ইউপিএ-র দায়বদ্ধতা তুলে ধরতে সাত বছর আগে সনিয়া-মনমোহন যে পরম্পরা শুরু করেছিলেন, সেটাই এ বার গলগ্রহ হয়ে উঠেছে সরকারের।
মঙ্গলবার কেন্দ্রে দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের তৃতীয় বর্ষপূর্তি। ফি-বছর এই দিনে শরিক নেতাদের নিজের বাসভবনে নৈশভোজে নিমন্ত্রণ করেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। তার আগে সরকারের সাফল্য নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী ও ইউপিএ-র সভানেত্রী, যার পোশাকি নাম ‘রিপোর্ট ট্যু দ্য পিপ্ল’। এ বার সেই রিপোর্ট ফেসবুক-টুইটার-এর মতো সোশ্যাল সাইটগুলোতেও প্রকাশ করার কথা। কিন্তু মন্ত্রিসভার শীর্ষ সূত্রে বলা হচ্ছে, রিপোর্ট তৈরি করাটাই এ বার মাথা ব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেন না গত এক বছরে কেন্দ্রের ‘সাফল্য’ বলতে তেমন কিছুই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
রিপোর্টটি তৈরির জন্য অম্বিকা সোনি, সলমন খুরশিদ, কপিল সিব্বল, পবন বনশল, নারায়ণস্বামীর মতো কয়েক জন মন্ত্রীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারের শীর্ষ সূত্রের খবর, ‘অতি কষ্টে’ ১৩টি পরিচ্ছেদের যে রিপোর্ট তাঁরা তৈরি করেছেন, তাতে সরকারের সাফল্য বর্ণনায় ১০০ দিনের কাজ, গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশন, ভারত নির্মাণ বা মাওবাদী এলাকার উন্নয়ন প্রকল্পের সুষ্ঠু রূপায়ণের কথাই বলা হচ্ছে। অথচ, এই প্রকল্পগুলির কোনওটিই নতুন নয়। অনেকগুলি আবার শুরু হয়েছে প্রথম ইউপিএ জমানায়।
গত এক বছরে সরকারের এই স্থবিরতার জন্য জোট-রাজনীতির বাধ্যবাধকতাকে অনেকটাই দায়ী করা হচ্ছে। তৃণমূলের মতো শরিক দলের ধারাবাহিক বাগড়ায় আর্থিক সংস্কার কর্মসূচি শিকেয় উঠেছে। প্রত্যক্ষ কর বিধি, পণ্য পরিষেবা কর, পেনশন বিল, বিমা বিল, খুচরো ব্যবসায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের মতো বিষয়ে এক ইঞ্চিও এগোতে পারেনি সরকার। অদূর ভবিষ্যতে যে হইহই করে এগিয়ে যেতে পারবে, এমন সম্ভাবনাও নেই। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা কৌশিক বসু ওয়াশিংটনে বলেন, ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে সংস্কারের সম্ভাবনা নেই। শরিকি বাধা ছাড়াও তিনি লাল ফিতের ফাঁস ও দুর্নীতির অভিযোগে নাজেহাল আমলাদের অতি সক্রিয়তাকেও দায়ী করেছিলেন।
রিপোর্ট তৈরির দায়িত্বে থাকা এক মন্ত্রীর কথায়, আসলে সমস্যা কেবল সাফল্যের বিষয় তুলে ধরাতেই সীমিত নেই। গত বছরের রিপোর্টে জমি অধিগ্রহণ আইন, খাদ্য সুরক্ষা বিল, লোকপাল বিল, হুইস্ল ব্লোয়ার বিল ইত্যাদি দ্রুত সংসদে পাশ করানোর অঙ্গীকার করা হয়েছিল। এর কোনওটিই পালন করা যায়নি। ওই মন্ত্রীর বক্তব্য, গত বছর বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান উদ্যাপনের সময়ে দুর্নীতির প্রশ্নে রাজনীতির বাতাস ছিল ভারী। সেই পরিস্থিতিতে দুর্নীতি দমনে একাধিক বিল পাশ করানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। দাম কমিয়ে মানুষকে সুরাহা দেওয়ার কথাও বলেছিলেন। কিন্তু দুই বিষয়েই তেমন কিছু হয়নি। এ বার ফের একই প্রতিশ্রুতি দিলে বিরোধীরা হইচই করতে পারে। এই পরিস্থিতিতে কী দিয়ে রিপোর্ট ভরানো হয়, তা নিয়েই কৌতূহলী সকলে। |