থাকে। কাজে ফূর্তি থাকে। বিশেষ করে বর্ষাকালে ময়ূর যখন পেখম মেলে নাচে, তখন গ্রামের চেহারাটাই যায় বদলে। গ্রাম রঙ্গিন হয়ে ওঠে।” |
|
জেলা সদর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরের এই গ্রামে মানুষ আর ময়ূরের সহাবস্থান রাজ্যের কাছে এক উদাহরণ হয়ে গিয়েছে। খবর পেয়ে বিষয়টি নিয়ে উৎসাহিত মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এ বার ‘জাতীয় পাখি’-র জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো গড়তে উদ্যোগী প্রশাসনও।
পক্ষী বিশেষজ্ঞরা ঘুরে গিয়েছেন গ্রাম। রিপোটও জমা পড়েছে। বিশেষজ্ঞ অরবিন্দ মিশ্রের কথায়, “এই ময়ূর যতদিন ধরে গ্রামে আছে, সেই তুলনায় বংশ বৃদ্ধি কম হয়েছে। তার বড় কারণ, ওদের ডিমগুলি ঠিক ভাবে বাঁচানো যাচ্ছে না। কুকুর এবং শিয়াল এসে পাখির ডিমগুলি খেয়ে যাচ্ছে।” এই গ্রামের মধ্যে দিয়ে একটি খাল চলে গিয়েছে। যেখানে প্রায় সময়ই জল থাকে না। বিশেষজ্ঞের পরামর্শ: এই খালে জলের ব্যবস্থা করতে হবে। গ্রামের চারিদিকে অনেক বেশি গাছ লাগাতে হবে। বিশেষ করে বাঁশ গাছ। এই গাছগুলি যেহেতু ঘেরা জায়গা তৈরি করে, তাতে ওদের থাকতে সুবিধে হবে। এ ছাড়াও ওদের খাওয়ার জন্য এই জায়গায় বিভিন্ন রকম ফলের গাছও লাগাতে হবে। জেলাশাসক অভিজিৎ সিংহ জানিয়েছেন, “সেচ দফতরের কর্মীরা ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছেন। খালে যাতে সারা বছর জল থাকে তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বিভিন্ন প্রজাতির গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।” এই জায়গাটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার ব্যাপারে জেলাশাসক বলেন, “সেই পরিকল্পনা আছে। সব কিছু হয়ে গেলে এখানকার নামও বদলে যেতে পারে।” এখন যা মোর গাঁও, তাই হয়তো হয়ে উঠবে ‘ময়ুর বিহার’। |
|
|
|
|
|