|
|
|
|
বকুনিতে আত্মঘাতী |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ময়নাগুড়ি |
টিভি দেখা নিয়ে বকাবকি করায় সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্র আত্মঘাতী হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার রাতে ঘটনাটি ঘটে ময়নাগুড়ির দক্ষিণ মৌয়ামারি গ্রামে। পুলিশ জানায়, মৃত পড়ুয়ার নাম সঞ্জয় রায় (১২)। সে সুভাষনগর হাই স্কুলের ছাত্র। বাড়ির রান্না ঘর থেকে তার ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। ওই ঘটনায় উদ্বিগ্ন বিশিষ্টজনরা শিশু কিশোর মনের সুস্থতা ফেরাতে কাউন্সেলিংকে গুরুত্ব দিয়েছেন। সঞ্জয়ের বাবা সুকারুবাবু ছোট ব্যবসায়ী। একমাত্র ছেলের বায়না মেনে ১৩ দিন আগে টিভি কিনে দেন। তিনি জানান, অন্য দিনের মতো সন্ধ্যায় পড়তে না-বসে বৃহস্পতিবার ছেলে টিভি খুলে বসে। পড়া ছেড়ে ছেলেকে সিরিয়ালে মগ্ন থাকতে দেখে বকুনি দেন। টিভি বন্ধ করে বই নিয়ে বসতে বলেন। ওই সময় ঘরে একমাত্র মেয়ে ও স্ত্রী শান্তিবালা দেবী ছিলেন। ছেলে টিভি বন্ধ করে ঘর থেকে বার হয়ে যায়। বেশ কিছুক্ষণ পরেও আসছে না দেখে তিনি ছেলেকে ডাকেন। কিন্তু কোনও সাড়া মেলেনি। এর পরে বাড়ির চারদিকে খোঁজ করেন। কোথাও না পেয়ে মনে করেন ভয় পেয়ে সঞ্জয় ঠাকুমা দিনমণি দেবীর কাছে লুকিয়েছে। ওই সময় ঠাকুমা বাড়ির পাশে সুপারির আড়তে কাজ করছিলেন। কিন্তু তিনি ফিরে এলেও ছেলেকে না দেখে দিশেহারা হয়ে পড়েন সুকারুবাবু ও শান্তিবালা দেবী। ওই সময় রান্না ঘরে ঢুকতে ঝুলন্ত দেহ দেখেন। সুকারুবাবু বলেন, “এমন কিছুই বলিনি যে এত অভিমান হবে। ওর বায়না মতো টিভি কিনে দিয়েছি। লেখাপড়ায় ভাল। তাই টিভি বন্ধ করে পড়তে বসতে বলেছি। ওই সামান্য কথায় এত বড় সর্বনাশ হবে ভাবতে পারিনি।” ওই ঘটনায় অবাক এলাকার বাসিন্দা ময়নাগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান গোবিন্দ রায়। তিনি বলেন, “ভাবতে পারছি না এত ভাল ছেলে সামান্য বকুনির জন্য ওই কান্ড করে বসবে।” সুভাষনগর হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হরিদয়াল রায় বলেন, “সমাজের পক্ষে এটা অত্যন্ত খারাপ সঙ্কেত।” ওই ঘটনায় উদ্বিগ্ন বিদ্বজ্জন মহল। সমস্যা এড়াতে তাঁরা ‘কাউন্সিলিংয়ের’ উপরে গুরুত্ব দিয়েছেন। ময়নাগুড়ি কলেজের অধ্যক্ষ দেবকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, “নানা কারণে শিশু কিশোর মনে সঙ্কট বাড়ছে। আজকাল মেধা বিকাশের উপরে বেশি গুরুত্ব দিতে গিয়ে ছেলেমেয়েদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। আমরা কেউ ভাবছি না শাসনের নামে নির্যাতন হচ্ছে কিনা। কোমল মনে তার কী প্রভাব পড়ছে। যে কারণে দুর্ঘটনা বেড়ে চলেছে। সমস্যা সমাধানের জন্য অভিভাবক ও শিশু-কিশোরদের কাউন্সেলিং জরুরি হয়ে পড়েছে।” চাইল্ড লাইনের ডিরেক্টর সুদীপ চক্রবর্তী বলেন, “অভিভাবকের ইচ্ছা-অনিচ্ছায় চলতে গিয়ে শিশু কিশোর জগতের মানসিক সমস্যা বাড়ছে। টিভি দেখার সুফল বা কুফল নিয়ে তারা কিছুই জানে না। আমরা তাদের বোঝানোর চেষ্টাও করি না। অথচ বকাবকি করছি। দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা ঘটে চলেছে। সমাধানের একমাত্র উপায় হল কাউন্সেলিং।” |
|
|
|
|
|