|
|
|
|
অভিযুক্ত জানগুরু |
কুসংস্কার দূর করতে গিয়ে নিহত ২ ভাই |
পীযূষ সাহা • মালদহ |
গ্রামের কারও অসুখ হলে তিনি হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিতেন। কখনও নিজেই এনে দিতেন ওষুধ। তাঁর ইচ্ছে ছিল, জানগুরুর হাত থেকে গ্রামকে মুক্ত করা। কিন্তু সেটাই কাল হয়ে দাঁড়াল আদিবাসী যুবক সনুয়া পাহাড়ি ও তাঁর পরিবারারের। জানগুরুর নির্দেশে গ্রামবাসীরা সনুয়া (৪০) ও তাঁর ভাই বৈশাখুকে (৩০) ডাইন অপবাদ দিয়ে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে খুন করেছে বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার রাতে ইংরেজবাজার থানার কাজিগ্রাম পঞ্চায়েতের পলাশবাড়ি গ্রামের পাহাড়িপাড়ায় ঘটনাটি ঘটেছে।
স্বামীকে বাঁচাতে গিয়ে নিহত বৈশাখু পাহাড়ির স্ত্রী লক্ষী পাহাড়ি ও মেয়ে পূজা পাহাড়ি জখম হয়েছেন। তাঁদের মালদহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করানো হয়েছে। নিহত সনুয়া অষ্টম শ্রেণি অবধি পড়শুনো করেছেন। তিনি গাজলের একটি গির্জায় কাজ করতেন। বৈশাখু ইটভাটায় কাজ করতেন। নিহত সনুয়ার স্ত্রী ও মেয়ে-সহ পরিবারের অন্যেরা ইংরেজবাজার থানায় আশ্রয় নিয়েছেন। পুলিশ খুনের ঘটনায় তিন জনকে গ্রেফতার করেছে। দেহ দু’টি আটকে রাখা হয় বলে অভিযোগ। পরে পুলিশ দেহ দু’টি উদ্ধার করে। জেলা পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেন, “জানগুরুর বিধান মেনে ডাইন অপবাদ দিয়ে দুই ভাইকে মাথা থেঁতলে খুন করা হয়েছে।” এলাকাটি থেকে ইংরেজবাজার থানার দূরত্ব মেরেকেটে সাড়ে ৪ কিলোমিটার। |
|
ঘটনার বিবরণ দিচ্ছেন নিহতদের দিদি পাতানি পাহাড়ি। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায় |
ইংরেজবাজার ব্লকের বিডিও গোপালচন্দ্র সরকার নিহতদের পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। বিডিও বলেন, “এলাকার অসুস্থ বাসিন্দাদের সনুয়া হাসপাতালে যাওয়ার, ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ দিতেন। এতেই তিনি এক জানগুরুর বিষনজরে পড়েন। ওই জানগুরু গ্রামবাসীদের পুরাতন মালদহের এক জানগুরুর কাছে নিয়ে যায়। তার পরেই ওঁদের ডাইন ঘোষণা করে খুন করা হয়েছে।” নিহত সনুয়ার স্ত্রী সমি বলেন, “রাতে গ্রামের ১৫-২০ জন এসে আমার স্বামীকে ডাকতে থাকে। তিনি বেরিয়ে এলে ওরা ওকে ডাইন বলে। তার পরে ওকে তুলে নিয়ে যেতে থাকে। দেওর বৈশাখু এগিয়ে গেলে ওকেও ডাইন অপবাদ দিয়ে তুলে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরে ওরা ফিরে যাওয়ার সময় বলতে থাকে, ‘দুই ডাইন খতম। গ্রামে আর কারও অসুখ হবে না।’ ভয়ে পরিবারের সবাই পালাই। বাড়িতে থাকলে আমাদেরও খুন করত।” শুক্রবার সকালে এলাকায় কোনও পুরুষের দেখা মেলেনি। বহু বাড়ি তালাবন্ধ। সনুয়ার বাড়ির উঠোনে রক্তের দাগ। বারান্দায় মশারি, চপ্পল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান অশোক রায় বলেন, “গ্রামের পাশেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র। পাঁচ কিলোমিটার দূরে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ। তাও পাহাড়ি পাড়ার অধিকাংশ বাসিন্দা চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে চান না। এতে রোগ বাড়ছে। বাড়ছে কুসংস্কার। এর জন্যই দুই ভাইকে প্রাণ দিতে হল।” |
|
|
|
|
|