হাজার টাকায় কী হয়, ক্ষোভ অনিচ্ছুক চাষিদের
ই প্রথম কোনও উচ্ছ্বাস দেখা গেল না সিঙ্গুরে।
শনিবার মিলনমেলা প্রাঙ্গণে ‘প্রগতি উৎসব’-এ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সিঙ্গুরের ‘অনিচ্ছুক’ চাষি ও খেতমজুরদের জন্য ‘সরকারি সাহায্যে’র কথা ঘোষণা করলেন। কিন্তু মন ভরল না অধিকাংশ গ্রামবাসীরই। কেউ বললেন, “এমন আশা করিনি।” কারও জিজ্ঞাসা, “আমাদের কি ভিক্ষা দেওয়া হচ্ছে?” তাঁরা চান, স্থায়ী সমাধান।
অথচ, ২০০৬ সাল থেকে ঠিক উল্টো ছবিটাই দেখা যাচ্ছিল হুগলির এই জনপদে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যে কোনও পদক্ষেপে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েছে সিঙ্গুর। বিরোধী নেত্রী হিসেবে জমি অধিগ্রহণের বিরুদ্ধে মমতা যখন পথে নেমেছেন, পাশে পেয়েছেন ‘অনিচ্ছুক’দের। মমতা যখন মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসছেন, আনন্দে ফেটে পড়েছে সিঙ্গুর। অকাল-হোলিতে মেতেছেন চাষিরা। গ্রামে গ্রামে আবির উড়েছে। বাজনা বেজেছে। এমনকী, নতুন মন্ত্রিসভা যখন সিঙ্গুরের জমি ফেরত সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় ‘বিল’ আনে, তখন নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন গ্রামবাসীরা।
কিন্তু, এক বছরে পরিস্থিতির অনেক ‘পরিবর্তন’ হয়েছে।
নব ঘোষ পঞ্চানন ঘোষ সুজয় ঘোষ
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিঙ্গুর না-আসা নিয়ে বহু গ্রামবাসীর মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছে। স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের ‘ভূমিকা’ নিয়েও তাঁদের অনেক ‘প্রশ্ন’। সিঙ্গুর-মামলা ঝুলে রয়েছে হাইকোর্টে। আদালতের রায়ের জন্য অপেক্ষা করতে রাজি ‘অনিচ্ছুক’রা। কিন্তু সেই রায়ের আগে তাঁদের একটাই দাবি ছিল, অন্তত জঙ্গলমহলের মতো কোনও ‘প্যাকেজ’ দিক রাজ্য সরকার। তাতে অন্তত সংসারটা বাঁচে। কিন্তু শনিবার মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে ‘অনিচ্ছুক’ চাষি এবং খেতমজুর পরিবারগুলিকে মাসে এক হাজার টাকা করে সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছেন, তাতে সিঙ্গুরের অনেকেই আর ‘আশার আলো’ দেখছেন না। তাঁদের ক্ষোভ, এক হাজার টাকায় এখন কী হয়? এক ধাপ এগিয়ে স্থানীয় সিপিএম নেতা বলাই সাঁবুই একে ‘পর্বতের মূষিক প্রসব’ বলে কটাক্ষও করেছেন।
গোপালনগর ঘোষপাড়ার বাসিন্দা সুজয় ঘোষের বিঘে পাঁচেক জমি চলে গিয়েছে টাটাদের প্রকল্পে। ‘কৃষিজমি রক্ষা কমিটি’-র আন্দোলনে তিনি বারবার সামিল হয়েছেন। সেই সুজয়বাবুই এখন আক্ষেপ করছেন, “এই সরকারি সাহায্যে কী হবে? ছেলে এত দিন ধরে তৃণমূল করল। একটা চাকরি বা বেকার-ভাতা পায়নি।” তিনি সরাসরিই বলছেন, “দিদি গরিবদের দেখছেন না। দিদির কথা শুনেই এত দিন জমি ফেলে রেখেছিলাম।” সুজয়বাবুর প্রতিবেশী এবং ভুক্তভোগী পঞ্চানন ঘোষের গলায় হতাশা, “আমার সাত জনের পরিবার। এই টাকায় কী হবে? মনে হচ্ছে, জমিও আর ফেরত পাব না।” তবে, বেড়াবেড়ির বিজন দাস বা প্রদ্যুৎ ঘোষেরা অবশ্য এখনও জমি ফেরতের ব্যাপারে আশাবাদী। মুখ্যমন্ত্রীর উপরে এখনও তাঁদের ‘ভরসা’ অটুট।
অধিকাংশ ‘অনিচ্ছুক’দের ক্ষোভ যে যথাযথ, তা মানছেন সংশ্লিষ্ট কেজেডি গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য তথা গোপালনগরের বাসিন্দা নব ঘোষ। তিনিও বলেন, “এক হাজার টাকায় কি অভাব মিটবে? এমন পরিবারও রয়েছে, যার ১৫-১৬ জন সদস্য। তেল-নুনের দামও উঠবে না। হয় সরকার জমি দিক, না হলে সমতুল ক্ষতিপূরণ দিক।”
হরিপালের তৃণমূল বিধায়ক তথা সিঙ্গুরের জমি-আন্দোলনের অন্যতম নেতা বেচারাম মান্না অবশ্য দাবি করেছেন, “এ দিনের ঘোষণার মধ্যে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও এক বার প্রমাণ করলেন, তিনি সিঙ্গুরকে ভোলেননি।” কিছু ক্ষেত্রে চাষিদের ক্ষোভ যে ‘স্বাভাবিক’ তা মেনে নিয়ে তিনি বলেন, “চাষিদের বুঝতে হবে, আইনের বাইরে কেউ নন। আইনি জটিলতা কাটলেই জমি ফেরত পাওয়া যাবে। সরকার জমি ফেরত দিতে বদ্ধপরিকর।”
প্রশ্ন হচ্ছে, সিঙ্গুর তা বুঝছে তো?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.