আমেরিকা যাবে রাজ্যের প্রতিনিধিদল
হিলারির সফরের রেশ ধরে উন্নয়নের লক্ষ্যে দু’পক্ষই
মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টন এবং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠকের পরে এক সপ্তাহও কাটেনি। তার মধ্যেই রাজ্যের জন্য উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণের পথে এগোনো নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করে দিল দুই পক্ষ।
মার্কিন দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, রাষ্ট্রদূত ন্যান্সি পাওয়েল এবং রাজ্যের মুখ্যসচিব সমর ঘোষের মধ্যে সমন্বয়রক্ষাকারী ব্যবস্থাটি দ্রুত গড়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। মমতা নিজেও মনে করছেন, দু’পক্ষের ইতিবাচক বৈঠককে দ্রুত কর্মসূচিতে রূপান্তরিত করা প্রয়োজন। গভীর সমুদ্র বন্দর গড়ে তোলা অথবা তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে মার্কিন লগ্নি কী ভাবে আসবে, তাই নিয়ে নীল নকশা তৈরির উপরেও মমতা জোর দিতে শুরু করেছেন। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রকেও এ ব্যাপারে মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
অঙ্গরাজ্যের সঙ্গে কূটনীতির একটা বড় পর্ব সেরে কলকাতা ছাড়ার পরে প্রথমে দিল্লিতে, পরে দেশে ফিরে মমতার ‘অভিপ্রায়ের’ প্রশংসা করেন হিলারি। গত সোমবার মহাকরণে দু’জনের মধ্যে একান্ত বৈঠকে তৃতীয় কোনও ব্যক্তি উপস্থিত ছিলেন না। আপাত ভাবে দুই নেত্রী ভিন্ন মেরুর মানুষ। কাজেই মার্কিন কূটনীতিকরা তো বটেই, মমতা প্রশাসনের অন্য আমলারাও ওই বৈঠকের ফল নিয়ে চিন্তায় ছিলেন। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, দু’পক্ষই বিশেষ ভাবে সন্তুষ্ট। কলকাতায় মার্কিন তথ্যকেন্দ্রের মুখপাত্ররা বলছেন, মমতা যে ভাবে বরফ গলিয়েছেন এবং উন্নয়ন ও নিরাপত্তা বিষয়ক আলোচনায় ঐকমত্য গড়তে প্রয়াসী হয়েছেন, তা প্রশংসার দাবি রাখে। এখন বাণিজ্য ও শিল্প ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের ‘পার্টনার’ বা অন্যতম শরিক হিসেবে কাজ করবে আমেরিকা।
আপাতত যে পদক্ষেপগুলি দু’পক্ষ নিতে চাইছে সেগুলির অন্যতম হল: প্রথমত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রযুক্তিবিদ এবং বাণিজ্যমহলের একটি প্রতিনিধিদল কলকাতায় আসবে। বিষয়টিতে সমন্বয়ের কাজ করবে ভারত-মার্কিন বাণিজ্য পরিষদ। ফিকি ও সিআইআইয়ের মতো বণিকসভাগুলিও সক্রিয় ভূমিকা নিতে চলেছে। দ্বিতীয়ত, পশ্চিমবঙ্গের একটি প্রতিনিধিদল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাবে। সেখানে তাঁরা আলোচনাসভার মাধ্যমে মার্কিন শিল্পপতি ও অনাবাসী ভারতীয় শিল্পপতিদের সঙ্গে মত বিনিময় করবেন। তৃতীয়ত, সুনির্দিষ্ট কিছু লগ্নির প্রস্তাব এলে তার পরে মমতা আমেরিকায় যেতে পারেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তাঁর সঙ্গে রবার্ট ব্ল্যাকউইল থেকে ডেভিড মালফোর্ড, একাধিক মার্কিন রাষ্ট্রদূত দেখা করেন। কিন্তু বারবার কথা হওয়া সত্ত্বেও দলের আপত্তিতে বুদ্ধবাবু আমেরিকায় যাননি। তাঁর জমানার শেষ দিকে তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেনকে আমেরিকায় পাঠানোর