প্রকাশ্যে মোটরবাইকে চড়ে এসে উত্তর ২৪ পরগনার পেট্রাপোল বন্দরের ট্রাক টার্মিনাসের সামনে যশোহর রোডে এক ব্যক্তিকে গুলি করে খুন করে পালাল তিন দুষ্কৃতী। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ ওই ঘটনায় নিহতের নাম রশিদ মণ্ডল (৪৫)। বাড়ি স্থানীয় নরহরিপুর এলাকায়। তাঁর বিরুদ্ধে তিনটি খুনের অভিযোগ ছিল এবং তিনি এত দিন পলাতক ছিলেন বলে পুলিশ জানিয়েছে।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, সীমান্তে বেআইনি কোনও কাজের যুক্ত ছিলেন রশিদ। তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর লোকজন এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত। ঘটনার ঘণ্টা খানেক পরে কয়েক জন দুষ্কৃতীকে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে বন্দর এলাকায় দাপিয়ে বেড়াতে দেখা যায়। কয়েকটি মুদ্রা বিনিময় কেন্দ্রে তারা ভাঙচুর চালায়। একটি কেন্দ্রের এক কর্মীকে মারধর করে লক্ষাধিক টাকা লুঠ করা হয় বলে অভিযোগ। এক কর্মীর হাতে ধারাল অস্ত্রের কোপ মারা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, দু’টি ঘটনার মধ্যে কোনও যোগ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, “খুনের কারণ পরিষ্কার নয়। নিহতের বিরুদ্ধে তিনটি খুনের অভিযোগ ছিল। আততায়ীদের খোঁজে তল্লাশি শুরু হয়েছে।” |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রশিদ ট্রাক টার্মিনাসের ১ নম্বর গেটের সামনে নিজের মোটরবাইকের উপরে বসে ছিলেন। দুষ্কৃতীরা এসে তাঁর সঙ্গে কিছু ক্ষণ কথা বলার পরেই তাঁর মাথা লক্ষ করে গুলি চালায়। পড়ে গেলে রশিদের মাথা ও কপালে ফের গুলি করা হয়। পালানোর আগে দুষ্কৃতীরা ফের তাঁকে গুলি করে। ঘটনাস্থল থেকে তিনটি গুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ। ময়না-তদন্তের জন্য দেহটি বনগাঁ হাসপাতালে পাঠানো হয়। রশিদের ছেলে আল মামুন মণ্ডল বনগাঁ থানায় স্থানীয় তিন দুষ্কৃতীর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। তবে, এ নিয়ে আল মামুন বা তাঁর বাড়ির লোকজন কোনও কথা বলতে রাজি হননি।
ঘটনার পরেই বন্দর এলাকায় আতঙ্ক ছড়ায়। দোকানপাট এবং যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বন্দর এলাকা দৃশ্যত বন্ধের চেহারা নেয়। বাংলাদেশ থেকে আসা যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন। তবে, শুক্রবার সীমান্ত-বাণিজ্য বন্ধ থাকায় বন্দরে লোকজন তুলনামূলক ভাবে কম ছিলেন। সীমান্ত-বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা নিরাপত্তার অভাবে ভুগছেন। তাঁরা স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসানোর দাবি তুলেছেন। তাঁদের অভিযোগ, ওই এলাকায় অপরাধমূলক কাজকর্ম বেড়েই চলেছে। অথচ, পুলিশ নিষ্ক্রিয়।
সীমান্ত-বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ‘পেট্রাপোল ক্লিয়ারিং এজেন্ট স্টাফ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, “আমরা যথেষ্ট নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি। শনিবার বাণিজ্যের কাজ শুরু করা নিয়েও সংশয়ে রয়েছি। বন্দর এলাকায় আলাদা একটি থানার দাবি আমাদের দীর্ঘদিনের। সুসংহত চেকপোস্ট তৈরির কাজ যত দিন না শেষ হচ্ছে, তত দিন স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প করা হোক।” স্থানীয় বাসিন্দা তথা বনগাঁ পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী দলনেতা সিপিএমের গোবিন্দ মণ্ডল মনে করেন, “বিএসএফের আরও সক্রিয় হওয়া প্রয়োজন।” বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “পুলিশকে দ্রুত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। জওয়ানদের টহল বাড়ানোর জন্য বিএসএফকে অনুরোধ করা হয়েছে।”
পেট্রাপোল বন্দর বনগাঁ থানা এলাকায় পড়ে। বন্দর থেকে থানা সাড়ে ৫ কিলোমিটার। বন্দর এলাকায় কোনও পুলিশ থাকে না। আইনশৃঙ্খলাজনিত সমস্যা হলে থানা থেকেই পুলিশ যায়। পেট্রাপোল বন্দর এবং সংলগ্ন এলাকায় দু’টি বিএসএফ ক্যাম্প রয়েছে। প্রতিদিন সীমান্ত দিয়ে হাজার হাজার মানুষ পারাপার করলেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা কিছুই নেই বলে অভিযোগ। বিএসএফের ৩৬ নম্বর ব্যাটালিয়ন সূত্রে জানা গিয়েছে, জওয়ানরা শুধু সীমান্তেই টহল দেন। ইদানীং টহলদারি বাড়ানো হয়েছে। ২০০৬ সালে বন্দর এবং চেকপোস্টের দায়িত্ব অভিবাসন দফতরের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, ওই এলাকায় পুলিশ ক্যাম্প না থাকলেও নিয়মিত টহলদারি চালানো হয়। |