এমবিবিএস ডিগ্রি পেতে গেলে প্রতিটি ছাত্রছাত্রীকে গ্রামে গিয়ে এক বছরের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতেই হবে। মেডিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়া (এমসিআই)-কে এ ব্যাপারে সুপারিশ করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক।
এক বার রেজিস্ট্রেশন হয়ে গেলে ডাক্তারদের গ্রামে পাঠানো দেশ জুড়েই একটা সমস্যা। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের একটি সূত্র জানাচ্ছেন, গ্রামে চিকিৎসা করলে এমডি, এমএস-এর প্রবেশিকা পরীক্ষায় অতিরিক্ত নম্বর পাওয়ার নিয়ম চালু করার পরেও চিকিৎসকেরা গ্রামে যেতে উৎসাহিত বোধ করেননি। তাই এখন গ্রামে যাওয়াটা এমবিবিএস পাঠ্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রক মনে করে, এই ব্যবস্থায় এক দিকে গ্রামে চিকিৎসকের সঙ্কট কিছুটা দূর হবে। অন্য দিকে যাঁরা ডাক্তারি পাশ করে বেরোবেন, তাঁরাও গ্রামাঞ্চলে কী কী রোগ হয়, মূল স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি কী কী, সে ব্যাপারে সম্যক ধারণা করতে পারবেন।
চিকিৎসকদের সংগঠন ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ) অবশ্য মাঝেমধ্যেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছে এ ব্যাপারে তাদের সুপারিশ পাঠিয়েছে। ওই সব সুপারিশে বলা হয়েছিল, রেজিস্ট্রেশন পেতে হলে ডাক্তারি ছাত্রছাত্রীদের গ্রামে যাওয়া বাধ্যতামূলক করুক এমসিআই। এত দিন পরে সেই একই সুপারিশ এল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের কাছ থেকে।
এমসিআই জানাচ্ছে, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সুপারিশ কী ভাবে বাস্তবায়িত করা যায়, তা খতিয়ে দেখতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি করা হয়েছে। ওই বিশেষজ্ঞ কমিটি এমসিআই-এর পরিচালন বোর্ডের কাছে খুব শীঘ্রই রিপোর্ট দেবে। তার পরে এমসিআই সেটা স্বাস্থ্য মন্ত্রকের অনুমোদনের জন্য পাঠাবে। এই ব্যবস্থায় এমবিবিএস পড়ার সময়সীমা আরও বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা রয়েছে কোনও কোনও মহলের। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এক অফিসার অবশ্য বলেন, “উন্নত দেশগুলিতে ডাক্তারি পড়া শেষ করতে সাত থেকে আট বছর লাগে। আমাদের এ দেশে সাড়ে চার থেকে পাঁচ বছর পড়েই পড়ুয়ারা এমবিবিএস ডিগ্রি পেয়ে যান। তাই একটা বছর গ্রামে কাটিয়ে এলে হবু চিকিৎসকদের বছর নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা অমূলক।”
এমসিআই সূত্রের খবর, গ্রামে থাকার এক বছর সময়টায় ডাক্তারি পড়ুয়ারা নির্দিষ্ট হারে মাসোহারা পাবেন। অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে কাজ করতে পারবেন তাঁরা। কিছুটা প্রতিকূল অবস্থায় কাজ করলে পরবর্তী পর্যায়ের তাঁদের সুবিধা হবে বলেই মনে করছে এমসিআই।
চিকিৎসক সংগঠনগুলি এ ব্যাপারে কী ভাবছে? আইএমএ-র রাজ্য শাখার প্রাক্তন সভাপতি সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “আমরা বিভিন্ন সময়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক এবং এমসিআই-কে এ ব্যাপারে মতামত জানিয়ে এসেছি। আমাদের সুপারিশই এখন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক করায় সমস্যা সমাধানের পথে অনেকটা এগোনো যাবে বলে মনে করছি।” সুবীরবাবুর মন্তব্য, “রোগীকে সাপে কাটলে কী করতে হয় তা গ্রামে গিয়ে পরিস্থিতির মুখোমুখি না হলে বোঝা যায় না। আমাদের যে সব ছাত্রছাত্রী ডাক্তারি পাশ করে বেরোচ্ছেন তাঁদের এ ব্যাপারে কোনও অভিজ্ঞতাই থাকে না।” চিকিৎসকদের কেউ কেউ অবশ্য বলছেন, এ নিয়ে আইনি জটিলতা তৈরি হতে পারে। কিন্তু আইএমএ-র রাজ্য শাখার প্রাক্তন সভাপতি সুবীরবাবু বলেন, “ভেলোর মেডিক্যাল কলেজ থেকে যাঁরা পাশ করে বেরোন তাঁদের রেজিস্ট্রেশন পেতে গেলে এক বছর গ্রামে গিয়ে ডাক্তারি করতে হয়। একটা মেডিক্যাল কলেজে যখন চালু আছে তখন অন্য সবার ক্ষেত্রে তা বলবৎ করতে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়।” আইএমএ-র প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি সুদীপ্ত রায় অবশ্য বলেছেন, “ভাল প্রস্তাব। কিন্তু গ্রামের হাসপাতালের পরিকাঠামো উন্নত করতে হবে। না হলে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষা কিন্তু সম্পূর্ণ হবে না।” |