আরামবাগ মহকুমার রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনা প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ জেলার ১৮টি ব্লকেই শুরু হয়েছে। দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী পরিবারের সদস্যদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিমার সুবিধা দেওয়ার উদ্দেশে এই প্রকল্প রূপায়ণে প্রথম পর্যায়ে সাফল্য মেলেনি স্রেফ প্রচারের অভাবে বলে পঞ্চায়েতগুলির অভিযোগ ছিল। অভিযোগ অস্বীকার করেনি প্রশাসনের ব্লক, মহকুমা এবং জেলাস্তর। কিন্তু তার পরেও আগের পদ্ধতিতেই তড়িঘড়ি উপভোক্তা নির্বাচন করে কার্ড দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল। এ দিকে মানুষ জানেনই না কোথায় কোন হাসপাতাল বা নার্সিংহোমে গেলে বিমার সুবিধা পাবেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের এই প্রকল্পটির উপভোক্তাদের বাৎসরিক প্রিমিয়ামের ৭৫০ টাকার মধ্যে ৭৫ শতাংশ দেবে কেন্দ্র সরকার। বাকিটা দেবে রাজ্য সরকার। উপভোক্তা পরিবারটিকে প্রকল্পে নথিভুক্তিকরণ এবং স্মার্টকার্ড নবীকরণের জন্য দিতে হবে বছরে ৩০ টাকা। পরিবার-পিছু মোট বিমাকৃত অঙ্ক ৩০ হাজার টাকা। বিমার আওতায় আসা পরিবারটি হবে পাঁচ সদস্যের স্বামী, স্ত্রী এবং তিন জন নির্ভরশীল সন্তানের জন্য। পরিবারের সদস্য পাঁচের বেশি হলে পরিবারের কর্তা ঠিক করবেন, কোন পাঁচ জন বিমার আওতাভুক্ত হবেন। বিমাভুক্তদের সুবিধাপ্রাপ্তি হল নির্দিষ্ট চিকিৎসা কেন্দ্রে চিকিৎসা সংক্রান্ত যাতায়াত খরচ বাবদ প্রতিবার ১০০ টাকা পাবেন। তবে সর্বাধিক ১ হাজার টাকা অবধি সেই টাকা পাওয়া যাবে। উপভোক্তা পরিবার একক ভাবে বা যৌথ ভাবে নির্দিষ্ট চিকিৎসা কেন্দ্রে খরচ সাপেক্ষে বিভিন্ন অসুখের চিকিৎসা এবং অস্ত্রোপচার-সংক্রান্ত খরচ ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত পাবেন। মোট ৭৮০ ধরনের অসুখকে বিমার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
দ্বিতীয় দফায় হুগলি জেলার জন্য মোট ২৭টি চিকিৎসা কেন্দ্রকে নির্দিষ্ট করা হয়েছে এই পরিষেবার জন্য। ওই সব কটিই বেসরকারি। আরামবাগ মহকুমার ৬৩টি পঞ্চায়েত এলাকার মানুষদের জন্য পরিষেবা ক্ষেত্র মাত্র ৪টি। আরামবাগের ডোঙ্গলমোড়ের একটি নার্সিংহোম (আরোগ্যলোক সেবা নিকেতন), আরামবাগ কোর্ট রোডের সিটি নার্সিংহোম, পুড়শুড়ার পশ্চিমপাড়ার জীবন নার্সিংহোম এবং খানাকুলের ছত্রশালের ঊষাপতি ভারতী নার্সিংহোম। আরামবাগ মহকুমার ৬টি ব্লকের বিডিওদের অভিযোগ, বিমার সুযোগ নিয়ে নিয়মিত সচেতনতা শিবির না-হলে প্রকল্পটির সফল রূপায়ণ এ বারও ব্যর্থ হবে। মানুষ কোথায় কী ভাবে পরিষেবা পাবেন তাঁদের জানা নেই। প্রথম দফার ব্যর্থতা নিয়ে তাঁদের বক্তব্য, কিছু মানুষ ব্লকে খোঁজ-খবর নিয়ে নার্সিংহোমগুলিতে গেলে নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা পাননি। স্মার্টকার্ড পুনর্নবীকরণ সমস্যাও একটা বড় সমস্যা। বেশ কিছু পঞ্চায়েতে আবার উপভোক্তাদের কার্ড বছরভর পড়েই ছিল। উপভোক্তাদের মতো পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষও সচেতন নয়। অন্য দিকে নার্সিংহোমগুলির দাবি, রোগী-পিছু খরচের টাকা দিতে বিমা কোম্পানির হয়রানি এবং গাফিলতিতেই উৎসাহ হারিয়েছেন তাঁরা। গত দফার (২০১১ সালের জানুয়ারিতে শুরু) কিছু অসুবিধার কথা স্বীকার করে প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত হুগলির অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) আর অ্যালিয়াস ভেজ বলেন, “অসুবিধাগুলি দূর করার জন্য স্বাস্থ্য শিবিরগুলিতে প্রচারের ব্যবস্থা থাকছে। মানুষের অভাব-অভিযোগ শোনার জন্য ব্লকস্তরে কমিটি থাকছে।” তিনি বলেন, “উপভোক্তা নির্বাচনে প্রথম দফায় লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছনো যায়নি। এ বার ব্যাপক সাড়া মিলছে। গত ১৯ এপ্রিল থেকে আরামবাগ মহকুমায় কাজ শুরু হয়েছে। পরে জেলার সর্বত্রই শুরু হয়েছে।” |