বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে
টাকা লোপাটের নয়া ফাঁদ

ব্যবহার করতে করতে এক দিন হঠাৎই অকেজো হয়ে গেল মোবাইল। তার পর থেকে টানা আট দিন ফোন ব্যবহারই করতে পারেননি চুঁচুড়ার বাসিন্দা দেবজিৎ বিশ্বাস। বুঝতেও পারেননি, মোবাইল অকেজো হয়ে যাওয়ার পিছনে রয়েছে এক অন্য ‘অশনি সঙ্কেত’।
কী রকম?
দেবজিৎ জানাচ্ছেন, গত ২০ ফেব্রুয়ারি তাঁর মোবাইল ফোনের টাওয়ার চলে যায়। বার বার মোবাইল পরিষেবা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনও লাভ না হওয়ায়, ২৭ তারিখ সিম কার্ড বদলে ফেলতে বাধ্য হন তিনি। নম্বর অবশ্য একই থেকে যায়। এর পর দিন ইন্টারনেটে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করার সময়ই মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে তাঁর। দেবজিতের কথায়, ‘‘আমার অ্যাকাউন্টে ৭৭ হাজার টাকা ছিল। তার মধ্যে ৭৬ হাজার টাকাই উধাও।”
কী করে এমন হল, ভেবে কুল কিনারা পাচ্ছেন না ওই ব্যক্তি! দেবজিৎ জানান, গত ১১ ফেব্রুয়ারি নেট-ব্যাঙ্কিং করা শুরু করেন তিনি। বলেন, “শুধু অ্যাকাউন্টে কত টাকা রয়েছে, তা-ই দেখতাম। কখনও টাকা লেনদেন করিনি।” প্রতি বার নেট-ব্যাঙ্কিং-এ ঢুকলেই তাঁর মোবাইলে সতর্ক-বার্তা দিয়ে এসএমএস আসত। টাকা লেনদেন করা হলেও এসএমএস আসার কথা। তাঁর দাবি, মোবাইল অকেজো থাকার সময়ই লেনদেন হয়েছে। তাই কোনও
এসএমএস-ও পাননি তিনি।
কী ভাবে সম্ভব এমন জালিয়াতি?
সাইবার অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের অপরাধের পিছনে দুষ্কৃতীদের অস্ত্র ‘ট্রোজান’ (ট্রোজান হর্স বলেও যা পরিচিত) নামে বিশেষ ধরনের একটি কম্পিউটার প্রোগ্রাম। ই-মেল বা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের মাধ্যমে তা পাঠিয়ে দেওয়া হয়, ‘শিকারের’ কম্পিউটারে। এক বার তা কম্পিউটারে ঢুকে গেলেই কেল্লা ফতে! কম্পিউটার ব্যবহারকারীর অজ্ঞাতেই তাঁর সব গোপন তথ্য চলে যাবে হ্যাকারের কাছে। আর তা ব্যবহার করেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা হাতিয়ে নেবে দুষ্কৃতীরা। এক গোয়েন্দা অফিসার বলেন, “এই প্রোগ্রাম কম্পিউটারে ঢুকলে ব্যবহারকারী টের-ও পাবেন না। তিনি যখনই নেট ব্যাঙ্কিং বা ই-মেল অ্যাকাউন্টে লগ করবেন, ট্রোজানের মাধ্যমে তার আইডি এবং পাসওয়ার্ড চলে যাবে হ্যাকারের কাছে।” পুলিশ বলছে, এ ক্ষেত্রেও দেবজিৎ যে কম্পিউটার থেকে ‘নেট-ব্যাঙ্কিং’ করতেন, সেখানে ট্রোজান ঢুকেছিল। যার সাহায্যে ওই ব্যক্তির যাবতীয় তথ্য হাতিয়েছিল দুষ্কৃতীরা।
প্রশ্ন উঠেছে টাকা লেনদেনের সময়ে মোবাইল বন্ধ থাকা নিয়েও?

নেট-ব্যাঙ্কিং সতর্কতা
পুলিশ বলছে, অপরাধীর কাছে এটাও জলভাত! হ্যাকার তার ‘শিকারের’ ব্যাঙ্ক এবং ই-মেলে মোবাইল নম্বর এবং ব্যক্তিগত তথ্য জানার পরে থানায় গিয়ে মোবাইল হারিয়ে যাওয়ার একটি অভিযোগ জানায়। তার পর সেই জেনারেল ডায়েরির নম্বর ব্যবহার করেই মোবাইল নম্বরটিকে অকেজো করে দেওয়া হয়। পুলিশের সন্দেহ, দেবজিতের অ্যাকাউন্ট ‘হ্যাক’ করে টাকা পাঠানোর সময়ে যাতে তিনি কোনও সতর্ক-বার্তা না পান, তার জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তি দেবজিতের মোবাইল ‘অকেজো’ করে দিয়েছিল।
পুলিশ সূত্রের খবর, এপ্রিল মাসে এই ঘটনার তদন্তভার নিয়েছে সিআইডি। তদন্তে জানা গিয়েছে, ২১ ফেব্রুয়ারি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (এসবিআই) ব্যান্ডেল শাখার দেবজিতের অ্যাকাউন্ট থেকে ওই ব্যাঙ্কেরই সোদপুর শাখায় রাজেশ সিংহ নামে এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে ওই টাকা পাঠানো হয়েছে। ওই দিন বেলা ১২টা ১৩ মিনিটে ৭৬ হাজার টাকা সরানোর দু’মিনিটের মধ্যে সোদপুরেরই এক এটিএম কাউন্টার থেকে ৪০ হাজার টাকা তুলে নেয় এক ব্যক্তি। এর পর ওই কার্ড দিয়েই শ্রীরামপুরের একটি সোনার দোকান থেকে বাকি ৩৬ হাজার টাকার গয়না কেনা হয়।
কে এই রাজেশ?
ব্যাঙ্কের নথি ঘেঁটে দেখা যায়, রাজেশের অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছে, তা ভুয়ো। এমনকী, নথিতে দেওয়া প্যান ও ভোটার কার্ডও জাল করা হয়েছে। গোয়েন্দারা বলছেন, যে ব্যক্তিকে টাকা তুলতে দেখা গিয়েছে, সে আসলে প্রতারক-চক্রের এক জন ‘এজেন্ট’। এটিএম কাউন্টারে থাকা ক্যামেরার ছবি দেখে তাকে চিনতে পারেননি দেবজিৎ। গোয়েন্দা সূত্রের খবর, অনেক সময়ই এ কাজের মূল চক্রী কারা, তা এজেন্টদের জানানো হয় না। ওই যে ৪০ হাজার টাকা তোলা হয়েছে, তার থেকে ওই এজেন্ট নিজের কমিশন রেখে বাকিটা অন্য কোনও এজেন্টের অ্যাকাউন্টে ফেলে দেওয়া হয়। সেখান থেকেও একই ভাবে টাকা ‘পাচার’ হয় অন্য কোনও অ্যাকাউন্টে।
একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক কী ভাবে নথি পরীক্ষা না করেই ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলল, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। দেবজিৎ গোটা বিষয়টি রিজার্ভ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকেও জানানোর পর তাঁরা এসবিআইকে বিষয়টি জানিয়েছেন। দেবজিৎ জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে যে এসবিআই-ও তদন্ত শুরু করছে, তা সোমবারই তিনি জানতে পেরেছেন।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.