অটোয় রান্নার গ্যাস, দায় নিয়ে চাপান-উতোর
টো চলছে রান্নার গ্যাসে। প্রশাসন, পুলিশ, অটো ইউনিয়ন বা গ্যাস ডিস্ট্রিবিউটরের তা অজানা নয়। কিন্তু বন্ধ করবে কে? তা নিয়ে চলছে ঠেলাঠেলি। তেল সংস্থা এবং এলপিজি-র ডিস্ট্রিবিউটরেরা বলছেন, গ্যাসের ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ না আনলে এটা বন্ধ করা যাবে না। অটো ইউনিয়ন দায় চাপাচ্ছে প্রশাসনের ঘাড়ে। পুলিশ নির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছে। আর পরিবহণমন্ত্রী কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। তবে অটোয় রান্নার গ্যাস ব্যবহারের এই বেআইনি কাজ বন্ধ করার কোনও নির্দিষ্ট পরিকল্পনা এখনই নেই রাজ্যের কাছে।
দূষণ রোধে শহরে পেট্রোল-চালিত টু স্ট্রোক অটো বাতিল করে চালু করা হয়েছিল ফোর স্ট্রোক অটো। এখন বিশেষ যন্ত্রের সাহায্যে রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার থেকে গ্যাস নিয়ে সেই অটো চালানো হচ্ছে। তাতে দূষণ বাড়ছে শহরে। একই সঙ্গে জলে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের বিপুল ভর্তুকিও। কিন্তু সম্পূর্ণ বেআইনি এই কারবার বন্ধ করার ব্যাপারে বিশেষ কিছু করার নেই গ্যাস সংস্থার। ‘ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন’-এর চিফ ম্যানেজার (এলপিজি) অভিজিৎ দে বলেন, “পুলিশ-প্রশাসন চাইলে এটা বন্ধ করতে পারে। আমাদের কিছু করার নেই। নির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ ছাড়া ব্যবস্থা নেব কী ভাবে?”
অটোচালকদের ইউনিয়নও বেআইনি এই কাজে ব্যবস্থা নেওয়ার দায়িত্ব প্রশাসনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস সমর্থিত ‘অটোরিকশা অপারেটর্স ইউনিয়ন’-এর সম্পাদক প্রদীপ সাহা বলেন, “ভর্তুকির রান্নার গ্যাস অটোয় ব্যবহার করা অপরাধ। আমরা সমর্থন করি না। এটা বন্ধ করার দায়িত্ব প্রশাসনকেই নিতে হবে।” কিন্তু কলকাতা পুলিশের এনফোর্সমেন্ট বিভাগের এক কর্তা জানান, তাঁরা এই নিয়ে কোনও অভিযোগ পাননি। নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে স্থানীয় থানার পুলিশই ব্যবস্থা নিতে পারে। পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “সমস্ত অটোচালকদের বলছি, এটি বন্ধ করুন। এলপিজি স্টেশন এখন যথেষ্ট সংখ্যায় হয়েছে। আরও তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে। এই অপরাধ যদি চলতে থাকে, তা হলে কড়া ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব।”
স্বাভাবিক ভাবেই একটি জরুরি প্রশ্ন সামনে এসে পড়ে। রান্নার গ্যাসের এত সিলিন্ডার অটোচালকদের হাতে যাচ্ছে কী ভাবে? রান্নার গ্যাসের এজেন্ট এবং দালালদের যোগসাজশেই এটি সম্ভব হচ্ছে বলে মনে করেন অভিজিৎবাবু। তিনি জানান, অনেকেই বাড়ির বিভিন্ন লোকের নামে একাধিক সংযোগ নিয়ে রেখেছেন। তাঁরাই সস্তার রান্নার গ্যাস চড়া দামে অটোচালকদের কাছে বিক্রি করেন। অভিজিৎবাবু মনে করেন, গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবহারের উপরে কোনও নিয়ন্ত্রণ না থাকায় চোরা কারবার সম্ভব হচ্ছে। বছরে ক’টি সিলিন্ডার ব্যবহার করা যাবে, তা বেঁধে দিলে তবেই এই কাজ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
রান্নার গ্যাসের ডিস্ট্রিবিউটরেরাও অবশ্য তেমনটাই মনে করেন। ‘ইনডেন এলপিজি ডিস্ট্রিবিউটর্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সম্পাদক বিজনবিহারী বিশ্বাস বলেন, “অনেক পরিবারে একাধিক সংযোগ আছে, আবার অনেকে অস্বাভাবিক বেশি গ্যাস খরচের অজুহাতেও ঘন ঘন সিলিন্ডার নেন। দুটো ক্ষেত্রেই সিলিন্ডার অটোচালকদের কাছে পৌঁছে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। কিন্তু সব কিছু জেনেও তা বন্ধ করার কোনও উপায় আমাদের হাতে নেই।” রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার পাওয়ার উপরে কোনও প্রকার নিয়ন্ত্রণ না থাকার জন্যই এমনটা সম্ভব হচ্ছে বলে মনে করেন বিজনবাবুও।
রান্নার গ্যাসে সিলিন্ডার পিছু ৫৫৮ টাকা ভর্তুকি দেওয়ার ফলে যানবাহনে ব্যবহৃত গ্যাসের চেয়ে রান্নার গ্যাসের দাম অনেকটাই কম। রান্নার গ্যাসের ১৪ কেজির একটি সিলিন্ডারের দাম ৪০৫ টাকা। আর অটো-এলপিজি প্রতি লিটার ৫৩ টাকা। তা ছাড়া, রান্নার গ্যাসে অটো চলে অনেক বেশি। এই কারণে অটোয় রান্নার গ্যাস ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে বলে মনে করেন পরিবহণ দূষণ বিশেষজ্ঞ সোমেন্দ্রমোহন ঘোষ। তাঁর কথায়, “অটোর এলপিজি-র দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার ফলেই অটোচালকদের মধ্যে রান্নার গ্যাসের ব্যবহার বাড়ছে। অথচ, রান্নার গ্যাসে হাইড্রোকার্বন বেশি থাকায় ভাল্ভে কার্বন জমে গিয়ে দূষণ ছড়াচ্ছে অটো। তা ছাড়া রান্নার গ্যাস ব্যবহার করলে পিক-আপ কমে যাওয়ার ফলেও দূষণের মাত্রা বাড়ে।”
এর ফলে রান্নার গ্যাসে টান পড়ছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে, তা অবশ্য মানতে নারাজ তেল সংস্থার এক কর্তা। তাঁর বক্তব্য, কিছু দিন আগে সরবরাহের ক্ষেত্রে ঘাটতি থাকায় মাসখানেক সিলিন্ডারের একটু টানাটানি ছিল। কিন্তু এখন আর সেই অবস্থা নেই। রান্নার গ্যাসের সরবরাহ যথেষ্ট ভাল বলে দাবি করেন তিনি। আবার অটোর এলপিজি সরবরাহেও কোনও ঘাটতি হওয়া উচিত নয় বলেই মনে করেন অভিজিৎবাবু। তিনি জানিয়েছেন, কলকাতা এবং শহরতলি মিলিয়ে এখন ৩৫টি গ্যাস স্টেশন। সেই স্টেশনগুলির মাধ্যমে এলপিজি-র যে পরিমাণ জোগান রয়েছে, তার ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ মাত্র ব্যবহার হয়। যথেষ্ট গ্যাস স্টেশন না থাকায় এলপিজি পাওয়া যাচ্ছে না বলে অটোচালকেরা অনেক সময়ে যে অভিযোগ করেন, তা-ও অমূলক বলে দাবি তাঁর।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.