|
|
|
|
পরিবর্তনের সুযোগ নিতে পারেন তিনিই |
জয়ন্ত ঘোষাল • কলকাতা |
সিঙ্গুরে বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলন তখন তুঙ্গে। তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেন এক একান্ত আলাপচারিতায় বলেছিলেন, “সিঙ্গুরে শিল্পায়নের চেষ্টা নিয়ে বিরোধী অপপ্রচারে আমাদের দলের দীর্ঘদিনের কৃষি-ভিত্তিতে ক্ষয় হতে পারে। সেই সাংগঠনিক ক্ষয় মেনে নিতেই হবে। দলকে চোকাতে হবে সামাজিক মূল্য। কিন্তু তা বলে ইতিহাসের চাকাকে তো আর উল্টো দিকে ঘোরানো যাবে না!”
তার পর নন্দীগ্রামে গুলি চলায় মমতার আন্দোলন আরও বড় ‘সাফল্যের স্বাদ’ পেল। আর জমি অধিগ্রহণ এবং শিল্পায়ন সরকারের কাছে হয়ে উঠল ‘অধরা স্বপ্ন’। এবং দলীয় অবক্ষয়ের ফলে কঠিন সত্যকে গ্রহণ করার ক্ষমতাও অবলুপ্ত হল সিপিএমের। আলিমুদ্দিন স্ট্রিট বলল দেং জিয়াও পিং আর রাজধর্মের কথা অনেক শোনা হয়েছে। মুন্ডু গেলে খাবটা কী?
রাজ্যপাট পরিবর্তনের পর এক বছর অতিবাহিত। মমতা এখন শাসক। সিপিএম বিরোধী। কিন্তু ক্ষমতাসীন মমতা আজও যেন অনেক বেশি জঙ্গি আন্দোলনের নায়িকা। হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালার মতো তাঁর পিছনে চলমান মানবজমিন। মা-মাটি-মানুষ। যে কোনও মুখ্যমন্ত্রীর মতোই মমতারও লক্ষ্য, রাজ্যের সামগ্রিক উন্নয়ন। আর এখানেই তাঁর সব চেয়ে বড় পরীক্ষা। কারণ, উন্নয়ন মানে কর্মসংস্থান এবং তার জন্য চাই শিল্পায়ন ও তার উপযোগী আবহ। সরকারের এক বছরের কাজকর্ম পর্যালোচনায় এই মূল্যায়নই তাই সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। |
 |
রাজ্যপালকে অভ্যর্থনা। সরকারের এক বছর পূর্তি উৎসবে। শনিবার। ছবি: দেবাশিস রায় |
নির্বাচনী ইস্তাহারে তৃণমূল বলেছিল, ‘শিল্প গড়া আমাদের লক্ষ্য।’ কিন্তু শিল্প তো জমি ছাড়া হবে না। আর সেখানেই জটিল জট। মুখ্যমন্ত্রীর ‘বিরোধী নেত্রী’ সুলভ মানসিকতার ফলেই জমি অধিগ্রহণ নিয়ে ‘ইতিবাচক’ পদক্ষেপ করতে পারছে না সরকার। শহরে জমির ঊর্ধ্বসীমা আইন (আরবান ল্যান্ড সিলিং অ্যাক্ট) না-বদলানোয় ভারী শিল্পের জন্য বড় জমি অধিগ্রহণ করা যাচ্ছে না। নির্বাচনী ইস্তাহারে বলা হয়েছিল, “তৃণমূল কংগ্রেস সরকার অবশ্যই শিল্পায়নের জন্য সেই সকল জমি অধিগ্রহণের চেষ্টা করবে যেগুলি আদৌ চাষযোগ্য নয় এবং তার জন্য তৈরি করবে একটি যথার্থ ও পূর্ণাঙ্গ ল্যান্ড ব্যাঙ্ক।” এক বছরে ওই ব্যাঙ্কে সংগৃহীত জমি, সরকারি হিসেবে ৬০ হাজার একর। কিন্তু এক লপ্তে খুব বড় মাপের জমি তাতে বিশেষ নেই।
