কুকিং গ্রেট-এ গ্রিল করা হচ্ছে
যে খাবার ভাজা যায় না, যাকে সতে করা যায় না, রোস্ট হয় না, আবার বেকও করা যায় না, তাকে রাঁধার সেরা উপায় গ্রিল করা। গ্রিল করলে খাবারের স্বাদ বাড়ে। তাড়াতাড়ি রান্নাও হয়। ঘরের বাইরে রান্না করার মজাই তো আলাদা।

গ্রিল কী ভাবে করা যায়

ভাল গ্রিল করার প্রথম শর্ত হল, আগুনটা ঠিকঠাক ধরাতে হবে। সরাসরি গ্রিল কী ভাবে করে, কী ভাবে পরোক্ষ ভাবে আগুনে গ্রিল করা হয়, কোনখানে ঢাকনা চাপা দিলে স্বাদের কী তারতম্য হয় জানা দরকার। এ সব আবার অনেকটাই নির্ভর করবে কী ধরনের শিক আপনি ব্যবহার করছেন, কোন খাবার গ্রিল করছেন তার ওপর। এ সব কায়দা জানলেই গ্রিল, রোতিসারি, ল্যাম্ব চপ রোস্ট, সবই আপনার আয়ত্তে চলে আসবে। নিয়মগুলো শিখে নিলেই গ্রিল করা ভীষণ সহজ লাগবে।

আটটি বিষয় জরুরি

গ্রিল করার মূল কেরামতি আগুনের ব্যবহারে। আগুন খাবারের স্বাদে কেমন করে প্রভাব ফেলে, সেটা জানলেই কেল্লা ফতে। তখন আপনি মোটেও আর সাধারণ রাঁধুনি নন। একেবারে সেলেব্রিটি শেফ বনে গেছেন। দক্ষ রাঁধুনি মাত্রই জানেন মাছ, সব্জি ও মাংস কোন খাবারের জন্য কতটা তাপমাত্রা যথাযথ। জানেন এই আঁচ কী ভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়, কী ভাবে স্বাদে গন্ধে খাবারটাকে সেরা করে তুলতে হয়। খাবারের চর্বি আর রস যখন শিকের ওপর আগুনের সংস্পর্শে আসবে, তখনই ধোঁয়ায় সেই লোভ লোভ গন্ধটা ভাসবে। একদম সঙ্গে সঙ্গে সেটাকে খাবারের মধ্যে পুরে ফেলতে জানতে হয়।
রেসিপি গুরুত্বপূর্ণ মানছি, কিন্তু সব থেকে কাজে দেবে এই টেকনিকগুলোই। এখানে আমি আমার পছন্দের সেরা আট তুরুপের তাস সাজিয়ে দিলাম।

১) শিকটা আগে তাতিয়ে নিন
আগে থেকে, ঢাকনিটা চাপা দিয়ে শিকটা ১০-১৫ মিনিট ধরে তাতিয়ে নিন। এতে শিকগুলো রান্নার জন্য তৈরি হয়ে যাবে। কয়লা গনগনে লাল হয়ে গেলে বা গ্যাস বার্নারগুলো খুব গরম হলে, ওই ঢাকনার নীচের তাপমাত্রা হবে প্রায় ৫০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। শিকে খাবার লেগে থাকলে ওই আগুনের তাপেই ঝরে পড়ে যাবে। শিকটা গরম থাকলে মাংসগুলো গাঁথতেও সুবিধা হবে।
২) পরিষ্কার রাখুন
স্টেনলেস স্টিল বা পোর্সেলিনের এনামেল করা কুকিং গ্রেটটায় খাবারের টুকরো লেগে আছে? গ্রেটটা গরম থাকতে থাকতে পেতলের ঝাড়নওয়ালা ব্রাশ দিয়ে ওগুলো ঝেড়ে নিন। এতে পাত্রটা পরিষ্কার থাকবে, খাবার আটকে যাবে না। ছাঁচে তৈরি লোহার পাত্রের ক্ষেত্রে স্টিল ব্রাশ ব্যবহার করুন।
৩) গ্রেট-এ নয়, খাবারে তেল ঢালুন
তেল খাবারকে পাত্রে আটকে থাকতে দেয় না। এতে স্বাদ বাড়ে, একটা আর্দ্র ভাবও আসে। গ্রেটের বদলে সরাসরি খাবারে তেল স্প্রে করুন বা ব্রাশের সাহায্যে আলতো করে বুলিয়ে দিন। এতে তেল নষ্ট হবে না। ফলে আগুনজনিত বিপদের সম্ভাবনাও অনেক কমবে।
৪) কখন সরাসরি তাপ দেবেন
ছোট আকারের, নরম খাবার, যেটা কুড়ি মিনিটের মধ্যেই রাঁধা যায়, সরাসরি আগুনে দিন। শক্ত আর বড় আকারের খাবার, যেগুলো রাঁধতে কুড়ি মিনিটের বেশি লেগে যায়, তার জন্য পরোক্ষ ভাবে তাপ দিন।
৫) হাওয়া বাতাস কেমন থাকবে?
কয়লার আগুনে হাওয়া তো লাগেই। ঢাকনাটা যথাসম্ভব চাপা দিয়ে রাখুন। তবে একটু ফাঁক থাকা দরকার। মাঝেমধ্যেই শিকের নীচ থেকে ছাইগুলো পরিষ্কার করুন। এতে হাওয়া চলাচলে অসুবিধা হবে না। গ্যাসের আগুনেও বাতাস প্রয়োজন। গ্রিলের নীচের ফাঁক থেকেই সেই ব্যবস্থা হয়ে যাবে।
৬) ঢাকনা দিয়ে রাখুন
ঢাকনা দেওয়ার চারটে কারণ আছে
• এতে শিক গরম থাকবে, মাংস সহজে গাঁথা যাবে।
• রান্না তাড়াতাড়ি হবে। খাবার শুকিয়ে যাবে না।
• চর্বি আর রস থেকে শিকে বাষ্প জমে। সেটা উড়ে যাবে না।
• অক্সিজেন কম থাকবে, তাই খাবার জ্বলে যাবে না।
৭) বাদামি রং ধরা জরুরি
গ্রিল করা খাবারের জনপ্রিয়তার কারণ এর গরম গরম স্বাদ। এই স্বাদ আনতে আগুনটা ঠিক করে প্রয়োগ করতে হয়। ধৈর্য ধরে থাকলেই খাবারেও বাদামি রং ধরবে। এই রং ধরার মানে স্বাদ গন্ধেও খাবারটা দারুণ হয়েছে। তবে সাধারণ নিয়ম বলে, খাবারটা এক বার উলটে দিলেই হয় ।
৮) আগুন নিয়ন্ত্রণে রাখুন
খাবারে আগুন ধরে গেলে ক্ষতি নেই, বরং তাতে যে গ্রিলের পাত্রটা আরও বেশি উত্তপ্ত হয়ে উঠবে। তবে খাবারে বেশি ক্ষণ আগুনের ফুলকি থাকলে, খাবারটা জ্বলেও যেতে পারে। শিখা খুব বাড়তে থাকলে, খাবারটা কিছু ক্ষণ পরোক্ষ তাপে রাখুন। আগুনটা মরে এলে খাবারটা তাপের ওপর ধরবেন। সব সময়, ওপরের ঢাকনাটা যতটা সম্ভব বন্ধ করে রাখুন।
গ্রিল বিজ্ঞান আর শিল্প দুইই। তাই দু’টো বিষয়েই সমান নজর দিতে হবে।

