গ্রিসের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতার ধাক্কা এসে লাগল ভারতেও। মনমোহন সরকারের রক্তচাপ বাড়িয়ে আজ ডলারের তুলনায় টাকার দাম রেকর্ড তলানিতে এসে ঠেকেছে। এ দিন প্রতি ডলারের দাম দাঁড়িয়েছে ৫৪.৪৬ টাকা। একই সঙ্গে শেয়ার সূচকও নেমে এসেছে ১৬ হাজারের কোঠায় (দিনের এক সময় নেমে এসেছিল তারও নীচে)। লগ্নিকারীরা তুলে নিয়েছেন ৭৭ হাজার কোটি টাকা। দাম পড়েছে ৬০ ভাগ শেয়ারের।
তবে কি ১৯৯১ সালের মতো সঙ্কট তৈরি হতে যাচ্ছে?
লোকসভায় আজ এই প্রশ্ন তোলেন বিজেপি নেতা মুরলীমনোহর জোশী। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “পরিস্থিতি ততটা খারাপ নয়।” তবে তাঁর মতে, টাকার দাম তলানিতে নামা এবং শেয়ার বাজারের এই ধসের পিছনে প্রধান কারণ হল, গ্রিস তথা গোটা ইউরোপীয় ইউনিয়নে নতুন করে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা। সঙ্গে রয়েছে এশিয়ার বাজারে পতনও। এই সঙ্কটমুক্তির উপায় খুঁজতে সরকার ফের ব্যয়সঙ্কোচের রাস্তায় হাঁটবে বলেও আজ ঘোষণা করেছেন তিনি।
পরিস্থিতির মোকাবিলায় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হাতে অস্ত্রভাণ্ডার যৎসামান্যই। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক একমাত্র ডলার বিক্রি করে টাকার দাম পড়ে যাওয়া রুখতে পারে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তরফে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি সেই কাজ কিছুটা করছেও। কিন্তু দেশের বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ও কমছে। এখন যার পরিমাণ ৩০ হাজার কোটি ডলারেরও কম। যা দিয়ে মাত্র ছ’মাসের আমদানির খরচ মেটানো যাবে। তা ছাড়া আমদানি-রফতানির মধ্যে ফারাকের কারণে ‘কারেন্ট অ্যাকাউন্ট’-এ ঘাটতি তৈরি হয়েছে। টানাটানি রাজকোষেও। এই পরিস্থিতিতে ঘাটতিতে রাশ টানতেই প্রণববাবু আজ ব্যয়সঙ্কোচের দাওয়াইয়ের কথা ঘোষণা করেন। রাজ্যসভায় অর্থ বিল নিয়ে জবাবি বক্তৃতায় তিনি জানান, জনপ্রিয় না হলেও তাঁকে কিছু সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। তিনি বলেন, “ব্যয়সঙ্কোচের জন্য আমি কিছু পদক্ষেপ করতে চলেছি। মানুষ পছন্দ করুন বা না করুন, পরিস্থিতি অনুযায়ী আমরা যে পদক্ষেপ করছি, সেই বার্তা দিতেই এটা করতে হবে।”
দ্বিতীয় ইউপিএ-সরকারের প্রথম দিকেও ব্যয়সঙ্কোচের পথে হেঁটেছিলেন প্রণববাবু। সনিয়া, রাহুল গাঁধী থেকে শুরু করে প্রণববাবু নিজেও বিমানের ‘ইকনমি’ শ্রেণিতে যাতায়াত করতেন। তৎকালীন বিদেশ প্রতিমন্ত্রী শশী তারুর ‘ইকনমি ক্লাস’-কে ‘ক্যাটল ক্লাস’ বলে বর্ণনা করায় বিতর্ক বাঁধে। প্রশ্ন ওঠে এস এম কৃষ্ণ ও শশী তারুরের পাঁচতারা হোটেলে থাকা নিয়েও। আজ প্রণববাবু বলেন, “জানি, আমার দীর্ঘকায় সহকর্মীরা অভিযোগ তুলবেন যে ইকনমি ক্লাসে পা ছড়িয়ে বসার জায়গা থাকে না। কিন্তু কিছু পদক্ষেপ করতেই হবে।”
বিরোধীদের অভিযোগ, কেন্দ্রের সিদ্ধান্তহীনতার ফলে লগ্নিকারীদের মধ্যে অনাস্থাও শেয়ার সূচক ও টাকার মূল্যের পতনের অন্যতম কারণ। যদিও অর্থমন্ত্রীর দাবি, আর্থিক বৃদ্ধির পথে ভারতের অগ্রগতি এখনও অক্ষুণ্ণ। পেট্রোপণ্য-সহ মোট ভর্তুকির পরিমাণ মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ২%-এ বেঁধে রাখারও লক্ষ্য নিয়েছে সরকার। কিন্তু তার জন্য ঐকমত্যের প্রয়োজন। লগ্নিকারীদের আস্থা ফেরাতে দ্রুত প্রকল্প চিহ্নিত করে তাতে ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য একটি ‘স্পেশ্যাল পারপাজ ভেহিকল’ তৈরি নিয়েও প্রধানমন্ত্রীর দফতরে আলোচনা চলছে।
রাজ্যসভায় প্রণববাবু জানিয়েছেন, তিনি আতঙ্ক ছড়াতে চাইছেন না। আতঙ্কের কোনও কারণও নেই। এই আশ্বাস লগ্নিকারীদের আস্থা ফেরাতে পারে কি না, সেটাই দেখার।
|