ছবিটা বড় বিনিয়োগকারীদের কাছে খুব আশাপ্রদ বলা যায় না। বরং বলা যেতেই পারে, নির্বাচনী ইস্তাহারকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে নতুন সরকার এমন কোনও বার্তা দিতে ‘ব্যর্থ’, যা থেকে বোঝা যায় শিল্পায়ন নিয়ে তারা প্রকৃতপক্ষে যথেষ্ট ‘সক্রিয়’। উল্টে এই সরকারের এমন একটি ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে যে, তারা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিবিধ পুরস্কার, আলোকসজ্জা, সাদা-নীলের সমারোহ অথবা ভাতা-পেনশন ইত্যাদি চালু করতে যতটা উৎসাহী, বড় শিল্পের জন্য ততটা নয়। আর ভারী শিল্প ছাড়া বড় মাপের কর্মসংস্থান যে কঠিন, তা কে না জানে।
আসলে গত তিন দশক ধরে এটাই পশ্চিমবঙ্গের শিল্পায়ন-ভবিতব্য। সিপিএম-শাসিত পশ্চিমবঙ্গকে বিনিয়োগকারীরা কখনওই তাদের নিশ্চিন্ত ঠিকানা বলে ভাবতে পারেনি। জঙ্গি শ্রমিক-আন্দোলন, বেহাল আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, হরতাল-ধর্মঘটের রাজনীতি, পুঁজি আনার ক্ষেত্রে সিপিএমের নিজস্ব ‘তাত্ত্বিক’ দ্বন্দ্ব সব মিলিয়ে এই রাজ্য বড় বড় বিনিয়োগকারীদের কাছে মোটামুটি ব্রাত্যই ছিল। বরং দীর্ঘ বামফ্রন্ট সরকারের আমলে অনেকে এই রাজ্য থেকে পাততাড়ি গুটোনোই শ্রেয় বলে মনে করেছেন।
জ্যোতি বসুর আমলের শেষ দিকে বামফ্রন্ট সরকার তার শিল্পনীতি ঘোষণা করলেও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী হয়েই ঐকান্তিক ভাবে চাকাটাকে ‘উল্টো দিকে’ ঘোরানোর চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর সদিচ্ছা, উদ্যোগ দুটোই ছিল। সেটা বাম-জমানার শেষ পর্ব। সেই তিন-চার বছরেই বুদ্ধবাবু চেষ্টা করে টাটাকে সিঙ্গুরে টেনে এনেছিলেন। |
শিল্প বাংলায় মাথা তুলে দাঁড়াবে,
আমি বিশ্বাস করি
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
মুখ্যমন্ত্রী |
উদ্যমী মুখ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে এ
এক উদ্যমী সরকার
এম কে নারায়ণন
রাজ্যপাল |
|
|
তাকে ঘিরে তৈরি হচ্ছিল আরও কিছু সম্ভাবনা। মমতার সিঙ্গুর আন্দোলন তাতে জল ঢেলে দিল। নন্দীগ্রাম কাণ্ড সেই কফিনে পুঁতে দিল শেষ পেরেক। শাসকের গদিতে বসেও সেই মুখটা বদলাননি মমতা। তাতেই শঙ্কা বেড়েছে বড় বিনিয়োগকারী ও শিল্পপতিদের। একে তো এই রাজ্যে এক লপ্তে বড় জমি পাওয়া কঠিন, তার উপর শিল্পের জন্য জমির ব্যবস্থা করতে সরকার পাশে দাঁড়াবে না বলে ঘোষণা করেছে। অন্য দিকে জমির ঊর্ধ্বসীমা শিথিল করতেও মমতা ‘কেস টু কেস’ বিবেচনার কথা বলে লাগামটা সরকারের হাতেই রাখতে চেয়েছেন। এর সবটাই বড় বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ বাড়ানোর পক্ষে যথেষ্ট।
