টিচার ইন চার্জের ‘ঝক্কি’
দায় এড়ানোর ‘লড়াই’ হেরে সহকর্মীকে হেনস্থার অভিযোগ
রিকাঠামোগত সমস্যা, কিংবা প্রশাসনিক হাজারো হ্যাপার পাশাপাশি স্কুলের ছাত্রছাত্রী থেকে অভিভাবকদের নিরন্তর অভিযোগ-অনুযোগের ঝড়ঝাপ্টা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নিয়ে এমনই ‘উটকো’ সমস্যায় জড়াতে অপারগ অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকা। নদিয়ার চাকদহের কাঁঠালপুলি আদর্শ বিদ্যপীঠের দুই শিক্ষিকাও তার ব্যাতিক্রম নন।
জনা চল্লিশ ছাত্রছাত্রী সামলে স্কুলের হাজারো ‘ঝামেলা’ কাঁধে নিতে অরাজি দুই শিক্ষিকার কে নেবেন টিচার ইন চার্জের দায়িত্ব? তা নিয়ে পরস্পরকে ঠেলতে ঠেলতে তাঁদের পারস্পারিক সম্পর্ক তাই গত দু-বছরে তলানিতে এসে ঠেকেছিল। তার সূত্র ধরেই স্কুলে লেগেছিল রাজনীতির রং। এবং পরিণতিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাজনীতির চোখ রাঙানিতে ফের অভিযুক্ত হল তৃণমূল।
চাকদহের ওই স্কুলে গত বছর পূর্ণ সময়ের প্রধানশিক্ষিকার অবসরের পরে ওই দায়িত্ব কে নেবেন তা নিয়ে মনোমালিন্য শুরু হয়েছিল অর্পিতা চক্রবর্তী ও মায়া কুণ্ডুর মধ্যে। দু-জনেরই যুক্তি ছিল, ওই ‘দায়’ নেওয়ার জন্য তৈরি নন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত ‘সিনিয়র’ হওয়ায় ‘অপরাধে’ দায়টা বর্তায় মায়াদেবীর উপরেই। আর দায়িত্ব পেয়ে খুশি হওয়ার বদলে চটে গিয়ে তিনি রাজনীতির ‘দাদাদের আশ্রয়’ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন ওই শিক্ষিকা।
অর্পিতাদেবী বলেন, “সোমবার দুপুরে ক্লাস নিচ্ছিলাম। হঠাৎ স্থানীয় এক মহিলা ক্লাসের ভেতরে ঢুকে আমাকে বাইরে আসতে বলেন। বাইরে গিয়ে দেখি স্কুল চত্বর জুড়ে প্রচুর তৃণমূলকর্মী। কোনও কিছু বোঝার আগেই তাঁরা আমার উপরে চড়াও হন। অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। ওঁরা আমাকে সে দিন শুধু মারতেই বাকি রেখেছিলেন।” পরের দিনই চাকদহ থানায় গিয়ে অভিযোগ দায়ের করে ওই শিক্ষিকা জানান, মায়াদেবীর মদতেই ওই তৃণমূল নেতারা তাঁকে হেনস্তা করেছেন। অভিযুক্তদের মধ্যে অলোকবাবু যে তাঁর সহকমীর আত্মীয় সে কথাও উল্লেখ করেছিলেন অর্পিতাদেবী। খবর পেয়ে অবশ্য থানায় গিয়ে অর্পিতাদেবীর বিরুদ্ধেও ‘স্কুলে অনিয়মিত’ থেকে ‘নিয়মিত হুমকি’ দেওয়ার পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন মায়া কুণ্ডু। জেলার পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমণ মিশ্র বলেন, “অভিযোগই দুটিই আমরা তদন্ত করে দেখছি।” ঘটনার কথা মেনে নিলেও তার সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক নেই বলেই দাবি করেছেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক নরেশ চাকি। তিনি বলেন, “যারা সে দিন স্কুলে গিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন তাদের মধ্যে আমাদের দলের কয়েক জন সমর্থক থাকলেও বিষয়টির সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।” তবে এ ব্যাপারে তিনি যে মায়াদেবীর ‘পাশে’ তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন নরেশবাবু। তাঁর সাফাই, “ওই শিক্ষিকা সকলের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। দলমত নির্বিশেষে সকলেই তাঁর উপরে ক্ষুব্ধ।”
কিন্তু দুই শিক্ষিকার মনোমালিন্য এমন পারস্পারিক হুমকির জায়গায় পৌঁছল কী করে? অর্পিতাদেবীর অভিযোগ, “স্কুলে এলেও নানা ছুতোয় তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যান মায়াদেবী। আমি প্রতিবাদ করলে অশান্তি করেন। ওঁর স্বামী ফোন করে হুমকি দিতে থাকেন। গত ৭ মে তিনি স্কুলে আসেননি। পর দিন ছিল পঁচিশে বৈশাখ। তারপর স্কুলে এসে তিনি হাজিরা খাতায় ৭ তারিখের সই করেন। আমি প্রতিবাদ করি। এটাই আমার অপরাধ। তৃণমূলের লোকজন ডেকে আমাকে হেনস্থা করার এটাই কারণ।”
মায়াদেবী এ ব্যাপারে মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর স্বামী দেবব্রতবাবু বলেন, “অর্পিতাদেবী মিথ্যা কথা বলছেন। তিনিই আমার স্ত্রীকে প্রায়ই অপমান করেন। ছাত্রছাত্রীদের সামনে মারতেও গিয়েছিলেন এক দিন। ক্লাসে এসে কাগজ পড়েন। আমার স্ত্রী প্রতিবাদ করলেই চিৎকার-চ্যাঁচামেচি করেন।” চাকদহের ১০ নম্ব ওয়ার্ড এডুকেশন কমিটির সম্পাদক স্বপন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “স্কুলের ওই দুই শিক্ষিকার মধ্যে মিল নেই। মাঝে-মধ্যেই ছাত্রছাত্রীর সামনে গণ্ডগোল করেন। ওঁদের সংযত হতে বলা হয়েছিল। এর সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক দলের সম্পর্ক আছে বলে মনে হয় না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.