কোথাও ছাউনি নেই। রোদ-ঝড়-বৃষ্টিতে খোলা আকাশের নীচেই বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে বাধ্য হন যাত্রীরা। পর্যাপ্ত আলো থেকে পানীয় জল, প্রয়োজনে মেলে না কিছুই। নিরাপত্তাকর্মী না থাকায় যাত্রীদের নিরাপত্তাও সঙ্কটে। সব মিলিয়ে আসানসোল সিটি বাসস্ট্যান্ডে প্রায় কোনও পরিষেবাই মেলে না বলে অভিযোগ যাত্রীদের। সাধারণ যাত্রী, বাস কর্মচারী ও মালিকদের তরফে সংশ্লিষ্ট দফতরে বার বার উন্নত পরিষেবার দাবি জানানো হলেও ফল মেলেনি।
আসানসোল শহরে কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ড সিটি বাসস্ট্যান্ড। প্রতিদিন সেখানে আন্তঃরাজ্য ও জেলা-সহ প্রায় আটশো যাত্রীবাহী বাস যাতায়াত করে। কেন্দ্রীয় সরকারের টাকায় ১৯৯০ সালে বাসস্ট্যান্ডটি তৈরি হয়েছিল। তৈরির পরে সেটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় আসানসোল পুরসভাকে। পুরসভার মেয়রকে চেয়ারম্যান করে ১৯৯৪ সালে একটি সিটি বাসস্ট্যান্ড উন্নয়ন কমিটি গঠিত হয়। পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই সময় ঠিক হয়, বাসস্ট্যান্ডের যাবতীয় উন্নয়ন ও পরিষেবার ব্যবস্থা করবে উন্নয়ন কমিটি। এখান থেকে যাতায়াতকারী প্রায় আটশো বাস প্রতিদিন পাঁচ টাকা করে উন্নয়ন তহবিলে জমা করবে। সেই টাকায় উন্নয়ন হবে, পরিষেবা দেওয়া হবে। জানা গিয়েছে, শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারাও উন্নয়ন কমিটির সদস্য। |
বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা গিয়েছে, উন্নয়ন বা যাত্রী পরিষেবার কোনও বালাই নেই। সামান্য অংশে ছাউনি থাকলেও তা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পর্যাপ্ত পানীয় জলের ব্যবস্থা নেই। নিকাশিও বেহাল। নিরাপত্তাকর্মী নেই। পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থাও চোখে পড়ে না।
আসানসোল মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ রায়ের দাবি, “আমরা এখনও প্রতিদিন পাঁচ টাকা জমা করি। কিন্তু বাসস্ট্যান্ডটির যাত্রী পরিষেবার মান বাড়ছে না। কিছু কিছু উন্নয়নমূলক কাজ দরকার, যেগুলি করা হচ্ছে না। উন্নয়ন কমিটির চেয়ারম্যান তথা মেয়রকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।”
বস্তুত বাসস্ট্যান্ডের উন্নয়নের দায়িত্ব যাদের হাতে, সেই সিটি বাসস্ট্যান্ড উন্নয়ন কমিটির কোনও ভূমিকাই নেই বলে অভিযোগ করেছে বাস কর্মচারী ইউনিয়নগুলি। আইএনটিইউসি অনুমোদিত কর্মচারী ইউনিয়নের সম্পাদক হরি সিংহের অভিযোগ, “গত আড়াই বছরে উন্নয়ন কমিটির একটি মাত্র বৈঠক হয়েছে। আর কোনও বৈঠক ডাকেননি কমিটির চেয়ারম্যান তথা মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে আলোচনা হচ্ছে না। কাজও হচ্ছে না।” হরিবাবু আরও অভিযোগ করেন, বাসস্ট্যান্ডের সমস্যাগুলি জানিয়ে মেয়রকে একাধিক বার চিঠিও দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু কোনও লাভ হচ্ছে না। সিটু অনুমোদিত কর্মচারী সংগঠনের সম্পাদক হেমন্ত সরকারের অভিযোগ, “আমরা সমস্যাগুলি তুলে ধরে সেগুলি আলোচনার জন্য মেয়রকে অনেকবার বৈঠক ডাকতে বলেছি। উনি তো কোনও কথাই শোনেননি।” বাসস্ট্যান্ড উন্নয়ন কমিটি থাকলেও সেটি যে নস্ক্রিয় হয়েই রয়েছে, তা স্বীকার করেছেন কমিটির চেয়ারম্যান তথা মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, “আমরা দেখছি কী ভাবে কমিটিকে চাঙ্গা করা যায়।” তাপসবাবুর আশ্বাস, কিছু উন্নয়নমূলক কাজের পরিকল্পনা হয়েছে। শীঘ্রই সে গুলি রূপায়িত হবে। |