তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠীর বিবাদের জেরে বোমা-গুলিতে উত্তপ্ত হল মঙ্গলকোটের ধারসোনা গ্রাম। পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেয়। ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
শনিবার দুপুর সাড়ে ১১টা নাগাদ সংঘর্ষ বাধে। পুলিশের হিসেবে, ১৭ রাউন্ড গুলি চলেছে। বোমা পড়েছে খান দশেক। ঘটনাস্থল থেকে ৪টি ফাঁকা কার্তুজ ও ৫টা বোমা পাওয়া গিয়েছে। বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ মহম্মদ হোসেন মির্জা বলেন, “ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু বোমা ও গুলি উদ্ধার হয়েছে। ইরফান শেখ, ইসমাইল শেখ, কিসমত শেখ, মেহবুব চৌধুরী, কালাম চৌধুরী ও নুর মহম্মদ নামে ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” এর মধ্যে মেহবুব চৌধুরী তৃণমূলের স্থানীয় ক্ষীরগ্রাম অঞ্চল সভাপতি। কালাম ও নুর তাঁর অনুগামী বলে পরিচিত। বাকি তিন জন অন্য গোষ্ঠীর লোক বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। এক মহিলা-সহ দুই আহতকে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, এ দিন এলাকার একটি পুকুরে কাজ চলার সময়ে গণ্ডগোল বাধে। যদিও স্থানীয় সূত্রের খবর, পুরনো ঘটনার জেরেই এই সংঘর্ষ বাধে। বেশ কিছু দিন ধরেই ওই এলাকায় ১০০ দিনের কাজ নিয়ে দু’টি গোষ্ঠীর বিবাদ চলছিল। মাসখানেক আগে ধারসোনার পশ্চিমপাড়ায় বোমা বিস্ফোরণে তিন জনের মৃত্যু হয়। মেহবুব চৌধুরী মঙ্গলকোট থানায় ১০ জনের নামে হামলার অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। তার মধ্যে স্থানীয় সিপিএম বিধায়ক শাহজাহান চৌধুরীর নাম থাকলেও বাকিরা তৃণমূলেরই ইরফান শেখের গোষ্ঠীর লোক বলে পরিচিত।
সেই সময়েই ইরফান দাবি করেছিলেন, তাঁরা পুরনো তৃণমূল কর্মী। কিন্তু তাঁদের ‘সিপিএমের লোক’ বলে প্রচার করা হচ্ছিল। তাঁদের মারতেই বোমা বাঁধা হচ্ছিল। তা ফেটেই তিন জনের মৃত্যু হয়। শুক্রবার অভিযুক্তেরা হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন পান। এর পরে ওই দিনই গ্রামে ১০০ দিনের কাজ নিয়ে ইরফান ও মেহবুব অনুগামীদের মধ্যে বচসা হয়। এ দিন সকালে গ্রামের চৌধুরীপাড়ায় ফজলুর পুকুরে কাজ চলছিল। ইরফান শেখের লোকজন গিয়ে শ্রমিকদের তুলে দেয়। তাঁরা মেহবুব চৌধুরীর কাছে গেলে অন্য গোষ্ঠীর লোকেরা চলে আসে। এর পরেই দু’দিক থেকে বোমা-গুলি ছোড়া শুরু হয়।
মঙ্গলকোটের বিডিও প্রদীপ মজুমদার জানান, ধারসোনা গ্রামের যে পুকুর সংস্কার ঘিরে গণ্ডগোল সেখানে ১০০ দিনের প্রকল্পে কাজ হওয়ার অনুমতিই নেই। যদিও বিধায়ক শাহজাহান চৌধুরীর দাবি, “১০০ দিনের কাজ নিয়েই তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষ হয়েছে। এই ঘটনায় প্রমাণ হয়ে গেল, আগের বার আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছিল।” তৃণমূলের মঙ্গলকোট ব্লক সভাপতি অপূর্ব চৌধুরীও দাবি করেন, “১০০ দিনের কাজ নিয়ে বিবাদ।” গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রসঙ্গে তাঁর মন্তব্য, “মেহবুব চৌধুরী আমাদের দলের নেতা। কিন্তু পরিবর্তনের পরে এখন সবাই তো নিজেদের তৃণমূল বলে দাবি করছে!” |