হলদিয়ায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা আইকেয়ার পরিচালিত মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ ঝুলেই রইল।
ওই মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আর্জি জানিয়েছিলেন, তাঁরা যাতে পরীক্ষা দিতে পারেন এবং লেখাপড়া চালিয়ে যেতে পারেন, তার জন্য আদালত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিক। বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ বুধবার জানিয়েছে, ওই কলেজের ছাত্রছাত্রীদের আবেদন মর্মস্পর্শী হলেও আদালত তাঁদের সুরক্ষার পথ দেখাতে পারছে না।
একই ভবনে মেডিক্যাল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ চালানোর অভিযোগ ওঠায় ওই প্রতিষ্ঠান গভীর সমস্যায় পড়েছে। হলদিয়ার সিপিএম নেতা লক্ষ্মণ শেঠ ওই মেডিক্যাল কলেজের পরিচালন সমিতির প্রধান। রাজ্যে সরকার বদলের পরে কলেজটির সমস্যা বাড়ে। রাজ্য সরকার, মেডিক্যাল কাউন্সিল এবং রাজ্যের স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয় হলদিয়ার ওই কলেজের অনুমোদন বাতিল করে দেয়। অথৈ জলে পড়েন ছাত্রছাত্রীরা। মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে সেই মামলা হাইকোর্টে ফেরত আসে। ছাত্রছাত্রীরা সেই মামলায় যোগ দিয়ে আর্জি জানান, এমবিবিএস পরীক্ষা শুরু হবে অগস্টে। কিন্তু তাঁরা পরীক্ষা দিতে পারবেন কি না, বুঝতে পারছেন না। অথচ কলেজ-কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নায়ম না-মানা, গাফিলতি-সহ যে-সব অভিযোগ উঠেছে, তার কোনওটার জন্যই পড়ুয়ারা দায়ী নন। শীর্ষ আদালতের নির্দেশের ভিত্তিতে ভর্তি হয়েই তাঁরা এক বছর ক্লাস করেছেন। পরীক্ষা ও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য ছাত্রছাত্রীরা ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হন।
হলদিয়ার যে-সোসাইটি ওই কলেজ চালায়, তাদের আইনজীবী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, পরীক্ষা দিতে না-পারলে ওই পড়ুয়াদের ভবিষ্যৎ বিপন্ন হয়ে পড়বে। রাজ্য সরকার যে-অনুমতি দিয়েছিল, তাতে বলা হয়েছিল, কলেজ নিয়ে কখনও কোনও সঙ্কট দেখা দিলে সরকারই ছাত্রছাত্রীদের দায়িত্ব নেবে। এ বার তা হলে তেমনই কোনও ব্যবস্থা হোক।
স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জবাব, কলেজ-কর্তৃপক্ষই শীর্ষ আদালতের মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন এর পরে তো সরকারের দায়িত্ব পালনের প্রশ্ন ওঠে না। পরবর্তী কালে দেখা গিয়েছে, নিয়মবিধি না-মেনে ওই কলেজ চালু করা হয়েছিল। সরকার একই ভবনে দু’টি কলেজ চালাতে দিতে পারে না। সমস্যা হবে বুঝেই সরকার ওখানে ভর্তির জন্য কোনও ছাত্র বা ছাত্রীকে পাঠায়নি।
বিচারপতি প্রণব চট্টোপাধ্যায় জানান, তিনি ছাত্রছাত্রীদের দাবির সঙ্গে একমত এবং তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশেই ওঁরা ওই কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু কলেজ-কর্তৃপক্ষ শীর্ষ আদালত থেকে মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। কলেজ-কর্তৃপক্ষের গাফিলতিতেই পড়ুয়ারা সমস্যায় পড়েছেন। কলেজ মামলা তুলে নেওয়ায় ছাত্রছাত্রীরা সুপ্রিম কোর্টের কাছ থেকে সুরক্ষার সুযোগ পাননি।
তবে পড়ুয়াদের আরও একটি আবেদনের সুযোগ আছে বলে বিচারপতি জানান। তিনি বলেছেন, হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চে ওই কলেজ নিয়ে যে-মামলা চলছে, ছাত্রছাত্রীরা তাতে হলফনামা দিয়ে বক্তব্য জানাতে পারবেন। বিচারপতি চট্টোপাধ্যায় সিঙ্গল বেঞ্চের বিচারপতিকে অনুরোধ করেছেন, ৩০ জুনের মধ্যে ছাত্রছাত্রীদের আবেদন বিচার করে যেন চূড়ান্ত রায় দেওয়া হয়। |