অবশ্য এই প্রতিকূল পরিস্থিতি ক্রমশ অনুধাবন করছেন মমতা। বুঝছেন, ৩৪ বছরের সিপিএম শাসনের পরিবর্তনের পর এ বার সময় এসেছে তাঁর নিজের দলের পথ নির্দেশিকায় পরিবর্তন নিয়ে আসার। সেটাই সময়ের দাবি। হয়তো তাই, বর্ষপূর্তির সভায় দাঁড়িয়ে শনিবার তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন, “শিল্প বাংলায় মাথা তুলে দাঁড়াবে, আমি বিশ্বাস করি।” বিনিয়োগকারীদের অপেক্ষা, সেই পথের ‘হদিশ’ পাওয়া। কারণ ওই সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা থেকে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন কারও বক্তৃতাতেই রাজ্যে শিল্পায়নের আগামী রূপরেখা নিয়ে সরকারি ভাবনার আর কোনও বিশদ ব্যাখ্যা মেলেনি। প্রসঙ্গটি বরং কিছুটা কম গুরুত্ব পেয়েছে এ দিন।
কিন্তু এটাকেই সরকারের প্রকৃত মনোভাব ভাবলে বোধহয় সঠিক হবে না। জারের বিরুদ্ধে রক্তক্ষয়ী বিপ্লবের পর লেনিন নতুন সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নতুন অর্থনৈতিক নীতি প্রণয়ন করেছিলেন। বিপ্লবের পর সেটিই ছিল সুশাসনের চেষ্টা। মাও জে দংয়ের চিন বদলে গিয়েছে দেং জিয়াও পিং-এর চিনে। ১৯৭৭ সালে সিপিএম ক্ষমতায় এসে ভেবেছিল, ভাতা দিয়ে রাজ্যে বেকার সমস্যার সমাধান করা যাবে। কিন্তু অচিরে তারাও বুঝতে পেরেছিল, যে বেকার-ভাতা দিয়ে বেকার সমস্যার সমাধান হবে না। আর তাই নীতি বদলে প্রথমে জ্যোতি বসু এবং পরে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য শিল্পায়ন ও সংস্কারের পথে এগোতে চেয়েছিলেন।
ইতিহাস থেকে মমতা একেবারে মুখ ফিরিয়ে আছেন, তা কিন্তু নয়। সেই সত্যিটা বুঝেছেন বলেই ইস্তাহারে এসইজেড বিরোধিতা থাকলেও ইনফোসিস যাতে রাজ্য ছেড়ে চলে না যায়, তার জন্য কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মার সঙ্গে বৈঠক করে মমতা তাদের এসইজেডের সব সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। হিলারি ক্লিন্টনের সফরেও তিনি বিনিয়োগ ও উন্নয়নের ব্যাপারে অতি সক্রিয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
এমন নয় যে, এই সামান্য বার্তায় রাজ্যে শিল্পে জোয়ার আসবে। |
দুই জমানা : প্রথম বছর |
২১ জুন ১৯৭৭

জ্যোতি বসুর সরকার |
২০ মে ২০১২

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার |
• মন্ত্রিসভার প্রথম সিদ্ধান্ত: নকশাল-সহ সব
রাজনৈতিক
বন্দির মুক্তি। মিসা’য় আটক ২৮৭ জনও মুক্ত।
• ঊর্ধ্বসীমার পুনর্বিন্যাস করে বাড়তিজমি
ভূমিহীনদের
বিলির সিদ্ধান্ত। বর্গাদার নথিভুক্তি শুরু।
• পঞ্চায়েত আইন পুনরুজ্জীবনের সিদ্ধান্ত। ত্রিস্তর
পঞ্চায়েত নির্বাচন। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ।