কথা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরও আমেরিকা যাওয়া হয়নি। মমতা অবশ্য হিলারিকে জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর দিক থেকে আমেরিকায় যাওয়া নিয়ে মতাদর্শগত কোনও ছুতমার্গ নেই। কিন্তু তিনি শুধু যাওয়ার জন্য যাবেন না। সুনির্দিষ্ট লগ্নির প্রস্তাব আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, সম্প্রতি রাজ্যের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর শাহরুখ খানের সঙ্গেও ফোনে কথা হয় মমতার। হিলারির সঙ্গে বৈঠকেও তিনি শাহরুখের প্রসঙ্গ তুলেছিলেন। এই বলিউড তারকাকে ব্যবহার করে কী ভাবে লগ্নিকারী-সহ সকলের সামনে রাজ্যের ভাবমূর্তি তুলে ধরা হবে, তাই নিয়ে শীঘ্রই প্রশাসনের শীর্ষস্তরে সবিস্তার আলোচনা হবে।
সিপিএম নেতারা অবশ্য হিলারির সফরে ষড়যন্ত্রের সম্ভাবনা দেখছেন। বুদ্ধবাবু তো নিজেই বলেছেন, রাজ্য থেকে ৩৪ বছরের কমিউনিস্ট শাসনের অবসান সম্ভব হয়েছে বলেই উৎসাহী হিলারি কলকাতায় এসেছেন। মহম্মদ সেলিম প্রশ্ন তুলেছেন, এই সফর হলেই কি লগ্নি এসে যাবে? তার জন্য ভারত-মার্কিন বাণিজ্য পরিষদ রয়েছে। আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট, ভাইস প্রেসিডেন্টের পরেই গুরুত্ব বিদেশসচিবের। হিলারি আবার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টনের স্ত্রী। এ হেন ব্যক্তির আচমকা কলকাতা সফরকে ‘ইচ্ছা সফর’ বলে মনে করছেন না সিপিএম নেতারা। তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, হিলারি-মমতা একান্ত বৈঠক হল কেন? সেখানে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের কোনও প্রতিনিধি রইলেন না কেন? মমতা-সরকারের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় ও ফিরহাদ হাকিম জবাবে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে মার্কিন বিদেশসচিবের বৈঠকে বিদেশ মন্ত্রকের প্রতিনিধির থাকাটা বাধ্যতামূলক নয়।” দুই মন্ত্রীর বক্তব্য, “আমাদের নতুন প্রজন্ম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতে চাইছে। রাজ্যের অনেকেই কর্মসূত্রে সেখানে রয়েছেন। ষাট-সত্তর দশকের স্লোগান ‘সাম্রাজ্যবাদের কালো হাত ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’ এখন অপ্রাসঙ্গিক এবং অবান্তর।” তাঁরা আরও বলেছেন, “সিপিএম নেতারা আসলে মমতার উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে ভয় পাচ্ছেন।”
হিলারির সফরের পরপরই মমতা মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে একটি সাক্ষাৎকার দেন। মার্কিন কর্তাদের মতে, এর মাধ্যমেও মমতা উন্নয়নের পথে হাঁটার বার্তা দিচ্ছেন। গত এক বছরে তাঁর বিরুদ্ধে যে প্রচারের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে, এই ভাবে সেই প্রতিকূল আবহকে মোকাবিলা করতে তিনি তৈরি বলেও মনে করা হচ্ছে। মমতা হিলারির সফর সম্পর্কে বলেছেন, “একটি বৈঠকেই সব কিছু হয়ে যায় না। কিছু হওয়ার চেষ্টার একটা শুরু হিসেবে এই বৈঠককে দেখা উচিত।” রাজ্যের পক্ষ থেকেও বলা হচ্ছে যে, বৈঠকে যে ইতিবাচক আবহ তৈরি হয়েছে, আপাতত সেই প্রেক্ষাপটে একটি সুনির্দিষ্ট পথ নির্দেশিকা তৈরি করতে চাইছে সরকার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.