ট্রাকের চাকা চলে গিয়েছিল এক যুবকের পায়ের পাতার উপর দিয়ে। এই ঘটনায় ট্রাকের খালাসিকে পিটিয়ে মেরে ফেললেন বাসিন্দাদের একাংশ। ট্রাক চালককেও মারধর করা হয়।
গঙ্গাজলঘাটির ভৈরবপুরে শনিবার রাতে এই ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ গিয়ে ট্রাক চালককে উদ্ধার করে। পুলিশ জানিয়েছে, নিহত খালাসির নাম আন্ডি আপ্পা (৪৫)। যুবককে ধাক্কা মারার অভিযোগে ট্রাক চালক থাঙ্গা ভেলকে রবিবার গ্রেফতার করা হয়। দু’জনেই তামিলনাড়ুর নামাক্কাল জেলার বাসিন্দা। খালাসিকে খুন করার একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “ওই ঘটনার দু’টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ট্রাকটিতে যার মাল আনা হচ্ছিল তিনি খালাসিকে খুন করার অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযুক্তদের সন্ধানে পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। ট্রাকের ধাক্কায় জখম যুবকের পরিবারের অভিযোগে ট্রাক চালককে গ্রেফতার করা হয়েছে।” তবে রবিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পুলিশ খালাসি খুনের ঘটনায় কারওকে গ্রেফতার করতে পারেনি।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভৈরবপুর গ্রামে বাঁকুড়া-রানিগঞ্জ ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে, একটি হরিমন্দির রয়েছে। সেখানে শনিবার হরিনাম সংকীর্তন হচ্ছিল। কীর্তনের গান শুনতে স্থানীয় বাসিন্দারা হরিমন্দিরের চারপাশে জড়ো হয়েছিলেন। সেই ভিড় রাস্তা পর্যন্ত ছিল। রাত প্রায় ১১টা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, নাম সংকীর্তন চলার সময় বাঁকুড়া থেকে দুর্লভপুরের দিকে একটি ট্রাক রাস্তায় ভিড় দেখেও গতি না কমিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সেই সময় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা স্থানীয় যুবক শুভজিৎ সিংহের পায়ের পাতার উপর দিয়ে ট্রাকের চাকা চলে যায়। এর পরই উত্তেজিত জনতা ওই ট্রাকের চালক ও খালাসিকে নামিয়ে মারধর শুরু করে। ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যখন পৌঁছয়, তত ক্ষণে খালাসি মারা গিয়েছে। ট্রাক চালকেরও অল্পবিস্তর আঘাত লেগেছিল। পুলিশ কর্মীরা তাঁদের অমরকানন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। রাতে সেখানেই ট্রাক চালকের চিকিৎসা করা হয়। রবিবার সকালে তাঁকে স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে ছেড়ে দেওয়া হলে পুলিশ গ্রেফতার করে।
জখম যুবকের বাবা তরুণ সিংহের অভিযোগ, “ভিড় দেখে চালক গাড়ির গতি কমালে দুর্ঘটনা ঘটত না। ট্রাকের ধাক্কায় শুভজিতের পায়ের পাতায় গভীর চোট লাগে। তাকে বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।” তাঁর দাবি, “শুভজিৎকে নিয়েই আমরা ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। কারা খালাসি ও চালককে মারধর করেছে জানি না।” ওই ট্রাকটি ভাড়া করেছিলেন বাঁকুড়ার পুরন্দরপুরের বাসিন্দা প্রদ্যুৎ সিংহ। রবিবার সকালে তিনি গঙ্গাজলঘাটি থানায় খালাসিকে খুন করার অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁর দাবি, “রাস্তার উপর ভিড় দেখেই চালক ট্রাক থামিয়েছিলেন। স্থানীয় কিছু বাসিন্দা ট্রাক থামিয়ে চালক ও খালাসিকে নামায়। এরপর ট্রাকটি পিছনের দিকে কিছুটা গড়িয়ে গেলে ওই যুবকের পায়ে চোট লাগে। এরপরেই স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ ট্রাকের খালাসি ও চালককে মারধর শুরু করে। ওরাই খালাসিকে খুন করে। সময়মতো পুলিশ না পৌঁছলে চালককেও বাঁচানো যেত না।” এ দিকে পুলিশের তল্লাশিতে ওই গ্রাম প্রায় পুরুষ শূন্য হয়ে গিয়েছে। |