• শিক্ষক-বেতনের ভার নিল রাজ্য। সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত
শিক্ষা অবৈতনিক। কোষাগারে বিপুল চাপ।
• পাঁচ হাজার বন্ধ কারখানা খোলার ঘোষণা।
বেকারভাতা চালু। বার্ষিক ৯ কোটির বাজেট বরাদ্দ।
• চাল উৎপাদন ৬০ লক্ষ থেকে বেড়ে ৭৬ লক্ষ টন। |
• মন্ত্রিসভার প্রথম সিদ্ধান্ত: সিঙ্গুরে জমি ফেরানো হবে।
অর্ডিন্যান্স-বিতর্ক কাটিয়ে বিল। বিষয়টি বিচারাধীন।
• জমির ঊর্ধ্বসীমায় ছাড়ের পরিধি কিছুটা বাড়ল। সময়ে
প্রকল্প না-হলে জমি ফেরানোর সংস্থান।
• বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন কমিটিতে রাজনৈতিক
প্রতিনিধি বর্জনে বিধি। প্রেসিডেন্সিতে মেন্টর গ্রুপ।
• প্রশাসনে স্বচ্ছতা আনতে ই-গভর্ন্যান্স।
• শিক্ষক-বেতন মাস পয়লায়। ছ’লক্ষ চাকরি সৃষ্টির
ঘোষণা। একশো দিনের কাজ-এ ৩৩% সাফল্য।
• পাহাড়ে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি। সংঘর্ষে কিষেণজি নিহত,
আত্মসমর্পণ জাগরী বাস্কে-সুচিত্রা মাহাতোর। |
|
কিন্তু হিলারি-মমতা বৈঠক শিল্পমুখী আবহ তৈরির প্রচেষ্টা হিসেবেই আমজনতার মনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফলে মমতা রাজ্যের সামনে একটা আশা সঞ্চারিত করেছেন। এখন প্রশ্ন হল, এই ‘ইতিবাচক’ বার্তার ভিত্তিতে আগামী দিনগুলিতে তিনি রাজধর্মের উদার পথে হাঁটবেন, নাকি রাজ্যের মানুষকে ইতিহাসের এক বিয়োগান্তক পরিণতি দেখতে হবে, যা রাজ্যকে আরও অবক্ষয় এবং শিল্প-বিমুখতার দিকে নিয়ে যাবে? যেখানে দলতন্ত্রই শেষ কথা?
মুখ্যমন্ত্রী কোনও দলের মুখ্যমন্ত্রী নন। তিনি রাজ্যের মানুষের মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যে আমরির ঘটনায় অবাঙালি ব্যবসায়ীদের মধ্যে নেতিবাচক বার্তা সঞ্চারিত হওয়ায় মমতা তা সংশোধনেরও চেষ্টা করছেন। ভোটে জিতে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার অল্প কিছু দিন আগেই শহরের এক অভিজাত ক্লাবে আয়োজিত দ্য টেলিগ্রাফ বিতর্কে অংশ নিয়ে মমতা বলেছিলেন, “আমি জানি সিঙ্গুর আন্দোলনের জন্য আপনারা সমাজের কিছু মানুষ (পড়ুন অভিজাত শহরবাসী) আমাকে ভুল বুঝছেন। কৃষকদের স্বার্থরক্ষায় আমাকে আন্দোলন করতে হয়েছে। কিন্তু তার মানে এই নয়, আমি শিল্প বিরোধী।” এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর হয়তো মুখ্যমন্ত্রী কৃষি এবং শিল্পের এই সংঘাত ঘোচানোর পথে আরও সক্রিয় হবেন।
