পুরো নাম দুর্গা চট্টোপাধ্যায়। সত্তর পার মানুষটি বাংলা ও ইংরেজি সাহিত্যে এম এ। বাঁকুড়ার পুরসভার রাজগ্রাম ফ্রি প্রাইমারি স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষক হিসাবে কর্মজীবন শুরু। প্রায় দু’দশক। এর পরে আধ দশক বাঁকুড়ার মাচানতলার জুনিয়র হাইস্কুলে। কর্মজীবনের শেষ কয়েক বছর কেটেছে পুরপ্রধানের অফিসে। জন্ম, কর্ম সবই রাজগ্রামেই।
কিন্তু এ সবের মধ্যে বর্ণময়তা কোথায়? আছে।
দুই পুত্রকে সংসারে রেখে কুলগুরুর কাছে দীক্ষা এবং শক্তি সাধনার তিন দশক। সংসার ত্যাগ করে দ্বারকেশ্বর নদীর তীরে কুটিরে বাস। শ্মশানবাসী এই বাচিক শিল্পীর কণ্ঠে যদি হঠাৎ শোনেন ‘যদি তোর ডাক শুনে...’। অবাক হবেন না। রাজগ্রামের শেষ প্রান্তে উন্মাদিনীর (কালীর বিভিন্ন রূপ) মন্দির আর বহতা দ্বারকেশ্বর। এখানে বসেই এক দশকের বেশি চলেছে লেখার কাজ। “আমার চাকরি-পড়াশোনা-সংসার, কলকাতার দু’টি দৈনিকে ফ্রিলান্স সাংবাদিকতা। বাঁকুড়া পুরসভার ১৪৫ বছরের ইতিহাস রচনার কাজ। সেই সূত্রে এই ছিয়াত্তর বছর বয়সেও জেলার নানা প্রান্তে ঘুরে বেড়ানো, এ সব সমাজ-সংসার স্বাভাবিক ভাবেই দেখে থাকে। এটা নিজেকে নিয়ে আমার একটা পরীক্ষানিরীক্ষা। যত দিন বাঁচব এই পরীক্ষা নিরন্তর চলতে থাকবে। যদি না অবশ্য শরীরের কলকব্জা বিগড়োয়।” হেসে কথা শেষ করেন দুর্গা চট্টোপাধ্যায়।
কিন্তু শ্মশানবাসীর কণ্ঠে রবীন্দ্রসঙ্গীতের এমন আশ্রয় কী ভাবে? “চর্চা অগ্রজ, কলাভবন-বিশ্বভারতীর অধ্যাপক অরবিন্দ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে শান্তিনিকেতনে। এক সময় এখানে থাকার ফলে রবীন্দ্রনাথের গানের প্রতি টান ও শেখা।” কথা শেষ করে তার খেই ধরেই ফের বলতে শুরু করেন ছিয়াত্তরের ‘তরুণ’, “এতে অনেকেই অবাক হলেও আমার কী করার আছে? শ্মশান ও রবীন্দ্রনাথ দুটিই আমার কাছে প্রিয়। শক্তিসাধনার ফুয়েল।” তবে পাশাপাশি শ্যামাসঙ্গীতের চর্চার কথাও জানাতে ভুললেন না॥
পঁচিশ বছরের এক ছোট ম্যাগাজিনে বাঁকুড়া পুরসভার প্রায় দেড়শো বছরের ইতিহাসের খণ্ডাংশ ইতিমধ্যেই প্রকাশিত। যার মধ্যে সংকলিত আট দশকের ইতিহাস, ব্রিটিশ শাসনকাল। এমন কাজে স্বাভাবিক ভাবেই পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন পুরকর্তৃপক্ষ। গ্রন্থ প্রকাশের দায়িত্ব তাঁরা কাঁধে তুলে নিয়েছেন। রাজ্যের অন্যতম প্রাচীন এই পুরসভার এমন উদ্যোগকে জনস্বার্থে অনুকরণ করতে পারেন অন্যেরা। |