সম্পাদকীয় ১...
ইতিহাসের সূচনালগ্ন
ন্ধ পলাতক বন্দি চেন গুয়াংচেং অবশেষে চিন ছাড়িয়া মার্কিন দেশে অবতরণ করিয়াছেন। আপাত ভাবে উচ্চশিক্ষার্থে তাঁহাকে নিউ ইয়র্ক উড়াইয়া আনিবার পিছনে যেহেতু বেজিং-এর মার্কিন দূতাবাসের সর্বাপেক্ষা বড় ভূমিকা ছিল, ভাবিলে ভুল হইবে না যে প্রকৃতপক্ষে চেন রাজনৈতিক আশ্রিত হিসাবে সে দেশে আসিলেন। যে শ্বাসরুদ্ধকর ঘটনাবলির মধ্য দিয়া গৃহবন্দি চেন পলাইয়াছিলেন, বেজিং-এ পৌঁছাইয়া মার্কিন দূতাবাসে আশ্রয়ভিক্ষা করিয়াছিলেন এবং বহু নাটকীয় ওলোটপালটের পর শেষ পর্যন্ত বিমানবন্দর আসিতে সক্ষম হইলেন, সেই কাহিনি ইতিমধ্যেই বহুশ্রুত। যাহা ততখানি জ্ঞাত বা শ্রুত নহে, তাহা হইল, এই গোটা অধ্যায়ে বেজিং যদিও বাধাদান না করার সিদ্ধান্ত লইয়াছিল, চেন বেজিং ছাড়া-মাত্রই মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক ভূমিকা ও অনধিকার চর্চার গুরুতর অভিযোগ আনিয়াছে চিন। ওয়াশিংটনকে যে কখনও এ বিষয়ে বেজিং-এর নিকট হেনস্থা হইতে হইবে, তাহাতে বিশেষ সন্দেহ নাই।
অনেক কিছুর মতোই এ বিষয়েও বেজিং ও ওয়াশিংটনের দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। চিনের মতে, চেন গুয়াংচেং কেবল একটি বুদবুদ-বলয় মাত্র, কিছু দিন পরই মানুষ তাঁহাকে সম্পূর্ণত ভুলিয়া যাইবেন। আর মার্কিন বিশেষজ্ঞরা বলিতেছেন, চেন গুয়াংচেং আসলে ঐতিহাসিক অধ্যায়, চিনের সামাজিক ও কূটনৈতিক ইতিহাসে এই ঘটনার গভীর প্রভাব পড়িতে বাধ্য। এই দুই বিপরীত মেরুর মধ্যে সত্যকে খুঁজিয়া লওয়া দুরূহ কাজ। তবে এইটুকু নিঃসন্দেহে বলা যাইবে যে চিনের মানবাধিকার হরণ ও দলনের নিরবচ্ছিন্ন ইতিহাসের গতিধারাটি অন্ধ মানবাধিকার কর্মী চেন গুয়াংচেং যদি না-ও পাল্টাইতে পারেন, তাঁহার একক ঘটনাটি কিন্তু ইতিহাসে অবিস্মরণীয় থাকিয়া যাইবে, এবং অভ্রান্ত পূর্বদৃষ্টান্ত হিসাবে নানা ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করিতে থাকিবে। বাস্তবিক, চিন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই মতপার্থক্যের মধ্যে একটি গভীরতর বৈষম্যের আভাসও স্পষ্ট তাহা এই দুই দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির বৈষম্য। গণতান্ত্রিক মানদণ্ডের বৈষম্য। গণতান্ত্রিক রীতিনীতিতে অভ্যস্ত হইলে তবেই না কোনও “পূর্বদৃষ্টান্ত”-এর গুরুত্ব অনুধাবন সম্ভব। স্বৈরাচারী কিংবা কর্তৃত্ববাদী রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে প্রতিটি ঘটনাই একক ঘটনা, একটির সঙ্গে অন্যটির সাযুজ্য কিংবা সংযোগ রাখিবার কোনও দায় বা দায়িত্বের প্রশ্নই নাই। এতদ্ব্যতীত, দুইটি বিষয় নিশ্চয়ই স্মরণযোগ্য। এক, চেন-এর অন্ধত্ব। দুই, ওই বিশেষ সময়ে মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টনের বেজিং সফর, যাহা সফল করিতে চিনা সরকার অত্যন্ত উদ্গ্রীব ও তৎপর ছিল। এই দু’টি কারণে চেন-এর ঘটনার একটি অদ্ভুত এককত্ব বা বিশেষত্ব আছে বেজিং পরবর্তী কালে অবশ্যই এই যুক্তি ব্যবহার করিবে।
তবু প্রশ্ন, কর্তৃত্ববাদে অভ্যস্ত চিন কেন অকস্মাৎ চেন-এর ক্ষেত্রে বিবেচনা দেখাইয়া নিউ ইয়র্কগামী বিমানে তাঁহার জায়গা করিয়া দিল। প্রথমত, এই মুহূর্তে বিশ্বময় বড় বেশি পাদপ্রদীপের আলো চেন-এর মুখের উপর, চিনা সরকার দেশের অন্দরে যতই কর্তৃত্ববাদী হউক, আন্তর্জাতিক চাপ বেজিং-ও কখনও কখনও মান্য করিতে বাধ্য। দ্বিতীয়ত, বহু দিন পর সে দেশে নেতৃত্ব-বদলের প্রহর ঘনাইয়া আসিয়াছে। সেই সময় আন্তর্জাতিক মতের এত বড় অবমাননা চিনের পক্ষে স্বার্থসম্মত হইত না। এবং তৃতীয়ত, এই বিবেচনা হয়তো সাময়িক। হয়তো ইহার সহিত আরও বড় শাস্তি লুকাইয়া রহিয়াছে, হয়তো চেন আর কখনওই ফিরিতে পারিবেন না। এ যাবৎ যত রাষ্ট্রদ্রোহী দেশ ছাড়িয়াছেন, বেজিং তাঁহাদের ফিরিবার অনুমতি দেয় নাই। চেন কি সত্যই নিজ ইচ্ছানুসারে বৎসরকালের মধ্যে ফিরিতে পারিবেন? কে জানে! আস্তিনে তাস লুকাইতে তো বেজিং-ই বিশ্বসেরা!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.