নিজস্ব সংবাদদাতা • পুরুলিয়া |
রাস্তা তৈরির জমি মিলছিল না। স্রেফ এই কারণে পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় ঘেঁষা বাঘমুণ্ডিতে প্রস্তাবিত পলিটেকনিক কলেজ গড়াকে ঘিরে তৈরি হয়েছিল সংশয়ের মেঘ। সমস্যা মেটাতে প্রায় ২৭ কাঠা জমি দান করলেন স্থানীয় তিন বাসিন্দা। জমি জটে যেখানে আটকে রয়েছে রাজ্যের বহু প্রকল্প, সেখানে এলাকার উন্নয়নের স্বার্থে এই তিন জনের জমিদান নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী।
বাঘমুণ্ডিতে এই পলিটেকনিক কলেজ গড়ার প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই জমি সমস্যা রয়েছে। প্রশাসন সূত্রের খবর, কারিগরি শিক্ষা দফতরের বিধি মোতাবেক এই ধরনের কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়তে গেলে ন্যূনতম পাঁচ একর জমি প্রয়োজন। বাঘমুণ্ডি-ঝালদা রাস্তার ধারে, যেখানে এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার কথা, সেখানে সরকারি খাস জমি পাওয়া যায় ৪ একর ১ ডেসিমেল। বাঘমুণ্ডির কংগ্রেস বিধায়ক নেপাল মাহাতো জানান, পুরো পাঁচ একর জমি না মেলায় পিছিয়ে পড়া এই এলাকায় এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হয়। জমির অভাবে এই ধরনের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখানে গড়ে উঠবে না, উপলব্ধি করে বাঘমুণ্ডিরই বাসিন্দা, দুই সহোদর এক একর জমি গত অক্টোবরে কারিগরি শিক্ষা দফতরকে দান করেন। |
জামাল খাঁ, সফিক আনসারি ও মঞ্জুর খাঁ। ছবি: সুজিত মাহাতো। |
বাঘমুণ্ডির বিডিও শুভঙ্কর রায় জানান, দফতর পাঁচ একর জমি হাতে পেয়ে কাজ শুরু করতে গিয়ে দেখে সংশ্লিষ্ট জমিতে রাস্তা সংক্রান্ত কিছু অসুবিধা রয়েছে। বিধায়ক বলেন, “স্থানীয় মানুষজন দেখলেন এতদূর এগিয়েও কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। তখন ওখানকারই তিন জন ফের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। ফলে পিছিয়ে পড়া বাঘমুণ্ডিতেও এ বার পলিটেকনিক কলেজ গড়ে তোলায় আর সমস্যা রইল না।”
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাস্তার জন্য ৪৪ ডেসিমেল (প্রায় ২৭ কাঠা) জমির প্রয়োজন ছিল। স্থানীয় বাসিন্দা মঞ্জুর খাঁ, জামাল খাঁ ও সফিক আনসারি বুধবার প্রয়োজনীয় সেই জমিটুকু তুলে দিলেন প্রশাসনের হাতে। মঞ্জুর পেশায় গাড়িচালক। জামালের ছোট ভ্যানগাড়ি রয়েছে। তা ভাড়া খাটিয়ে তাঁর সংসার চলে। মঞ্জুর ও জামাল সম্পর্কে মামা-ভাগ্নে। তাঁরা দুজনে মিলে ২৩ ডেসিমেল জমি দিয়েছেন। আর সফিক দিয়েছেন বাকি ২১ ডেসিমেল। সফিকের বাঘমুণ্ডি মোড়ে সাইকেল ও মোটরবাইক সারানোর গ্যারাজ আছে। বুধবার পুরুলিয়া জমি রেজিস্ট্রি দফতরে ওই তিন জমির দানপত্র লিখে দেন কারিগরি দফতরের নামে।
তিন জনই বলছেন, “শুধুমাত্র জমির সমস্যায় এ রকম একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাঘমুণ্ডিতে গড়ে উঠবে না, ভাবতে খারাপ লাগছিল। নেপালবাবুর কথা শুনে বাঘমুণ্ডির ছেলেমেয়েদের শিক্ষার স্বার্থেই জমি দান করার সিদ্ধান্ত নিই।” সফিকের কথায়, “সরকার যখন উন্নয়নের জন্য এগিয়ে এসেছে, তখন স্থানীয় বাসিন্দা হিসেবে আমাদেরও তো কিছু দায়িত্ব রয়েছে!” |