‘আইপিএল-কলঙ্কে’ রাজনৈতিক ব্যক্তিরা জড়িয়ে পড়ায় হতাশ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। বিষয়টি নিয়ে বেশ কিছু সতীর্থের কাছে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অজয় মাকেনের সঙ্গেও গত কাল বিশদে আলোচনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাঁর নির্দেশ, আইপিএল-এর ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে সরকারের কর্তাব্যক্তিদের জড়ানো যাবে না। তার সঙ্গে ক্রীড়া সংগঠনগুলিতে স্বচ্ছতা আনার লক্ষ্যে প্রস্তাবিত জাতীয় ক্রীড়া বিলটিকে দ্রুত পাশ করানোর কথাও বলেছেন মনমোহন সিংহ। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হওয়ার পর ক্রীড়ামন্ত্রী আজ কিছুটা সতর্কীকরণের ঢংয়েই জানিয়েছেন, “সব রাজনীতিকরা আইপিএল থেকে দূরে থাকুন।”
কিছু দিন আগেই কমনওয়েলথ কেলেঙ্কারিতে প্রবল ভাবে হাত পুড়েছিল মনমোহন সরকারের। সে ক্ষেত্রে কমনওয়েলথ গেমসের সাংগঠনিক এবং প্রশাসনিক বিষয়ে সরকারের প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তা থেকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী, সকলেই সক্রিয় ভাবে ছিলেন কমনওয়েলথ আয়োজক সংস্থায়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রের বক্তব্য, আইপিএল আয়োজনের সঙ্গে কিন্তু সরকারের সুদূরতম সম্পর্কটুকুও নেই। তাও প্রবল রাজনৈতিক সক্রিয়তা দেখা যাচ্ছে। নেতাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা থাকছে আইপিএল-এর ঘটনাক্রমে। বিষয়টি একেবারেই অনভিপ্রেত। ইউপিএ তথা কংগ্রেসের ভাবমূর্তির পক্ষেও তা ক্ষতিকর।
অজয় মাকেন আজ অবশ্য কোনও রাজনৈতিক নেতার নাম করেননি। কিন্তু সংসদীয় প্রতিমন্ত্রী তথা আইপিএল-এর চেয়ারম্যান রাজীব শুক্ল অথবা এমসিএ-র চেয়ারম্যান তথা কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী বিলাসরাও দেশমুখের মতো নেতাদের দিকেই যে তাঁর তর্জনী নির্দেশ, তা স্পষ্ট। রাজীব শুক্ল গত কাল গোটা দিন দফায় দফায় সাংবাদিকদের কাছে এই সব কেলেঙ্কারি থেকে নিজেকে এবং আইপিএল পরিচালন কমিটিকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করে গিয়েছেন। তবে শুধু শুক্লই নন, সরকারের অন্যতম শরিক দল এনসিপি নেতা শরদ পওয়ার বা অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের (যেমন অরুণ জেটলি) প্রতিও একই ভাবে বার্তা দিতে চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
আসলে ক্রীড়া তথা আইপিএল-এর মতো ক্রীড়া-বিনোদনের সঙ্গে রাজনীতিকে মিশিয়ে ফেলার এই রেওয়াজকে কী ভাবে বন্ধ করা যায়, তা নিয়ে গত এক বছর ধরেই চেষ্টা করছে মনমোহন সরকার। কিন্তু এখনও তাতে সাফল্য মেলেনি। প্রধানমন্ত্রীর দফতর সূত্রের বক্তব্য, চলতি আইপিএল-কেলেঙ্কারির ফলে জাতীয় ক্রীড়া বিলটিকে আইনে পরিণত করার বিষয়টিও আবার সামনে চলে এল। শরদ পওয়ার, বিলাসরাও দেশমুখ, সি পি জোশী, ফারুখ আবদুল্লা, রাজীব শুক্লর মতো নেতাদের ঘোর বিরোধিতায় গত ছ’মাস ধরে বিলটি লোকসভায় পড়ে রয়েছে। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এঁরা সকলেই বিভিন্ন স্তরের ক্রিকেট সংস্থার সঙ্গে মাথায় রয়েছেন। তাঁদের আপত্তির অন্যতম কারণ এই বিলের প্রস্তাব অনুযায়ী, বিসিসিআইকে তথ্যের অধিকার আইনের (আরটিআই) আওতায় রাখা হবে। শুক্লর যুক্তি, বিসিসিআই অর্থের জন্য সরকারের উপর নির্ভরশীল নয়, তাই সরকারের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে তার আসার কোনও প্রশ্নই ওঠে না।
সরকারের অবশ্য যুক্তি, ক্রীড়া বিলটি পাশ হলে বিসিসিআই-এর মতো স্বয়ংশাসিত সংস্থাগুলির ক্ষমতা কোথাও খর্ব হবে না। কিন্তু স্বচ্ছতার প্রশ্নে সরকারের কাছে সংস্থাগুলির দায়বদ্ধতা থাকবে। খোদ ক্রীড়ামন্ত্রী অজয় মাকেন এই আইনের পক্ষে। এক ধাপ এগিয়ে তিনি এই প্রস্তাবও দিয়েছেন, ক্রীড়া সংস্থাগুলির প্রেসিডেন্ট এবং চেয়ারম্যান পদে রাজনীতিবিদদের বদলে প্রাক্তন বা বর্তমান ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের রাখা হোক। সরকারের শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছেন, আইপিএল কেলেঙ্কারির প্রেক্ষাপটে এই সমস্ত প্রস্তাবগুলি গুরুত্ব দিয়ে দেখার সময় এসেছে। |