তরাই-ডুয়ার্সের কিছু এলাকার অন্তর্ভুক্তির দাবিতে অনড় থাকলেও তা নিয়ে এখনই সংঘাতে যাওয়া হবে না বলে রাজ্যকে জানিয়ে দিল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। শনিবার মোর্চার তরফে কালিম্পঙের বিধায়ক তথা প্রচারসচিব হরকাবাহাদুর ছেত্রী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করার পরে এ কথা খোলাখুলিই জানিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “চরম আর্থিক সঙ্কটের মধ্যেও এই সরকার ভাল কাজ করছে। বামেদের আমলে পাহাড়ের জন্য যেখানে বরাদ্দ ছিল মাত্র ৪ কোটি টাকা, সেখানে তা ৫৫ কোটি টাকা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী ৬ বার পাহাড়ে গিয়েছেন। প্রতি সপ্তাহেই কোনও মন্ত্রী, আমলা পাহাড়ে গিয়ে উন্নয়নের কাজ তদারকি করছেন।”
সরকারের বর্ষপূর্তির প্রাক্কালে মোর্চার প্রচারসচিব হরকাবাহাদুরের উপলব্ধি, “একটা কথা এই প্রথম মনে হচ্ছে, যেন আমাদেরই সরকার এক বছর পূর্ণ করল। আরও মনে হচ্ছে, পাহড়ের মানুষও রাজ্যের প্রশাসনিক ব্যবস্থার অঙ্গ। আগের সরকারের ৩৪ বছরের সময়কালে কখনও এটা অনুভব করিনি।”
তাঁরা পাহাড়ে শান্তি বজায় রেখে উন্নয়নের কাজে সহযোগিতা করতে কতটা ‘আন্তরিক’, সেই বার্তা দিতে সোমবার গোর্খা লিগের সভার সময়ে পাল্টা সভা ডেকেও তা স্থগিত রেখেছে মোর্চা। মোর্চার দার্জিলিং মহকুমা শাখার সভাপতি দাওয়া লামা বলেছেন, “সোমবার অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগের সভা আছে ক্লাবসাইড রোডে। আমাদের সভা করার কথা ছিল চকবাজারে। একই সময়ে দু’টি সভা হলে সমস্যা হতে পারে। তাই সভা স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বিমল গুরুঙ্গ।” মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি জানান, গ্রীষ্মের পর্যটন মরসুমে যাতে পর্যটকদের সমস্যা না-হয়, সে জন্য দলও বাড়তি নজর রাখছে।
২ বছর আগে ২১ মে ক্লাবসাইড রোডে খুন হন গোর্খা লিগ সভাপতি মদন তামাং। তার পর থেকে ওই দিনে ঘটনাস্থলে স্মরণসভা করে থাকে তাঁর দল। এ বারও ওই সভার অনুমতি দিয়েছেন প্রশাসন। গোর্খা লিগের সহ-সভাপতি লক্ষ্মণ প্রধানের দাবি, “এ বার স্মরণসভায় জিএনএলএফ সভাপতি সুবাস ঘিসিং-সহ মোর্চা বিরোধী সব দলের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ করা হয়েছে।”
পক্ষান্তরে, ওই দিন একই সময়ে চকবাজারে সভার প্রস্তুতি নেয় মোর্চা। সেই সভা স্থগিত করায় কিছুটা হলেও আশ্বস্ত পুলিশ-প্রশাসন। দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, “মিটিং-মিছিল হলে যানজটে পর্যটকদের ভোগান্তি হয়। সেটা এড়াতে সবরকম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ট্যুর অপারেটরদের সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।”
মোর্চার অন্দরের খবর, একই সময়ে সভার ব্যাপারে সকালে দলের শীর্ষ নেতারা আলোচনা করেন। তখনই নেতাদের একাংশ আশঙ্কা প্রকাশ করেন, অশান্তি হলে দলের ভূমিকা নিয়ে পাহাড়বাসীর মধ্যেই প্রশ্ন উঠতে পারে। রাজ্যের কাছেও জবাবদিহি করতে হতে পারে। তখনই ঠিক হয়, মোর্চার সভা প্রত্যাহার করা হবে। রাজ্য সরকারের বর্ষপূর্তির বিষয়েও দলের মতামত কলকাতায় প্রচার সচিবের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে। তা জানিয়েও দিয়েছেন হরকাবাহাদুর। পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবির প্রশ্নে মোর্চার প্রচার সচিবের বক্তব্য, “জিটিএ-তে পাহাড়ে স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যদি, সত্যিসত্যিই তা কার্যকর হয়, তবে পাহাড়ের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা অনেকাংশে পূর্ণ হবে।” |