গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে কার্যত ভেস্তে গেল পুরুলিয়া ২ ব্লক তৃণমূলের সম্মেলন। অন্য দিকে, পাড়া ব্লকের দেউলিতে দলেরই অঞ্চল সভাপতিকে মারধর ও দলীয় কার্যালয়ে ভাঙচুরের অভিযোগ উঠল তৃণমূলের সংখ্যালঘু সেলের এক নেতার বিরুদ্ধে। দু’টি ঘটনাই শনিবারের।
শনিবার পুরুলিয়া ২ ব্লকের ছড়রা উচ্চ বিদ্যালয়ে সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন স্থানীয় ব্লক তৃণমূল নেতৃত্ব। জেলা নেতাদের পাশাপাশি সম্মেলনে অঞ্চল সভাপতিদের বক্তব্য পেশের সুযোগ দেওয়ার দাবিতে এবং উপস্থিত প্রতিনিধিদের একাংশের ব্লক সভাপতি বদলের দাবি নিয়ে গণ্ডগোলের জেরে শেষমেশ সম্মেলনের কাজ সম্পূর্ণ না করেই জেলা নেতৃত্বকে ফিরে আসতে হয়। ব্লকের তৃণমূল সভাপতি কাঞ্চন দিগার বলেন, “কিছু লোক ঝামেলা করতেই এসেছিল। তার মধ্যেও সম্মেলনের কাজ শেষ হয়েছে।”
দলীয় দ্বন্দ্বের ছবি সামনে এসেছে পাড়াতেও। দেউলি অঞ্চল সভাপতি মানিক মাহাতো সাঁওতালডিহি থানায় দলেরই সংখ্যালঘু সেলের জেলা কমিটির সদস্য সিদ্দিক আনসারির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। মানিকবাবুর অভিযোগ, তিনি শনিবার রাতে কাঁকিবাজারে দলের কার্যালয়ে কিছু কর্মীর সঙ্গে বসেছিলেন। সেই সময় সিদ্দিক কয়েক জনকে নিয়ে তাঁদের নিগ্রহ করেন ও কার্যালয়ে ভাঙচুর চালান। যদিও সিদ্দিক আনসারির দাবি, “এলাকায় কয়লা ও লোহা পাচারের অবৈধ ব্যবসার সঙ্গে দলেরই কিছু কর্মী-সমর্থক জড়িয়ে পড়েছেন বলেই অনৈতিক কাজ বন্ধ করার দাবি মানিকবাবুদের কাছে জানাতে গিয়েছিলাম। সেখানে সামান্য বচসা হয়। মারধর, ভাঙচুরের অভিযোগ ভিত্তিহীন।” দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে দলের উচ্চ নেতৃত্বের কাছে অভিযোগ জানিয়েছে।
পঞ্চায়েত নিবার্চনের আগে দলীয় কর্মীদের বা পঞ্চায়েত স্তরের নেতাদের কী ভূমিকা হবে, সে লক্ষ্যেই সম্মেলন ছিল পুরুলিয়া ২ ব্লকে। মধ্যাহ্নভোজনের বিরতির ঠিক আগে ঝামেলার সূত্রপাত। গোলামারা পঞ্চায়েত এলাকার অঞ্চল সভাপতি মিহির মাহাতো বলেন, “জেলাস্তরের বিভিন্ন বক্তা পরপর বক্তৃতা করছিলেন। কিন্তু আমাদের মতো আঞ্চলিক নেতাদেরও তো কিছু বলার আছে! আর সম্মেলন-মঞ্চই সে-সব বলার উপযুক্ত জায়গা। আমরা অপেক্ষায় ছিলাম কখন অঞ্চল সভাপতিদের বলার সুযোগ দেওয়া হবে। বারবার দাবি করার পরেও ব্লক সভাপতি আমাদের দাবি অগ্রাহ্য করায় গণ্ডগোল শুরু হয়।”
ছড়রার অঞ্চল সভাপতি অমল মাহাতোর অভিযোগ, “প্ল্যাকার্ড তুলে জেলা নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় যে ব্লক সভাপতির বদল চাই। কিন্তু বর্তমান সভাপতি আমাদের কথা বলতে দিচ্ছিলেন না এই আশঙ্কায় যে, পাছে আমরা বক্তব্য রাখলে তাঁর অযোগ্যতা স্পষ্ট হয়ে যায়।” দলের আরেক নেতা রাজপতি মাহাতোর দাবি, “আমাদের কথা বলার দাবি তুলতেই কিছু লোক আমাদের হুমকি দিতে শুরু করে। আমাদের কয়েক জনকে ধাক্কা দেয়, হাতা, খুন্তি নিয়ে তেড়ে আসে। এর পর আর সম্মেলনের কাজ হয়নি।” বেশ কয়েকজন অঞ্চল সভাপতি জানিয়েছেন, তাঁরা জেলা নেতৃত্বকে সব বলবেন। প্রয়োজনে সুবিচারের দাবিতে জেলা দফতরে ধর্নায় বসবেন।
পুরুলিয়া ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি কাঞ্চন দিগার বলেন, “আমাদের দলে যে পদ্ধতিতে সম্মেলন পরিচালিত হয়, সেভাবেই সম্মেলনের কাজ চলছিল। কিছু লোক এ ভাবে গণ্ডগোল পাকিয়ে ক্ষমতার দখল নিতে চাইছে। এরা সংখ্যায় খুবই কম। তা ছাড়া ব্লকের কর্মী-সমর্থকেরা কার পক্ষে রয়েছেন, তার প্রমাণ তাঁরা সম্মেলনে উপস্থিত হয়েই দিয়েছেন। কী ঘটেছে তা জেলা নেতৃত্বও দেখেছেন।” আঞ্চলিক সভাপতিদের বলার সুযোগ না দেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, “ওই সময়ের মধ্যে প্রত্যেককে বলার সুযোগ দেওয়া সম্ভব ছিল না।” সম্মেলনে পুরুলিয়ার বিধায়ক কে পি সিংহদেও বলেন, “শেষের দিকে সামান্য গণ্ডগোল হয়েছে। তবে সম্মেলন তখন শেষ হয়ে গিয়েছিল। কিছু বিষয় নিয়ে আঞ্চলিক নেতাদের কিছু বক্তব্য আছে। আমি বলেছি তা জানাতে। দল খতিয়ে দেখবে।” |