প্রদেশ কংগ্রেসের আচরণে ‘ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত’ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইন্দিরা ভবনের জায়গায় নজরুল ভবন করবেন না বলেই সিদ্ধান্ত নিলেন। আগামী ২৫ মে, নজরুল মঞ্চে কবির নামাঙ্কিত যে ভবনের শিলান্যাস করবেন মুখ্যমন্ত্রী, সেটি হবে রাজারহাটে হিডকো-র পুরনো ভবনের উল্টো দিকের জমিতে।
ইন্দিরা ভবনের নাম বদলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে মঙ্গলবার ফোন করেন রাজ্যের সেচমন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া। মহাকরণের খবর, তার পরেই ‘ক্ষুব্ধ’ হয়ে মুখ্যমন্ত্রী ওই সিদ্ধান্ত নেন। পরে ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি জানান, কোনও সরকারি নথিতে ইন্দিরা ভবনের নামের কোনও ‘অস্তিত্ব’ নেই। একটা ‘অপব্যাখ্যা’ করা হচ্ছে। আর তাকে কেন্দ্র করেই সরকারের এমন উদ্যোগকে নষ্ট করা হল।
তিনি মন্তব্য করেন, “যে জায়গাকে ঘিরে নজরুলের নামকে এমন ভাবে কলুষিত করা হচ্ছে, সেখানে কিছু করার কথা সরকার কখনওই মেনে নিতে পারে না। ওই বাড়ি যেমন পড়ে আছে, তেমনই থাক!” তাঁর কথায়, “যারা এমন করল, তাদের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখতে চাই না। এনাফ ইজ এনাফ!”
মমতা অবশ্য সম্প্রতি একটি চ্যানেলের সাক্ষাৎকারেও বলেছেন, রাজ্য কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর কোনও সম্পর্কই নেই। তবে মন্ত্রিসভার সহকর্মী কংগ্রেসের মন্ত্রীদের সঙ্গে আছে।
সেই মন্ত্রীদেরই অন্যতম মানসবাবু এ দিন সকালে ফোন করেন মুখ্যমন্ত্রীকে। বস্তুত, ইন্দিরা ভবন নিয়ে সংঘাতের পথ থেকে সরে এসে একটা ‘রফা’য় পৌঁছনোর চেষ্টা কংগ্রেসের তরফে শুরু হয়েছিল। দলের ‘অনুরোধে’ই মুখ্যমন্ত্রী মমতা এবং পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে এ দিন কথা বলেন মানসবাবু। পরে তিনি তা জানান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য ও পশ্চিমবঙ্গের ভারপ্রাপ্ত এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদকে।
পুরমন্ত্রীর সঙ্গে মানসবাবুর কথোপকথনকে ‘ইতিবাচক’ আখ্যা দিয়ে প্রদেশ কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, “ইন্দিরা’জি এবং নজরুল, দু’জনকেই আমরা শ্রদ্ধা করি। কাউকেই অবমাননা করতে চাই না। দু’জনকেই সম্মান জানানো হোক, সেটাই চাই।
জেদাজেদির ব্যাপার নয়। হারলে সবাই মিলে হারব। জিতলেও সবাই মিলেই।”
সল্টলেকের বাড়িটিতে ইন্দিরার নামাঙ্কিত ফলক রেখে দেওয়া হবে বলে আগে রাজ্য সরকারের তরফে যে ‘আশ্বাস’ দেওয়া হয়েছিল, তা-ও মেনে নেওয়ার পথেই হাঁটতে শুরু করেছিল কংগ্রেস। যার জন্য খানিকটা ‘আপসে’র সুরেই রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্ব এ দিন বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, ইন্দিরা ভবনের নাম বদল না-করে সেখানে নজরুল অ্যাকাডেমি হলে তাঁদের আপত্তি নেই।
মান্নানের বক্তব্য, “ইন্দিরা ভবন নিয়ে রাজ্য সরকার কী করতে চাইছে, সেটা ঘোষণা করা হোক। বা লিখিত ভাবে জানানো হোক।”
এরই মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য অন্য সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। মমতা মনে করেন, সল্টলেকে ইন্দিরা গাঁধীর নামাঙ্কিত বাড়িতে নজরুলের নামে ভবন হলে সেখানে দেশ-বিদেশের মানুষ আসতেন। একটা তীর্থক্ষেত্রের চেহারা নিত সেই বাড়ি। কিন্তু তা করা যাচ্ছে না ‘অন্যায় প্রচারে’র জন্য। এই অবস্থায় সরকার ‘সম্মানের সঙ্গে’ সরে আসারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ইন্দিরা ভবনে তিনি যা করতে চেয়েছিলেন, নিউটাউনের প্রস্তাবিত জায়গায় তা আরও বড় আকারে গড়ে তুলতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা। সল্টলেকের পাঁচ নম্বর সেক্টর থেকে রাজারহাটে ঢোকার মুখেই রয়েছে পুরনো হিডকো
ভবন। তার উল্টো দিকে ২ একর জমিতে নজরুলের নামে তৈরি হবে মুখ্যমন্ত্রীর সাধের ভবন। সেখানে থাকবে নজরুল ভবন, নজরুল অ্যাকাডেমি এবং নজরুল গবেষণাকেন্দ্র। সব মিলিয়ে জায়গাটার নাম হতে পারে ‘নজরুল তীর্থ’।
মুখ্যমন্ত্রীর ভাবনায় রয়েছে, হিডকো-র পুরনো বাড়িটিকে তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী হিসাবে তাঁর নিজের দফতর করা। সেখান থেকেই তিনি দফতরের অধীন বিভিন্ন অ্যাকাডেমির বৈঠক করবেন। নতুন সিদ্ধান্ত কার্যকর করার জন্য তিনি পুরমন্ত্রী ফিরহাদকে নির্দেশ দিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রাক্কালে ইন্দিরা ভবন নিয়ে ‘টানাপোড়েনে’ শেষ পর্যন্ত ইতি পড়লে দুই জোট শরিকের কাছেই তা ‘স্বস্তিদায়ক’ হবে। আপাতত তাই জোট-শিবিরের নজর থাকছে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার দিকে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের কথায়, “শুক্রবার নজরুল অ্যাকাডেমির শিলান্যাস অনুষ্ঠানে সরকার কী ঘোষণা করে, তার অপেক্ষায় রয়েছি।” |