রাজ্য সরকার যখন ‘পরিবর্তনে’র বর্ষপূর্তির উৎসব পালন করছে, সেই সময়ে কলকাতার উপকণ্ঠে প্রধান বিরোধী দলের ছ’টি কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হল। বেলঘরিয়ার দেশপ্রিয় নগরে সিপিএমের ছ’টি কার্যালয়ে তাণ্ডব চালিয়েছে এক দল দুষ্কৃতী। ওই এলাকাতেই আজ, রবিবার পলিটব্যুরো সদস্য সীতারাম ইয়েচুরির সভা করার কথা। সেই সভা বানচাল করার উদ্দেশ্যেই তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকেরা এই কাজ করেছে বলে সিপিএমের তরফে অভিযোগ তোলা হয়েছে। যদিও থানায় অভিযোগ করার সময়ে তৃণমূলের নাম উল্লেখ না-করে এক দল ‘দুষ্কৃতী’-র কথা বলা হয়েছে। তবে সিপিএমের অভিযোগ, সভামঞ্চ তৈরির কাজে নিযুক্ত ডেকরেটর ও আলোর দায়িত্বে-থাকা ব্যক্তিদেরও তৃণমূলের তরফে তিন দিন ধরে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
পশ্চিমবঙ্গ থেকেই রাজ্যসভার সাংসদ এবং সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য ইয়েচুরি কলকাতায় এসেছেন উত্তর ২৪ পরগনায় দু’টি জনসভার কর্মসূচি নিয়ে। নৈহাটির গৌরীপুরে শনিবার তাঁর প্রথম জনসভা ছিল। বেলঘরিয়ায় যাওয়ার কথা আজ। সেই সভার আগেই দলীয় কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনায় ইয়েচুরির প্রতিক্রিয়া, “এটাই ‘পরিবর্তনে’র সত্যিকারের চেহারা! শুধু বিরোধীদের কার্যালয়ই নয়, শহিদ বেদিও ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। রাজ্য জুড়ে গণতান্ত্রিক অধিকারের উপরেই যে আক্রমণ চলছে, এটাও তারই অঙ্গ।” |
বেলঘরিয়ার ওই এলাকা বিধানসভা কেন্দ্র হিসেবে কামারহাটির মধ্যে পড়ে। কামারহাটির তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “আমরা মূর্খ নাকি! সারা বছর অপেক্ষা করে বর্ষপূর্তির দিন কেন হামলা করতে যাব? উল্টে ওরা স্থানীয় বইমেলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বড় ছবি ছিঁড়ে দিয়েছে। আমরাই আগে পুলিশের কাছে সে অভিযোগ দায়ের করেছি।” মন্ত্রীর অভিযোগ, সভা আয়োজন করেও লোক জোগাড় করতে ‘ব্যর্থ’ সিপিএম এখন ‘এ সব বলে’ সস্তা প্রচারের রাস্তা নিচ্ছে!
দেশপ্রিয় নগরে গিয়ে এ দিন দেখা গিয়েছে, সিপিএমের ছ’টি কার্যালয়ের সামনে থেকেই শহিদ বেদি উপড়ে ফেলা হয়েছে। ভাঙা হয়েছে জানালার কাচ, আলো। এর মধ্যে দলের লোকাল কমিটির অফিসও রয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ৬ নম্বর শাখা কার্যালয়টি। তার সামনের শহিদ বেদি উপড়ে ফেলার পরে দরজা ভেঙে দুষ্কৃতীরা ভিতরে ঢুকে আলমারিও ভেঙে ফেলে। অভিযোগ, সেখান থেকে দলের পতাকা, ফেস্টুন, পোস্টার নিয়ে ছিঁড়ে ফেলা হয়। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, প্রয়াত জ্যোতি বসুর একটি ছবিও নিয়ে চলে যায় দুষ্কৃতীরা। অভিযোগ, ওই আলমারি থেকে খোওয়া গিয়েছে বেশ কিছু টাকাও। পরে বেলঘরিয়া থানা চত্বরে দলের কিছু পোস্টার, ফেস্টুন পড়ে থাকতে দেখে পুলিশের কাছে সেই বিষয়ে জানতে চান সিপিএম নেতারা। পুলিশ জানায়, এ দিন সকালে ভাঙচুরের খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে সেগুলি উদ্ধার করে থানায় এনে রাখা হয়েছে।
ইয়েচুরির সভা বানচালের জন্যই এই হামলা বলে কামারহাটির প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক মানস মুখোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেন, “পলিটব্যুরো সদস্য হওয়ার পরে এই প্রথম ইয়েচুরি এখানে সভা করছেন। এই অঞ্চলে বামপন্থী মানুষের বাস। তৃণমূল এখানে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে সেই সভা বানচালের চেষ্টা করছে।” সিপিএমের অভিযোগ, শুক্রবারেই বিশ্বনাথ দাস নামে এক সিটু-সমর্থিত অটোচালককে মারধর করা হয়েছে এবং হুমকি দেওয়া হয়েছে সত্যজিৎ চন্দ্র নামে দলের এক কর্মীকে। রাতের দিকে সভামঞ্চেও ভাঙচুর হতে পারে বলে আগাম আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে সিপিএমের তরফে। |