সম্পাদকীয় ২...
গৌরব, লজ্জা
শ্চিমবঙ্গের জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষার ফল প্রকাশ হইয়াছে। দেখা যাইতেছে, বেশ কিছু হতদরিদ্র ছাত্রছাত্রী নিজেদের অধ্যবসায়, শ্রম ও অভিভাবকদের ত্যাগস্বীকারের মধ্য দিয়া সাফল্যের সোপানে আরোহণ করিয়াছে। সংবাদপত্রে বিশেষ ভাবে উল্লেখিত মাম্পি খাতুন, নাসির শেখ, আলমিনা খাতুন, রুবেল হুসেন এবং সওকত শেখের মতো নবীন কিশোর-কিশোরীরা তাঁহাদের প্রজন্ম, সম্প্রদায় ও বস্তুত সমগ্র রাজ্যবাসীর কাছেই দৃষ্টান্ত ও অনুপ্রেরণাস্বরূপ। তীব্র দারিদ্রের বাধা তাঁহাদের সকলের ক্ষেত্রেই ছিল। মেয়েদের ক্ষেত্রে উপরন্তু পিতৃতান্ত্রিক সমাজের বিদ্রুপ ও তির্যক টিটকারিও মুখ বুজিয়া হজম করিতে হইয়াছে। কিন্তু তাহাতে এই পড়ুয়ারা যেমন দমিয়া যান নাই, তেমনই তাঁহাদের অভিভাবকরাও হাল ছাড়েন নাই। অবশেষে তাঁহাদের সকলেই জয়েন্ট এন্ট্রান্সের মেডিকাল পরীক্ষায় তালিকার উপর দিকে স্থান করিয়া লইয়াছেন।
এই সমাচার এক ঝলক তাজা সুবাতাসের মতো। এই পাঁচ পড়ুয়াই যে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত, ইহা সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। মুসলিমরা কেবল মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থাতেই আগ্রহী, এই উপকথাটি চূর্ণ করার পক্ষে ইহা যথেষ্ট। তাঁহারা যে-প্রতিষ্ঠানে জয়েন্ট এন্ট্রান্সের প্রশিক্ষণ লইয়াছেন, সেই আল-আমিন মিশন উচ্চ-মাধ্যমিক শিক্ষাক্রমের পঠনপাঠনে বিগত কয়েক বছর ধরিয়াই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করিতেছে। এ ধরনের আরও অনেক প্রতিষ্ঠান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষাব্রতীদের উৎসাহে ও ব্যক্তিগত দানে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় গড়িয়া উঠিয়াছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলি কোনও সরকারি সাহায্য পায় না, অথচ নিরলস শিক্ষাব্রতে অবিচল থাকিয়া সম্প্রদায়ের পড়ুয়াদের আধুনিক, যুগোপযোগী শিক্ষায় শিক্ষিত করিয়া তোলে। এমন প্রতিষ্ঠান না থাকিলে এই রাজ্যে মাম্পি খাতুন ও আলমিনা খাতুনদের ডাক্তারি পড়ার স্বপ্ন সম্ভবত অধরাই থাকিয়া যাইত। কারণ এ দেশে সংখ্যালঘুর উন্নয়ন বলিতে সম্প্রদায়ের মানুষদের শিক্ষিত করিয়া যোগ্যতায় সংখ্যাগুরুর সমপঙ্ক্তিতে তুলিয়া আনা বুঝায় না। এখানে সংখ্যালঘুর উন্নয়ন বলিতে ইমামদের ভাতা প্রদান, মুয়েজ্জিনদের মাসোহারার বন্দোবস্ত কিংবা হজযাত্রীদের ভর্তুকির পরিমাণ বৃদ্ধিকে বুঝায়। সব রাজনৈতিক দলই সহজ পথে সংখ্যালঘুর মন জয়ের চেষ্টা করেন। আসলে সেই অপপ্রয়াসের নেপথ্যে থাকে সংখ্যালঘুর ধর্মীয় আবেগে সুড়সুড়ি দিয়া ধর্মগুরুদের ক্রয় করিয়া সম্প্রদায়ের ভোট সংগ্রহের রাজনৈতিক অভিসন্ধি।
নচেৎ, আল-আমিন মিশনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলি দরাজ সরকারি দাক্ষিণ্য পাইত। সরকার ইচ্ছা করিলে সংখ্যালঘু-প্রধান এলাকায় মাদ্রাসা-মক্তব বানাইতে অর্থ-মঞ্জুর না করিয়া মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিক স্কুল গড়িতে উদ্যোগী হইতে পারিত। ইমামদের ভাতা না দিয়া শিক্ষার প্রসারে নিরত মহাপ্রাণদের সাহায্য করিতে সরকার আগাইয়া আসুক। নজরুল অকাদেমি গড়ার ন্যায় প্রতীকসর্বস্ব ক্রিয়াকলাপ বন্ধ থাকুক। প্রকৃত উন্নয়নের চেষ্টা করুক সরকার। মাম্পি খাতুন ও রুবেল হুসেনরা সরকারি শুভেচ্ছার অপেক্ষা না করিয়াই কৃতী, ইহা সরকারের গৌরব নহে, লজ্জা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.