কার্টুন নিয়ে উত্তাল এ বার রাজধানীর রাজনীতি। বিতর্ক মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা রেলমন্ত্রী মুকুল রায়কে কেন্দ্র করে নয়। বিতর্কিত কার্টুনটির দুই চরিত্রের এক জন সংবিধান প্রণেতা ভীমরাও অম্বেডকর তো অন্য জন জওহরলাল নেহরু। এঁকেছিলেন কার্টুনিস্ট শঙ্কর। এনসিইআরটি-র রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠ্য বইয়ে তা ছাপার বিরোধিতায় আজ দফায় দফায় সংসদ অচল করে দিলেন মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টির সাংসদরা। তাতে সায় দিল বিজেপি থেকে শুরু করে তৃণমূলও।
দলিত ভাবাবেগ এমনিতেই রাজনৈতিক ভাবে স্পর্শকাতর বিষয়। তায় রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আসন্ন। তার আগে মায়াবতী বা অন্য কোনও শরিককে চটানোর ঝুঁকি নেওয়া সম্ভব নয় কংগ্রেসের পক্ষে। সেই কারণে আজ সিদ্ধান্ত নিতে বেশি সময় নেয়নি সরকার। লোকসভার নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায় প্রথম সচেষ্ট হন পরিস্থিতি সামলাতে। তাতেও কাজ না হওয়ায় বিরোধী ও শরিকদের প্রবল চাপের মুখে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী লোকসভায় কপিল সিব্বল বিবৃতি দিয়ে জানান, গত এপ্রিল মাসে বিষয়টি তাঁর নজরে আসে। সেই মুহূর্তেই তিনি কার্টুনটি বাদ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওই পাঠ্যবই আর যাতে সরবরাহ না করা হয়, সে জন্য বিক্রেতাদেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে আজ। এনসিইআরটি-র পাঠ্যপুস্তকে আরও কোনও বিতর্কিত কার্টুন রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছে। যদিও এতে আবার বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে শিক্ষা মহলে। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে এ দিনই এনসিইআরটি-র উপদেষ্টা পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন দুই শিক্ষাবিদ যোগেন্দ্র যাদব ও সুহাস পালসিকর। |
যে কার্টুনটিকে ঘিরে বিতর্ক সেটির বিষয়বস্তু হল, একটি শামুকে লাগাম পরিয়ে তার পিঠে বসে এগোনোর চেষ্টা করছেন অম্বেডকর। পিছনে চাবুক তুলে দাঁড়িয়ে জওহরলাল নেহরু। সংবিধান প্রণয়নে বিলম্ব হচ্ছে বোঝাতেই আঁকা হয়েছিল কার্টুনটি। ইউপিএ-র ছোট শরিক দল তামিলনাড়ুর ভিদুথালাই চিরুথাইগাল কাচ্চির (ভিসিকে) নেতা ও সাংসদ তিরুম্মা ভালাবান আজ লোকসভায় প্রথমে বিষয়টি উত্থাপন। কার্টুনটি একটি বোর্ডে সেঁটে তিনি লোকসভার ওয়েলে নেমে পড়ে স্লোগান দিতে শুরু করেন। অন্য দিকে রাজ্যসভায় বিষয়টি উত্থাপন করেন বসপা নেত্রী মায়াবতী। মায়াবতী বলেন, “এই কার্টুন ছেপে শুধু দলিতদের নয়, অপমান করা হয়েছে দেশের গণতন্ত্রকেও।” সরকার এ ব্যাপারে কোনও ব্যবস্থা না নিলে সংসদ অচল করে দেওয়ার হুমকি দেন মায়াবতী। এর পর একে একে প্রায় সব রাজনৈতিক দলই এ নিয়ে সংসদে ক্ষোভ জানাতে শুরু করে। এমনকী, তৃণমূল নেতা ও কেন্দ্রীয় পর্যটন প্রতিমন্ত্রী সুলতান আহমেদ বলেন, “এ ধরনের কার্টুন ছাপা অপরাধ। খুবই লজ্জাজনক বিষয়। শুধু সরকার নয়, দেশের ভাবমূর্তি এতে মলিন হচ্ছে।” আবার কংগ্রেসেরই এক সাংসদ এই ঘটনার জন্য কপিল সিব্বলের সমালোচনা করেন।
লোকসভার নেতা প্রণব মুখোপাধ্যায় প্রথম সভার উত্তাল পরিস্থিতি সামলাতে সচেষ্ট হন। তিনিও বলেন, “এ ধরনের কার্টুন ছাপা উচিত হয়নি। এটা ভুল হয়েছে। তা ছাড়া স্যার অ্যান্টনি ইডেনও লিখেছিলেন যে, ডঃ ভীমরাও অম্বেডকরের অক্লান্ত পরিশ্রম ছাড়া ভারতীয় সংবিধান প্রণয়ন সম্ভব ছিল না।” তবে এতেও সংসদে শান্তি ফেরানো সম্ভব হয়নি। বরং লোকসভা মুলতুবি করে দিতে হয়। পরে দুপুর ২টো নাগাদ লোকসভায় বিবৃতি দেন মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী সিব্বল।
এনসিইআরটি-র পাঠ্যবই নিয়ে বিতর্ক নতুন নয়। প্রথম দফার ইউপিএ সরকারের আমলে বিজেপি অভিযোগ করেছিল যে, এনসিইআরটি-র বইয়ে লেখা রয়েছে, অসুর নিধনের আগে দুর্গা মদ্যপান করেছিলেন। প্রয়াত কংগ্রেস নেতা অর্জুন সিংহ তখন কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী। বিষয়টি নিয়ে সংসদে বিজেপি প্রবল শোরগোল করায় সে বারও পরিস্থিতি সামাল দিতে সক্রিয় হন প্রণববাবুই। চণ্ডী-র দুটি লাইন পাঠ করে তিনি বোঝানোর চেষ্টা করেন যে বইয়ে ভুল কিছু বলা হয়নি।
তবে রাজনৈতিক ভাবে খুবই স্পর্শকাতর ছিল এ বারের বিষয়টি। তড়িঘড়ি ‘সংশোধন’ সে কারণেই। |