|
|
|
|
পশ্চিম মেদিনীপুরে সিপিএম |
জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে কি মহিলা নেত্রী, আলোচনা আজ |
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশ মেনে উত্তর চব্বিশ পরগনার পর এ বার কি পশ্চিম মেদিনীপুরেও সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে অন্তত এক জন মহিলা নেত্রীকে ‘সংযুক্ত’ করা হবে? আজ, শনিবার মেদিনীপুরে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে বলে দলীয় সূত্রে খবর।
মাত্র কয়েক দিন আগেই সিপিএমের নতুন জেলা সম্পাদকমণ্ডলী গঠিত হয়েছে। নতুন সেই সম্পাদকমণ্ডলী নিয়ে অবশ্য দলের অন্দরেই অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। জেলা নেতৃত্বের একাংশের ক্ষোভ, বেছে বেছে জেলা সম্পাদক দীপক সরকারের অনুগামীদেরই সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য করা হয়েছে। ‘ব্রাত্য’ই থেকে গিয়েছেন কয়েক জন প্রবীণ নেতা। এই অবস্থায় মহিলা নেত্রী হিসেবে কে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে জায়গা পাবেন, তা নিয়েও দলের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। সিপিএম সূত্রে খবর, এ ক্ষেত্রে পাল্লা ভারী ‘গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি’র নেত্রী আভা চক্রবর্তীর। তিনিও অবশ্য দীপক-অনুগামী বলেই পরিচিত। এ বার পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে দলের যে ৩ জন প্রতিনিধি রাজ্য সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, আভাদেবী তাঁদের অন্যতম। তবে ‘বিতর্ক’ এড়াতে (ফের দীপক-অনুগামীর অন্তর্ভুক্তি) অন্য কোনও মহিলা নেত্রীকেও সম্পাদকমণ্ডলীতে আনা হতে পারে বলে খবর। এ বার সিপিএমের জেলা কমিটিতে রয়েছেন ৭০ জন। তার মধ্যে মাত্র ৭ জন মহিলা। তাঁরা হলেননন্দরানি ডল, আভা চক্রবর্তী, গীতা হাঁসদা, করুণা বন্দ্যোপাধ্যায় (সুশান্ত ঘোষের স্ত্রী), ফুল্লরা মণ্ডল, আরতি বসু ও হেনা শতপথী। তাঁদের মধ্যে ফুল্লরাদেবী নেতাই-মামলায় অভিযুক্ত হয়ে এখন ‘ফেরার’। আরতিদেবী এ বারই জেলা কমিটিতে এসেছেন। তাই সম্পাদকমণ্ডলীতে তাঁর জায়গা পাওয়ার সম্ভাবনা অপেক্ষাকৃত কম। সুশান্তবাবু নিজে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে রয়েছেন, তাঁর স্ত্রী করুণাদেবীকে অন্তর্ভুক্ত করার সম্ভাবনাও কম।
সিপিএমের নতুন জেলা কমিটি নিয়েও দলের অন্দরে আগেই প্রশ্ন উঠেছে। নানা অভিযোগে জোনাল সম্পাদকের পদ থেকে বাদ পড়া, জোনাল কমিটিরও সদস্য করা হয়নি--এমন নেতাকে কমিটিতে রাখা হলেও কয়েক জন নতুন জোনাল সম্পাদককে জেলা কমিটিতে রাখা হয়নি। জেলা কমিটির ‘রাশ’ নিজের হাতে রাখতেই দীপকবাবু তাঁর অনুগামীদের জেলা কমিটির সদস্য করেছেন বলে দলের একাংশের অভিযোগ। নতুন জেলা সম্পাদকমণ্ডলী গঠিত হওয়ার পরেও একই রকম অভিযোগ উঠছে। যদিও সিপিএম জেলা নেতৃত্বে ‘ক্ষমতাসীন’ গোষ্ঠীর দাবি, সবই অপপ্রচার। জেলা কমিটি হোক বা জেলা সম্পাদকমণ্ডলী--দলের মধ্যে কোনও অসন্তোষ নেই। অথচ ঘটনা হচ্ছে, এ বার জেলা কমিটির সদস্য করা হয়নি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্যকেও। জেলা থেকে রাজ্য সম্মেলনের জন্য যে প্রতিনিধি তালিকা তৈরি হয়েছিল, তাতেও তাঁর নাম ছিল না। সে নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। শেষমেশ সভাধিপতিকে রাজ্য সম্মেলনে ‘পর্যবেক্ষক’ হিসাবে আমন্ত্রণ করেন রাজ্য নেতৃত্বই।
জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে এ বার নতুন ৪ জন সদস্য এসেছেন। তাঁরা হলেনপুলিনবিহারী বাস্কে, মেঘনাদ ভুঁইয়া, অশোক সাঁতরা ও সমর মুখোপাধ্যায়। আগে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন ১৫ জন। এ বার তা বেড়ে হয়েছে ১৬। দলের একাংশের বক্তব্য, যে ৪ জনকে সম্পাদকমণ্ডলীর নতুন সদস্য করা হয়েছে, তাঁরা সবাই দীপক-অনুগামী। এ বারও ব্রাত্য থেকে গিয়েছেন কালী নায়েক, অনিল পাত্রের মতো প্রবীণ নেতারা। জায়গা পেতে পারতেন কীর্তি দে বক্সী, আহমেদ আলির মতো নেতারাও। কিন্ত তা হয়নি। আরও বেশি সংখ্যক মহিলা ও তরুণদের পার্টিতে আনার কথা বলা হলেও শীর্ষ-কমিটিতে কেন মহিলা ও তরুণদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না, তা নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে। এক জেলা নেতা বলেন, “আমাদের জেলায় মোট পার্টি সদস্যের ৭৭.১৭ শতাংশই শ্রমিক, খেতমজুর, গরিব কৃষক। এটা উৎসাহজনক। তবে ‘সর্বহারা’র রাজনৈতিক দল হিসেবে এই অংশের লোকেদেরই আরও বেশি সংখ্যায় শীর্ষ-কমিটিরও সদস্য করা উচিত। কিন্তু তা হচ্ছে না।”
নানা দিক থেকেই ক্ষোভের আঁচ পাচ্ছেন দীপকবাবু। বিশেষত, গত বছর বিধানসভা-ভোটে বিপর্যয়ের পরে দলের মধ্যে ক্ষোভ আর চাপাও থাকছে না। আর এই প্রেক্ষিতেই জেলা কমিটির সাম্প্রতিক ‘পার্টি-চিঠি’তে (১/২০১২) স্বীকার করতে হয়েছে, ‘শ্রেণিশত্রুর আক্রমণ ও চক্রান্তকে পরাস্ত করে এগিয়ে যাবার সংগ্রামে পার্টির মধ্যে ইচ্ছার ঐক্য, কাজের ঐক্য ও শৃঙ্খলার ঐক্য গড়ে তোলার নিরন্তর প্রয়াস জারি থাকলেও কখনও কখনও শিথিলতার প্রকাশ ঘটেছে ও অনৈক্যের বাতাবরণ সৃষ্টি হয়েছে’। পাশাপাশি ‘নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতিতে থমকে দাঁড়াতে হয়েছে’ বলেও স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে ওই পার্টি-চিঠিতে। অ-ভূতপূর্ব এই ‘স্বীকারোক্তি’র মধ্যে জেলা-পার্টিতে দীপকবাবুর নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ শিথিল হওয়ার লক্ষণ দেখছেন কেউ কেউ। তাঁরা মনে করাচ্ছেন, প্রশাসনিক ভাবে পশ্চিম মেদিনীপুর ভাগ হয়ে নতুন ঝাড়গ্রাম জেলা গঠন এখন সময়ের অপেক্ষা। আর সে ক্ষেত্রে, সিপিএমেরও নতুন ঝাড়গ্রাম জেলা-কমিটি গঠন হবে। খণ্ডিত ক্ষমতা নিয়ে দীপকবাবু আর বেশি দিন জেলা সিপিএম সম্পাদক থাকবেন না বলে মনে করছেন দলেরই কেউ কেউ। উচ্চ-নেতৃত্বও তিন বারের বেশি সম্পাদক পদে আসীনদের ধাপে-ধাপে সরানোরই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কোঝিকোড় পার্টি-কংগ্রেসেই তা অনুমোদিত হয়েছে। |
|
|
|
|
|