কোচবিহার শহরের প্রাচীন ঐতিহ্যময় মন্দিরগুলোর মধ্যে অন্যতম হরিপুর শিবমন্দির। শহরের উত্তরপশ্চিম প্রান্তে অসম রাজ্যের বৈষ্ণব ধর্মগুরু শঙ্করদেবের স্মৃতি বিজরিত মধুপুর ধাম কিছুটা অতিক্রম করে তোর্সা নদীর বাঁধের ধার ঘেঁসে রয়েছে এই মন্দির। পশ্চিমমুখী মন্দিরটির আকৃতি চৌকোণা। মন্দিরে চার চালা আকৃতির পাকা ছাদ এবং উপরের দিকটি ক্রমশ সরু হয়ে গিয়েছে। মাথায় রয়েছে ত্রিশূল। মন্দিরের প্রবেশ পথ দুটি। প্রথম প্রবেশ দ্বারের কয়েক ধাপ সিঁড়ি বেয়ে নীচে নেমে দ্বিতীয় প্রবেশ দ্বার। দ্বিতীয় প্রবেশদ্বারে কোনও দরজা নেই। সেখানে সাদা পাথরের মেঝের মাঝখানে শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠিত। |
এটি হরিহর শিবলিঙ্গ নামে পরিচিত। জানা যায়, এই মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল মহারাজা ধৈর্যেন্দ্র নারায়ণের রাজত্বকালে (১৭৬৫-১৭৮৩) কোচবিহারের রাজারা ছিলেন শৈব ধর্মের উপাসক। সম্ভবত সেই কারণে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। মন্দিরটি বর্তমানে কোচবিহারের দেবত্র ট্রাস্ট বোর্ডের অধীন। গাছগাছালির ছায়াভরা গ্রামীণ পরিবেশে এই মন্দির মায়াময় পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। মন্দির সংলগ্ন একটি জলাশয় রয়েছে। আবর্জনার স্তূপ গ্রাস করেছে জলাশয়টিকে। শোনা যায়, মন্দিরটি নাকি ক্রমাগত মাটির নীচে বসে যাচ্ছে। স্থানীয় গ্রামবাসীরা মনে করেন, হরিহর শিব জাগ্রত। বনবীথি তলে এক শান্ত পরিবেশে জাগ্রত দেবতার মন্দির আপন মহিমায় ভাস্বর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
|
‘কনটেম্পোরারি আর্টিস্ট গ্রুপ নর্থ ইস্ট’-এর উদ্যোগে জলপাইগুড়ি রূপশ্রী কমপ্লেক্স-এ আয়োজিত হল তিন দিন ব্যাপী চিত্র প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন উত্তরবঙ্গের চিত্রশিল্পী নীহার মজুমদার। মোট পঁচিশটি প্রদর্শিত ছবির মধ্যে কোনওটির মাধ্যম অ্যাক্রিলিক, কোনওটি তেল রঙে আঁকা, কোনওটি আবার মিশ্র মাধ্যমের ছবি। জলপাইগুড়ি শহর ছাড়া বেলাকোবা, শিলিগুড়ি এবং ধূপগুড়ি থেকে শিল্পীরা ছবি পাঠিয়েছিলেন। অ্যাক্রিলিকে আঁকা ‘ইন ফ্রন্ট অব শিবা’ ছিল চড়কের ছবি। ত্রিশূলবিদ্ধ একটি জিভ। ‘স্টারভেশন’-এ দেখা গিয়েছে চা-বাগানের এক ক্ষুধার্ত শিশুকে। কোনও ছবিতে ধরা পড়েছে পাগলের অস্থিরতা। আবার কোনও ছবিতে মূর্ত হয়েছে বিপন্ন শৈশব। সংস্থার পক্ষ থেকে এ ধরনের প্রদর্শনী শহরবাসীকে নববর্ষের উপহার।
|
