৯২ থেকে একেবারে ৩০!
অপচয় ঠেকাতে বৃহস্পতিবার কলকাতা পুরসভার মেয়র পরিষদ বৈঠকে খাবারের প্যাকেটের সংখ্যা এক লাফে এতটা কমে গেল! শুধু তা-ই নয়। এক-একটা প্যাকেটের দামও ৩৮০ টাকা থেকে নেমে এল ৬০ টাকায়!
অর্থাৎ বাঁচল ৬২টি প্যাকেট। প্রতি প্যাকেটে বাঁচল ৩২০ টাকা। এ দিনের বৈঠকে জলযোগ খাতে খরচ হল সাকুল্যে ১৮০০ টাকা। গত বৈঠকে যার বহর ছিল ৩৬ হাজার। ফলে নিট ৩৪ হাজার ২০০ টাকার সাশ্রয়!
মেনুতে কী বদল হল, যাতে এত কমল খরচ?
এ দিন বৈঠকশেষে এক মেয়র পারিষদের আক্ষেপ, “২০১০-এর জুলাই ইস্তক বৈঠকে আসছি। কখনও প্যাকেটে থাকত রুমালি রুটি, বিরিয়ানি, চিকেন কষা বা মটন কষা। বাসমতী চালের ভাত, ইলিশ-ভেটকির পাতুরি বা গলদা চিংড়ির মালাইকারিও খেয়েছি। সে সব দিন গেল!” তিনি জানাচ্ছেন, এ দিন প্যাকেটে ছিল মামুলি স্যান্ডুইচ, একটা পেস্ট্রি, কয়েকটা কাজু আর পাঁচ টাকার একটা পটেটো চিপসের প্যাকেট। “ভালই হল। সাহেবদের মতো স্যান্ডুইচ খেয়ে স্লিম থাকব।” সরস টিপ্পনি পারিষদের।
প্যাকেটের সংখ্যা এতটা কমানো গেল কী ভাবে?
এত দিন পুর-সচিবালয়ের অনেক কর্মীর জন্য প্যাকেট ছিল বাঁধা। তবে এ দিন তাঁরা অনেকে জানতেই পারেননি যে, মেয়র পরিষদ বসেছে! খাবারের দায়িত্বে থাকা এক পদস্থ অফিসারের কথায়, “খরচ নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় মেয়র নির্দেশ দিয়েছিলেন প্যাকেটের সংখ্যা ও খরচ কমাতে। সেই মতো স্রেফ তিরিশটার অর্ডার দেওয়া হয়েছিল। প্যাকেটপিছু দাম বড়জোর ষাট টাকা।”কিন্তু এ হেন ব্যয়সঙ্কোচ কর্তৃপক্ষ চালিয়ে যেতে পারবেন তো?
মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের প্রত্যয়ী মন্তব্য, “এ বার থেকে এ ভাবেই চলবে।” তিনি জানিয়েছেন, পুরসভার মাসিক অধিবেশনেও খাবারের প্যাকেট কমানো হবে। এর সঙ্গেই লাগাম টানা হবে প্যাকেটপিছু খরচেও।
আর্থিক সঙ্কটের জেরে পুরসভা উন্নয়নমূলক কাজে রাশ টেনেছে। অথচ বিভিন্ন বৈঠক ও সরকারি অনুষ্ঠানে আয়োজন- ভোজনের পিছনে যে বিপুল টাকা বেরিয়ে যাচ্ছে, সে ব্যাপারে কোনও ভ্রূক্ষেপই ছিল না পুর-কর্তৃপক্ষের। পুর-সূত্রের খবর: বেহিসেবি খরচ নিয়ে পুর অর্থ দফতর বারবার প্রশ্ন তোলায় কর্তৃপক্ষ অবশেষে বাস্তবটা বুঝতে পেরেছেন। টাউন হল কিংবা অন্যত্র যে সব সরকারি অনুষ্ঠানে পুরসভাকে জলযোগ জোগাতে হয়, সেখানেও খরচ কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন মেয়র।
এবং পুর-সূত্রের দাবি, সেই নির্দেশ কার্যকর করাও শুরু হয়ে গিয়েছে। যেমন গত মঙ্গলবার বাইপাসের ধারে আনন্দপুরে পুরসভার এক অনুষ্ঠানে জলযোগের বালাই-ই রাখা হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং ওখানে উপস্থিত ছিলেন। অতিথিদের স্রেফ এক কাপ চা আর একটি বিস্কুট দিয়ে আপ্যায়িত করা হয়েছে। গত বছর ২ অগস্ট গঙ্গাপাড় সৌন্দর্যায়নের এক সরকারি অনুষ্ঠানে পুরসভাকে খাবার বাবদ খরচ করতে হয়েছিল লক্ষাধিক টাকা। মঙ্গলবারের অনুষ্ঠানে লেগেছে মেরেকেটে হাজার! “এত দিনে সত্যিই পরিবর্তনটা হল!” সহাস্য মন্তব্য এক মেয়র পারিষদের। |