মমতা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর এক বছর কাটল। এ বার এই দাবি ক্রমশ বড় হয়ে উঠছে যে, ‘পরিবর্তনের রূপকার’ হিসেবে তিনি কেন আবার বামপন্থীদের পরিত্যক্ত পথেই হাঁটবেন? বামপন্থীদের চেয়েও বেশি বামপন্থী হয়ে কেন খুচরো ব্যবসায় বিদেশি বিনিয়োগ থেকে শুরু করে পেনশন বিলের বিরোধিতা করবেন? কেন তিনি শুধু সিপিএম নয় মতাদর্শগত ভাবে অতীতের সস্তা জনপ্রিয়তার বামপন্থী রাজনীতির ঐতিহ্যকে দূরে ঠেলে এক নতুন বাংলা গড়ার জন্য আধুনিক মানসিকতার পরিচয় দেবেন না? আশির দশকের গোড়ায় কম্পিউটর বসানোর বিরুদ্ধে তীব্র বাধা তৈরি করে সে দিনের শাসক সিপিএম যেমন রাজ্যের এগিয়ে চলার পথে কাঁটা বিছিয়ে দিয়েছিল, আজ ওয়ালমার্টের বিরুদ্ধে জেহাদ করে মমতাও কেন একই রকম ‘ভুল’ করবেন? অনেকে বলছেন, সময় দিতে হবে। মমতা পারবেন। আবার অনেকে এমনও ভাবছেন, এই এক বছরের মধ্যেই বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন ঘটনায় মমতার আচরণে যে ধরনের ‘সহনশীলতার অভাব’ ফুটে উঠেছে, সমালোচনা ‘সহ্য’ করতে না পারার যে মনোভাব বারবার তাঁর হাবেভাবে প্রকাশ পেয়ে যাচ্ছে, শাসক তৃণমূলের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা মেজ-সেজ-ছোট মাপের দলীয় নেতা-কর্মী থেকে শুরু করে পাড়ায় পাড়ায় গজিয়ে ওঠা ইট-বালি-সিমেন্টের ‘সিন্ডিকেট’ যে ভাবে দাপট দেখাচ্ছে, তা রাজ্যের ‘অনুকূল’ পরিবেশের পরিপন্থী। এ সব ঘটনা বিনিয়োগকারীদের আস্থা জোগায় না।
কিন্তু মুদ্রার অপর পিঠও আছে। বর্ষপূর্তির অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ফের স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিনি ‘নেতিবাচক রাজনীতি’ চান না। বলেছেন, “বন্ধ-অবরোধের রাজনীতি নয়। চালু রাখুন। খোলা রাখুন।” এই এক বছরেই
পাহাড় এবং জঙ্গলমহল ‘শান্ত’। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী চিদম্বরমও জঙ্গলমহলের বর্তমান পরিস্থিতিকে দেশের মধ্যে ‘মডেল’ বলে উল্লেখ করেছেন। রাজ্যের উন্নয়নের পথে এগুলি
সবই ইতিবাচক।
বাধা যা আছে, সেগুলি পেরনোর মন্ত্রটাও মমতারই করায়ত্ত। কারণ ‘সাফল্য’ অর্জনের জন্য মমতার দু’টি বিশেষ সুবিধা আছে। প্রথমত, সিপিএমে মুখ্যমন্ত্রী যা-ই চান না কেন, আলিমুদ্দিন এবং পলিটব্যুরোর মতাদর্শ ও কৌশলগত নানা পিছুটান থাকে। কিন্তু তৃণমূলে মমতাই পলিটব্যুরো, মমতাই কেন্দ্রীয় কমিটি। তাই মমতা যদি রাজ্যের মানুষের কথা ভেবে পথ বদলাতে চান, তবে সেটি করতে তাঁর কোনও বাধা নেই।
দ্বিতীয়ত, বিরোধী দল হিসেবে সিপিএম চাইলেও তারা আবার ৬০-৭০ দশকের বাস-ট্রাম পোড়ানোর মতো জঙ্গি আন্দোলনে ফিরে যেতে পারবে না। সময় বদলেছে। সংস্কারমুখী সিপিএম বিরোধী শিবিরে এসে আবার উল্টো পথে হাঁটতে চাইলেও সময়ের দাবি তা হতে দেবে না। এই পরিস্থিতির সুবর্ণ সুযোগ নিতে পারেন মমতা-ই। |
|
|
 |
|
|