সম্প্রতি উত্তরবঙ্গের দুই জেলা জলপাইগুড়ি ও শিলিগুড়ি সাংস্কৃতিক দিক থেকে একে অপরকে পাল্লা দিল। শহর দুটির ঠিক মাঝখানে অবস্থিত জনপদ বেলাকোবায় অনুষ্ঠিত হল তিন দিনের নাট্য উৎসব। এসেছিল দুই শহরের মোট ছ’টি নাটকের দল। প্রতি দিন দুটি করে নাটক দেখানো হত। দুই শহরের একটি একটি করে। বেলাকোবা স্কুল প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত এ আয়োজনের উদ্যোক্তা স্থানীয় ‘যুবশক্তি অ্যাসোসিয়েশন’। দর্শকদের বিচারে শ্রেষ্ঠ নাটক বিবেচিত হয় জলপাইগুড়ির ‘অন্বেষা গোষ্ঠী’ অভিনীত ‘কাপুরুষ’ ও শিলিগুড়ির ‘থিয়েটার অ্যাকাডেমি’ অভিনীত ‘ফল্গু’। ফলে কেউ জিতল না। ম্যাচ হল টাই।
|
সব্যসাচী দত্ত দীর্ঘ দিন ধরে কাজ করে চলেছেন মূকাভিনয় নিয়ে। সম্প্রতি তাঁরই নির্দেশনায় অনুষ্ঠিত হল ‘সৃষ্টি মাইম’-এর থিয়েটার ‘দখিন রায়’। সুন্দরবনের ‘বনবিবি পালা’ এবং উত্তরবঙ্গের দখিন রায়ের গান এর মূল উপজীব্য। লোক-কাহিনির আধারে মূকাভিনয়ের প্রয়োগ এ অঞ্চলে প্রথম। এতে মিলিয়েছেন উত্তরবঙ্গের প্রচলিত সুর ও সঙ্গীত। ব্যবহার করেছেন দুই অঞ্চলের জীবনচর্চার নানা দিক। বাইশ জন শিল্পীকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় এই নাটক। আবহ নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছিল বাঁশি, দোতারা, হারমোনিয়াম, ঢোল, সারিন্দা সহ আরও বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র।
|
বছরভর ধান, পাট কিংবা আলু চাষে ব্যস্ত থাকেন প্রশান্ত। কিন্তু তা সত্ত্বেও সকাল-সন্ধেয় তাঁর সঙ্গীত চর্চায় বাধা পড়ে না। ছোটবেলায় খোলের বোল রপ্ত করেছিলেন বাবার কাছে। স্থানীয় ওস্তাদদের কাছে তালিম নিয়েছেন বাউল গানের। কয়েক বছর ধরে নানা সরকারি-বেসরকারি অনুষ্ঠানে বাউল গান গেয়ে আসর মাতাচ্ছেন। উত্তরের নানা প্রান্ত থেকে সংগ্রহ করে চলেছেন বাউল গান। পাশাপাশি মনঃশিক্ষা, চোরচুন্নি, গমিরার মতো উত্তরবঙ্গের মাটির গান পরিবেশন করেন প্রশান্ত। ইতিমধ্যে উত্তরবঙ্গের প্রতিভাবান শিল্পী হিসেবে নিজেকে চিহ্নিত করেছেন বেরুবাড়ি সরকারপাড়ার এই বাউল। |
কোচবিহারের বাবলু দাঁ এক সময় পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে হাঁক দিতেন, শিলপাটা ধার... শিলপাটা কোটাবেন নাকি? হাতে থাকত ছেনি, বাটালি, হাতুড়ি। গুঁড়ো মশলার দাপটে বাটা মশলা গৃহস্থের রান্নাঘর থেকে হারিয়ে যাওয়ায় সাবেক পেশায় ভাটা পড়েছে। শিলপাটার দৈনন্দিন ব্যবহার ফুরিয়েছে। এখন তা আচার ব্যবহারের জন্য রাখা আছে ভাঁড়ার ঘরের এক কোণে। ফলে সংসার চালাতে চাষবাসই ভরসা। তবুও তার মাঝে সময় বের করে বেরিয়ে পড়েন পুরনো পেশার টানে। সঙ্গী পুরনো যন্ত্রপাতি। যদি কোনও বাড়ি থেকে ডাক পড়ে, এই আশায়।
|
উত্তরের কড়চা
ছবি ও লেখা দিলে পুরো নাম ও ঠিকানা উল্লেখ করবেন।
উত্তরের কড়চা
এ বি পি প্রাঃ লিমিটেড ১৩৬/৮৯ চার্চ রোড শিলিগুড়ি ৭৩৪৪০১ |
|