|
|
|
|
|
|
|
কাকে বলে আই টি
‘আই টি’। ছোট্ট কথা। পরিধিটা কিন্তু বিরাট। সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট থেকে শুরু করে
অ্যানিমেশন,
এমনকী বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং-ও পড়ে এর আওতায়। কিন্তু এগুলির
মানে কী,
কী ভাবে
পৌঁছনো যায় এ সব পড়াশোনার দুনিয়ায়, আমাদের ঠিক ঠিক জানা আছে কি?
জানালেন
ইন-থিংক নলেজ ভেঞ্চার্স সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর কল্যাণ কর |
|
আই টি
বা ইনফরমেশন টেকনলজি কথাটি বহুশ্রুত, কিন্তু আই টি বলতে কী বোঝায়, কী কী ক্ষেত্র এর মধ্যে পড়ে, কোন ক্ষেত্রের জন্য কী ধরনের দক্ষতা প্রয়োজন, সেই বিষয়ে অনেকেরই স্পষ্ট ধারণা থাকে না। তাই শুরু করা যাক ‘আই টি মানে কী?’ এই প্রশ্নের উত্তর দিয়ে। দেখো, আমরা যখন ইন্টারনেট সার্ফ করি বা ইমেল করি কিংবা ট্রেনে রিজার্ভেশন করি, তখন প্রতিটি ক্ষেত্রে কোনও না কোনও ভাবে তথ্য দেওয়া-নেওয়া চলে। এর জন্য যে কম্পিউটার ব্যবস্থা কাজে লাগে, তার দুটো প্রধান অঙ্গ হল হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার। কম্পিউটার ব্যবহার করে নানা ধরনের তথ্য সঞ্চয় করা ও সুরক্ষিত রাখা, তথ্যগুলিকে প্রয়োজনমাফিক সাজানো ও বিশ্লেষণ করা, সেই তথ্যগুলিকে তার গন্তব্যে পাঠানো, সঞ্চিত তথ্যকে উদ্ধার করা এই সমস্ত কাজই করতে হয়। আর এই সব মিলিয়েই হল ইনফরমেশন সিস্টেম বা তথ্য ব্যবস্থা। এই তথ্য ব্যবস্থার চর্চা, তার সামগ্রিক নকশা তৈরি, সেই নকশা অনুসারে ব্যবস্থাটিকে গড়ে তোলা, তাকে কাজে লাগানো, তার রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার গোটা কর্মকাণ্ডই তথ্যপ্রযুক্তির আওতায় পড়ে।
আই টি শিল্পকে আমরা দুটো ভাগে ভাগ করতে পারি। প্রথমটি সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট এবং টেকনলজির অংশ। বড় বড় তথ্য প্রযুক্তি সংস্থায় এই ধরনের সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট-এর কাজ হয়। যারা কম্পিউটার, ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন বা ইনফরমেশন টেকনলজির-এর মতো বিষয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছে তারা এই সব কাজ করে। আবার অনেকে অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারিং শাখায় পড়াশোনা করে পরে কোনও প্রতিষ্ঠান থেকে সফটওয়্যারের কোর্স করে নিয়েও এই ধরনের কাজে যোগ দেয়। ইঞ্জিনিয়ারিং ছাড়াও অন্য কোনও বিষয় পড়ে এম সি এ কোর্স করে এসেছে যারা, তারাও এই কাজের যোগ্য প্রার্থী। |
|
তবে, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ছাড়াও আই টিতে আরও অনেক কাজকর্ম হয়। যেমন মাল্টিমিডিয়া, অ্যানিমেশন ইত্যাদি। যদিও এটা বলে রাখি যে অ্যানিমেশন কিন্তু মাল্টিমিডিয়ারই অন্তর্গত। এই যে তোমরা শ্রেক, বেন টেন বা ওয়াল-ইর মতো কার্টুন ছবি দেখো, তা তো সবই এই মাল্টিমিডিয়া-অ্যানিমেশনের দৌলতে। এই ধরনের কাজে তোমাকে ইঞ্জিনিয়ার না হলেও চলবে। সাধারণ গ্র্যাজুয়েট এমনকী উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেও বিভিন্ন ধরনের অ্যানিমেশন বা মাল্টিমিডিয়া কোর্সে প্রশিক্ষণ নিয়ে এই কাজে যোগ দেওয়া যায়। তবে এই ধরনের কাজের একটা গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল সৃষ্টিশীলতা। তোমার খুব ভাল উদ্ভাবনী শক্তি থাকা চাই।
