|
|
|
|
সর্বশিক্ষার নিদের্শিকা |
মিড-ডে মিল সরেজমিনে স্কুলে ‘খাদ্যমন্ত্রী’ |
বিমান হাজরা • রঘুনাথগঞ্জ |
রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষায় নতুন আদলে ফিরছে ‘শিশু সংসদ’। প্রতিটি প্রাথমিক স্কুলে স্কুলেরই ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে এই সংসদ গঠিত হবে। সংসদে থাকবে প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিমন্ত্রী এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী। প্রত্যেকের অধীনে থাকবে অনধিক ৫ জন ছাত্রছাত্রীকে নিয়ে স্থায়ী সমিতি। এই শিশু সংসদ গঠন করে প্রাথমিক স্কুলগুলিতে কার্যত মনিটরিং ব্যবস্থাই চালু করতে চাইছে সর্বশিক্ষা মিশন।
তবে এই ব্যবস্থা নতুন নয়। রাজ্যে শিক্ষকদের জুনিয়র বেসিক-এর প্রশিক্ষণই ছিল শিশু সংসদ কেন্দ্রিক। সেই ব্যবস্থাকেই কিছুটা রদবদল করে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। তবে শিক্ষকদের একাংশ মনে করছেন এর ফলে প্রাথমিক শিক্ষা উপকৃতই হবে। ‘শিশু সংসদ’ চালু করার কথা জানিয়ে ইতিমধ্যেই প্রাথমিক স্কুলগুলিতে পাঠানো হয়েছে এক প্রস্ত লিখিত নির্দেশিকা। প্রধান শিক্ষক-সহ প্রতিটি প্রাথমিক স্কুলে গ্রাম শিক্ষা কমিটি ও শহরে ওয়ার্ড শিক্ষা কমিটির সদস্যদের নিয়ে তিন দিন ধরে প্রশিক্ষণ পর্বও রাজ্য জুড়ে প্রায় শেষ পর্যায়ে।
সর্বশিক্ষা মিশনের ওই নির্দেশিকার রূপরেখায় বলা হয়েছে, শিক্ষার অধিকার সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় সরকারের আইন ২০০৯-এর ৫ খণ্ডের ধারা ২৯-এর উপধারা-২ অনুযায়ী বিদ্যালয়ে শিশুদের সার্বিক বিকাশ গড়ে তোলার লক্ষ্যেই শিশু সংসদ গঠনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এর ফলে বিদ্যালয়ের প্রতি পড়ুয়াদের একাত্মতা বোধ, সুঅভ্যাস এবং দলগত ভাবে কাজের পরিবেশ তৈরি হবে। ছাত্রদের মধ্যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা বাড়িয়ে তুলবে। শিশুদের সুঅভ্যাসগুলি শিশুদের মাধ্যমেই তাদের বাড়িতে ও গ্রামে ছড়িয়ে দেওয়া যাবে।
সর্বশিক্ষা মিশন সূত্রে জানানো হয়েছে, শিশু সংসদে ৫ জন মন্ত্রী ও তাদের অধীনে স্থায়ী সমিতি কাজ করবে বিদ্যালয়ে। যেমন খাদ্যমন্ত্রী ও তার স্থায়ী সমিতি স্কুলের রান্নাঘর ও মিড ডে মিল খাওয়ার জায়গার পরিচ্ছন্নতার দেখভাল, খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে হাত ধোওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে নজরদারি চালাবে। মিড ডে মিলের রান্নায় নলকূপের জল ব্যবহার ও সেই রান্না হওয়ার পর খাবারের পরিবেশন ইত্যাদি কাজেরও দেখাশোনা করবে তারা।
ক্রীড়া ও সংস্কৃতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ছাত্রছাত্রীরা স্কুলে খেলার সরঞ্জামগুলির যথাযথ ব্যবহার করা ছাড়াও বিভিন্ন সংস্কৃতিমূলক অনুষ্ঠানে সহযোগী হিসেবে কাজ করবে। পরিবেশ ও শিক্ষামন্ত্রীর কাজ হবে স্কুলে শিক্ষার পরিবেশ যথা শিক্ষণ সামগ্রীগুলির উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণ, ক্লাসে শিক্ষাদানের উপযুক্ত পরিবেশ গঠনে সহায়তা করা, শৌচাগার ও প্রস্রাবাগারে জল ও সাবানের ব্যবস্থা করা এবং পরিচ্ছন্নতা রক্ষায় সাহায্য করা। একই ভাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীও নিজস্ব দায়িত্ব পালন করবে স্কুলে। প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষা কমিটি যৌথ ভাবে পড়ুয়াদের মধ্য থেকে সংশ্লিষ্ট পদের জন্য ছাত্রছাত্রীদের বাছাই করবেন। প্রধান শিক্ষক শিশু সংসদকে নিয়ে ৩ মাস অন্তর বৈঠক করবেন।
সিপিএমের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠন এবিপিটিএ-র রাজ্য কমিটির সদস্য তরুণ দাস বলেন, “এর ফলে শিশুদের মধ্যে নেতৃত্ব দানের অভিজ্ঞতা বাড়বে, সহমর্মিতা জন্মাবে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা সহ সব বিষয়ে তারা উৎসাহিত হবে।” পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির রাজ্য সম্পাদক স্বদেশ ভট্টাচার্য বলেন, “কনসেপ্টটা নিঃসন্দেহে ভাল। এর ফলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পরিবেশ সব বিষয়েই সচেতনতা বাড়বে। কিন্তু কনসেপ্ট ভাল হলেই তো হবে না, এ রাজ্যের প্রাথমিক স্কুলগুলিতে সে পরিকাঠামোই গড়ে ওঠেনি।” |
|
|
|
|
|