গ্রিলড ক্র্যাব কেকস উইথ পাইনঅ্যাপল সালসা

প্রস্তুতির সময়: ২০ মিনিট
ম্যারিনেশনের সময়: আধ ঘণ্টা থেকে দুই ঘণ্টা
গ্রিলিঙের সময়: ৬ থেকে ৮ মিনিট
উপকরণ পরিমাণ
খোসা ও দানা ছাড়ানো আধ ইঞ্চি করে কাটা পাকা আনারস ৫০০ গ্রাম
মাঝারি আকৃতির লাল পেঁয়াজ (মিহি করে কুচানো) ১টি
তাজা তুলসী পাতার কুচি ৩ বড় চামচ
ফ্রেশ লাইম জুস ১ বড় চামচ
সবুজ লঙ্কা কুচি ১ বড় চামচ
নুন ১/২ চা চামচ
উপকরণ পরিমাণ
তাজা, বরফঠান্ডা, ক্যানড কাঁকড়ার মাংসপিণ্ড ৪০০ গ্রাম
সাধারণ পাঁউরুটির গুঁড়ো ১ কাপ
মেয়োনিজ ৩/৪ কাপ ফেটানো ডিম ১টা
সবুজ পেঁয়াজের সাদা ও সবুজ অংশ কুচানো ২টো
সোয়া সস ১/২ চা চামচ
টাব্যাস্কো সস ১/৪ চা চামচ
নুন ১/৪ চা চামচ
তাজা কালো মরিচ গুঁড়া ১/৮ চা চামচ

প্রণালী

১) সালসা তৈরির জন্য: একটা মাঝারি আকৃতির পাত্র নিয়ে সালসার উপাদানগুলো ভাল করে মেশান। ঘরের তাপমাত্রায় ৩০ মিনিট থেকে ২ ঘণ্টা পর্যন্ত রেখে দিন। এতে ফ্লেভারগুলো ভাল মিশ খাবে।
২) কাঁকড়ার মাংসটা ঝাঁঝরিতে ছেঁকে জল ঝরিয়ে নিন। একটা মাঝারি আকৃতির বোলে একটা কাঁটা দিয়ে মাংসটা ছোট ছোট টুকরোয় ভাগ করুন। খোসা, হাড় বাদ দিয়ে দিন। বাকি উপাদানগুলো আলতো করে ভাল ভাবে মেশান। ওগুলো থেকে ২ ইঞ্চি ব্যাস ও ১/২ ইঞ্চি পুরু করে ১৬ টা কেক কেটে নিন। কেকগুলি একটা প্লেটের ওপর রেখে প্লাস্টিকের মোড়কে ঢেকে ৩০ মিনিট থেকে ২ ঘণ্টা পর্যন্ত ফ্রিজে রেখে দিন। এতে গ্রিল করার সময় ওগুলো এক সঙ্গে থাকবে।
৩) সরাসরি আগুনে বা নন স্টিক প্যানে পাঁউরুটির গুঁড়োগুলো টোস্ট হওয়া পর্যন্ত গ্রিল করুন। একটা স্প্যাচুলা দিয়ে ৬-৮ মিনিট ধরে সাবধানে কেকগুলো উল্টে পাল্টে নিন। ওপরে চামচে করে সালসা ছড়িয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন। ১৬টা ক্র্যাব কেক হবে।

পাইন্যাপল সালসার ছবি: শুভেন্দু চাকী



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.