ভরসা কাঁথা স্টিচ
বাংলাদেশের ‘মন্ত্রে’ কাঁথা বুনছেন দিলরুবা
বাংলাদেশে আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে গিয়ে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন দুঃস্থ মহিলাদের আর্থিক স্বাবলম্বী করার ‘মন্ত্র’। সেই মন্ত্রেই মুর্শিদাবাদ জেলার কয়েক হাজার দুঃস্থ মহিলাকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর পথ দেখিয়েছেন তিনি। তিনি দিলরুবা সরকার। বাড়ি বহরমপুর শহর লাগোয়া চালতিয়া এলাকায়। তাঁর উদ্যোগে প্রশিক্ষত দুঃস্থ মহিলাদের তৈরি নকশি কাঁথা, তসরের উপর কাঁথা স্টিচ ও জরি এমব্রডয়ারি করা শাড়ি আজ বিদেশে পাড়ি দিচ্ছে। স্বাভাবিক ভাবেই লাভের মুখ দেখখেছেন তাঁরা।
দিলরুবার বড় ছেলে হায়দরাবাদে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছেন। ছোট ছেলে কলকাতার আবাসিক স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। স্বামী আরিফুজ্জামান সরকারি আইনজীবী। দিলরুবা নিজেও ইতিহাসে এম এ পাশ করার পর সোস্যাল ওয়েল ফেয়ার নিয়ে এম এ পড়ছেন। এ হেন সুখি সংসারের গৃহকোন ছেড়ে তিনি কিসের টানে মহিলাদের হাতের কাজ শেখানোর জন্য স্বেচ্ছাসেবী একটি সংস্থা গড়ে বাড়ি থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে ভাগীরথী নদী পার হয়ে উত্তরপাড়ায় চারতলার একটি বিশাল বাড়ি ভাড়া নিয়ে আস্ত একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রই খুলে ফেললেন? সেই কেন্দ্রের নাম ‘অ্যারিনা ফর দ্যা ওমেন ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড রিসোর্স সেন্টার’।
হাল ফিরেছে কাঁথা স্টিচে। বহরমপুরে তোলা নিজস্ব চিত্র।
কয়েক বছর আগের কথা। বাংলাদেশে আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “সেখানে দেখি আমার আত্মীয়ারা প্রতিবেশীদের নিয়ে নকশিকাঁথা সেলাই-এর কাজে অধিকাংশ সময়ই মগ্ন রয়েছে। জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম তাদের ওই হস্তশিল্পকর্ম হল্যান্ড, দুবাই, কাতার সিঙ্গাপুর-সহ বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়।”
তার বিনিমেয়ে বিদেশি ডলার আসে। মহিলারাও আর্থিক ভাবে স্বয়ম্ভর হয়।
দিলরুবা বলেন, “বাংলাদেশে ওই সব মহিলাদের সুচিশিল্পের প্রশিক্ষণ দেওয়া থেকে শিল্প-সামগ্রীর বাজার খোঁজা ও বাজারজাত করার প্রায় পুরো কাজটাই মহিলারা নিজেরাই করেন। ফলে মহিলাদের সমস্যাও অনেক কম। তাই দেখে আমার মনে জাগে, মা-দিদিমার কাজ থেকে শেখা নকশিকাঁথা-সহ বিভিন্ন রকমের সেলাই আমিও দুঃস্থ মহিলাদের শেখাতে পারি। তাতে পর্দানশিন মুসলিম মহিলাদের উপকার হবে। সেই ভাবনা থেকে বছর চারেক আগে ১২ জন মহিলাকে আমার বাড়িতেই প্রশিক্ষণ দএওয়ার কাজ শুরু করি।”
ডিস্ট্রিক্ট রুরাল ডেভলপমেন্ট সেল-এর মুর্শিদাবাদ জেলা প্রজেক্ট ডিরেক্টর ছিলেন মেসবাউল হক। তিনি এখন স্বাস্থ্য দফতরের যুগ্ম সচিব। দিলরুবা ও তাঁর প্রশিক্ষিত মহিলাদের হাতের কাজ দেখে আগ্রহী হয়ে পড়েন তিনি। তিনি বলেন, “মুর্শিদাবাদে বিপিএল তালিকার মহিলা স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষ। তাঁদের অধিকাংশই মুসলিম ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের। ব্যাঙ্কের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, প্রকল্প তৈরি করা, ঋণ নেওয়া ও সংঘ পরিচালনা-সহ বিভিন্ন বিষয়ে ওই সব মহিলাদের প্রশিক্ষিত করতে কয়েকজন উপযুক্ত মহিলার খোঁজ চলছিল। পেয়ে গেলাম দিলরুবাকে।” মুর্শিদাবাদ জেলা শিল্পকেন্দ্রের আধিকারিকরাও দিলরুবার ভূমিকায় সন্তুষ্ট। মুর্শিদাবাদ জেলা শিল্পকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক বিদ্যুৎ শাঁখারি বললেন, “দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য মাস তিনেকের একটি আবাসিক প্রশিক্ষণ রয়েছে। ওই প্রকল্পের একটি দলে বিপিএলের ৩৫-৪০ জন মহিলাকে কাঁথা-স্টিচের মতো সূচিশিল্পের দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। আর এই ব্যাপারে দিলরুবা সরকারের অবদান অনস্বীকার্য।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.