সম্পাদকীয় ১...
শ্বেত হস্তী
৯৮৪ সালে ইংল্যান্ডের ন্যাশনাল কোল বোর্ড সিদ্ধান্ত করে, দেশের অ-লাভজনক ১৭৪টি কয়লাখনি বন্ধ করিয়া দেওয়া হইবে। সিদ্ধান্তটি, স্বভাবতই, শ্রমিক সংগঠনগুলির পছন্দ হয় নাই। তাহারা দেশব্যাপী ধর্মঘট আরম্ভ করে। সরকারের উপর বিপুল চাপ সৃষ্টি করে। দেশের প্রধানমন্ত্রী কিন্তু সেই চাপের সম্মুখে নতিস্বীকার করেন নাই। তিনি শ্রমিক নেতাদের সহিত কথা বলিতেই অস্বীকার করেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁহার সিদ্ধান্তে অটল থাকায় শেষ পর্যন্ত ১৯৮৫ সালে আন্দোলনটি ভাঙিয়া যায়। এবং ইংল্যান্ড হইতে জঙ্গি ট্রেড ইউননিয়ন আন্দোলন কার্যত নির্মূল হইয়া যায়। ভারতে সরকারি বিমানসংস্থা এয়ার ইন্ডিয়া-র বিমানচালকরা সরকারের বিরুদ্ধে যে জঙ্গিপনা আরম্ভ করিয়াছেন, তাহাতে ১৯৮৪-র ব্রিটেনের খনিশ্রমিকদের কথা মনে পড়িতে বাধ্য। সমস্যা হইল, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নাম মার্গারেট থ্যাচার নহে, মনমোহন সিংহ। তাঁহার আট বৎসরব্যাপী প্রধানমন্ত্রিত্বে দুই একটি ব্যতিক্রম ব্যতীত তিনি দৃঢ়তার পরিচয় দিতে পারেন নাই। এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানচালকদের বর্তমান কর্মবিরতি, যাহা আদালতের মতে সম্পূর্ণ বেআইনি, প্রধানমন্ত্রীকে একটি ঐতিহাসিক মুহূর্তের সম্মুখীন করিয়াছে। তাঁহার দুর্বল হইলে চলিবে না। বিমানচালকরা সরকারের বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করিয়াছেন। যুদ্ধই তবে হউক। যাত্রীদের অসুবিধা হইবে, সত্য। কিন্তু সেই অসুবিধা মানিয়া লওয়া ভিন্ন এখন উপায়ান্তর নাই। সরকারের উপর দফায় দফায় অন্যায় চাপ সৃষ্টির যে খেলাটি এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানচালকরা যথেচ্ছ খেলিয়া থাকেন, সেই খেলাটি এই বার চিরতরে শেষ হউক। এই ঘটনাটি একটি ইতিহাস সৃষ্টি করুক, ১৯৮৪-৮৫ সালের ব্রিটিশ খনি শ্রমিকদের ধর্মঘটের মতোই।
এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানচালকরা যে প্রশ্নে কর্মবিরতি আরম্ভ করিয়াছেন, তাহা নিতান্তই অকিঞ্চিৎকর। অনুমান করা সম্ভব, ইহা অছিলামাত্র তাঁহাদের বৃহত্তর ক্ষোভ বা অনিশ্চয়তা যে কোনও সুযোগেই বাহির হইয়া আসে। এয়ার ইন্ডিয়া নামক বিমানসংস্থাটি ভারতীয় করদাতাদের অর্থে পালিত শ্বেতহস্তিবিশেষ। গত পাঁচ বৎসরে সংস্থাটি ২৮,০৪৫ কোটি টাকা লোকসান করিয়াছে। সেই টাকা রাজকোষ হইতেই পূরণ করা হইয়াছে। সম্প্রতি সরকার সংস্থার স্বাস্থ্যোদ্ধারকল্পে প্রায় ৪০,০০০ কোটি টাকা ব্যয় করিল, আরও ব্যয়ের প্রতিশ্রুতিসহ। একটি অলাভজনক বিমানসংস্থাকে কেন জবরদস্তি দেশবাসীর স্কন্ধে চাপাইয়া রাখা হইবে, এই প্রশ্নের উত্তর সরকার কখনও দেয় নাই। বড় জোর বলিয়াছে, সংস্থাটিতে সংস্কার করিতে হইবে। বিমানচালকরা সম্ভবত সেই সংস্কারের ভয়েই ভীত। তাঁহাদের সেই ভীতিকে প্রশ্রয় দেওয়ার দায় সরকারের নহে।
সরকারের দায়িত্ব সেইখানেই ফুরাইয়া যায় না। অসামরিক বিমান পরিবহণ এমনই একটি ক্ষেত্র, যেখানে ভর্তুকির কোনও যুক্তিই থাকিতে পারে না। যাঁহারা বিমানে সফর করেন, তাঁহারা ‘আম আদমি’ নহেন। কাজেই, বিমানসংস্থাকে তাহার পূর্ণ ব্যয় যাত্রিভাড়া হইতে তুলিয়া লইতে হইবে। আর পাঁচটি বিমানসংস্থা তাহা পারে, কিন্তু এয়ার ইন্ডিয়া পারে না। কারণ, এয়ার ইন্ডিয়া অকুশলী, তাহার ব্যয় অযৌক্তিক রকমের বেশি। অকুশলী বিমানসংস্থা প্রতিযোগিতার বাজারে টিকিতে না পারিয়া ব্যবসা গুটাইয়া লইয়াছে, এমন উদাহরণ দুনিয়ায় কম নাই। এয়ার ইন্ডিয়ার নাম সেই তালিকায় জুড়িলে ভারতের কোনও ক্ষতি হইবে না। সরকার শ্বেত হস্তী প্রতিপালনের বিলাসিতাটি ত্যাগ করুক। কর্মবিরতিরত বিমানচালকরা বুঝুন, শুধু চাপের খেলা খেলিয়া বাজার অর্থনীতিতে টিকিয়া থাকা যায় না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.