এ বার আসব আই টি-র অন্য অংশটিতে। যেটাকে বলা হয় আই টি এনেবলড সার্ভিস বা ‘আই টি ই এস’। যার মধ্যে পড়ে বি পি ও (বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং) এবং নন-বি পি ও পরিষেবা। বি পি ও-র কাজের রকমফের আছে প্রচুর। বিভিন্ন পণ্যের টেলিমার্কেটিং বা কাস্টমার সার্ভিসিং-এর জন্য যেমন কাজ করে কল সেন্টারগুলি, তেমনই হয় মেডিক্যাল ট্রান্সক্রিপশনের কাজও। আবার, কোনও বিমা সংস্থা তাদের গ্রাহকদের সম্বন্ধে যাবতীয় তথ্য ম্যানেজমেন্টের কাজ, গ্রাহকের ক্লেম সেটেলমেন্ট-এর কাজও ছেড়ে দেয় বিভিন্ন বি পি ও সংস্থার হাতে। অন্য দিকে, রয়েছে নলেজ প্রসেস আউটসোর্সিং (কে পি ও)-র কাজও। যেমন, বিভিন্ন সংস্থা ভারতে অ্যানালিটিক্স-এর কাজ করায়। এই কাজের মূল ধরন হল, অনেক তথ্য থেকে স্ট্যাটিসটিক্যাল সফ্টওয়্যার ব্যবহার করে ভবিষ্যতের বাজার এবং সেই বাজারে চাহিদা ইত্যাদি সম্বন্ধে পূর্বাভাস করা। তা ছাড়া, রয়েছে লিগাল প্রসেস আউটসোর্সিং (এল পি ও)-র কাজও।
বি পি ও-র কাজে শিক্ষাগত যোগ্যতার চাহিদা কম। স্নাতক হলে, এমনকী উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করলেও এই চাকরি পাওয়া যেতে পারে। বি বি এ বা বি সি এ করেও বহু ছেলেমেয়ে কাজ করে বি পি ও-তে। কে পি ও-র কাজে প্রয়োজন অন্তত স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষা। অ্যানালিটিক্স-এর কাজে অর্থনীতি, স্ট্যাটিসটিক্স বা ফাইন্যান্স নিয়ে পড়াশোনা করলে অগ্রাধিকার। আবার, এল পি ও-র কাজে আইন নিয়ে পড়ার পর যোগ দেওয়া যেতে পারে। এই ক্ষেত্রগুলিতে শিক্ষাগত চাহিদা অনেকটাই বেশি। যেহেতু কে পি ও বা এল পি ও-র চেয়ে বি পি ও-তে শিক্ষাগত যোগ্যতার চাহিদা কম, ফলে, অনেক বেশি সংখ্যক ছাত্রছাত্রীর কাছে এই চাকরিটাই সহজতর লক্ষ্য। বি পি ও-তে দু’ধরনের চাকরি থাকে ভয়েস আর নন-ভয়েস। দুটির জন্য আলাদা ধরনের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন হয়। ভয়েস-এর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ইংরেজির দক্ষতা। ব্যাকরণগত ভাবে শুদ্ধ ইংরেজি জানতে হবে। সাধারণত এই প্রশিক্ষণ পদ্ধতিতে কয়েকটি ধাপ আছে। প্রথম ধাপে শেখানো হয় কনভারসেশনাল ইংলিশ, শুদ্ধ উচ্চারণ, পড়ার দক্ষতা, শোনার দক্ষতা ইত্যাদি। দ্বিতীয় ধাপে থাকে কমিউনিকেশন স্কিল। কোন পরিস্থিতিতে কী ভাবে কথা বলতে হবে, নিজের কথা অপর পক্ষকে বোঝাতে হবে, সে বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ ছাড়াও শেখানো হয় বিভিন্ন ধরনের উচ্চারণশৈলী বা অ্যাকসেন্ট। তৃতীয় ধাপে শেখানো হয় বিভিন্ন ধরনের সফ্ট স্কিল, যেমন কনফিডেন্স বিল্ডিং বা আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলা, বডি ল্যাঙ্গোয়েজ, টাইম ম্যানেজমেন্ট, এটিকেট ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি। ভয়েস-এর চাকরির একটি প্রধান শর্ত, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে গ্রাহককে সন্তুষ্ট করা। এ বিষয়টি শেখার জন্যেও বিশেষ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়। বলে রাখি, ভয়েস কলের ক্ষেত্রে আবার থাকে দুটো ভাগ ইন বাউন্ড কলিং আর আউট বাউন্ড কলিং।
আর, নন-ভয়েস কাজের মধ্যে পড়ে পে রোল প্রসেসিং, অ্যাকাউন্টিং প্রসেসিং, পাবলিশিং আউটসোর্সিং-এর মতো কাজকর্ম। মোটামুটি বি কম বা অন্যান্য বিষয়ে স্নাতক হয়ে এই ধরনের চাকরিতে যোগ দেওয়া যায়। এই নন-ভয়েস কাজের জন্যেও প্রয়োজন হয় অন্য ধরনের দক্ষতার। ব্যাঙ্ক, ইনশিয়োরেন্স, হসপিটাল, রিটেল ইত্যাদির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের ‘ডোমেইন স্কিল’ বা বিষয়ভিত্তিক জ্ঞানের প্রয়োজন হয়। বিভিন্ন সফ্টওয়্যার সম্বন্ধে জ্ঞান, নেটওয়ার্কিং এবং টেলিকম বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা থাকা প্রয়োজন। এর জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণেরও প্রয়োজন হয়। |
|
|
|
|
|