|
|
|
|
দেশপ্রাণের ধ্বংসপ্রায় বাড়ি সংস্কারে আর্জি |
সুব্রত গুহ • কাঁথি |
বসতবাটি ধ্বংসপ্রায়। ফাটলের ফাঁকে বিশাল বটগাছ আর তার শিকড়-বাকড়। ঝোপঝাড়-আগাছায় ঢেকেছে চাতাল। বাদুড়, চামচিকে আর বিষাক্ত সাপ ছাড়া আনাগোনা নেই কারও। ধ্বংসস্তূপের আনাচে-কানাচে চাপা পড়েছে স্বাধীনতা আন্দোলনের চুপকথা। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার চণ্ডীভেটি গ্রামে স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা দেশপ্রাণ বীরেন্দ্রনাথ শাসমলের বাড়ি সংস্কার ও সংরক্ষণে উদ্যোগ নেই কোনও।
কাঁথি শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে দেশপ্রাণ ব্লকের চণ্ডীভেটি গ্রাম। কাঁথি-রসুলপুর রাস্তায় মুকুন্দপুরে নেমে রিকশা বা ট্রেকারে চেপে প্রত্যন্ত ওই গ্রামে পৌঁছনো যায়। আর দিঘা-কলকাতা রাজ্য সড়ক দিয়ে গেলে মারিশদা বাসস্টপে নেমে ট্রেকার বা রিকশায় আঁউরাই বটতলা, সেখান থেকে মোরাম রাস্তায় মাইলখানেক হাঁটাপথ। ১৮৮১ সালের ২৬ অক্টোবর এই বাড়িতেই গ্রামের জমিদার বিশ্বম্ভর শাসমল ও তাঁর স্ত্রী আনন্দময়ীদেবীর মেজো ছেলে বীরেন্দ্রনাথের জন্ম।
|
|
— নিজস্ব চিত্র। |
বিশাল দোতলা সেই বসতবাটি এখন খণ্ডহরে পরিণত। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ‘চণ্ডীভেটি দেশপ্রাণ বীরেন্দ্র স্মৃতিরক্ষা কমিটি’ ও উৎসব-কমিটির সম্পাদক ফুলকুমার বেরা বলেন, “সেই সময় এই বাড়ি স্বাধীনতা সংগ্রামী, স্বেচ্ছাসেবক আর সত্যাগ্রহীদের ভিড়ে জমজমাট থাকত। এখন বাইরের লোকজন তো দূরের কথা, গ্রামের ছেলে-মেয়েরাও ভুলে এ দিকে পা বাড়ায় না।” ফুলকুমারবাবুর ক্ষোভ, “স্বাধীনতা আন্দোলনের সেনানীদের প্রতি বর্তমান প্রজন্মের অবজ্ঞা আর ইতিহাসকে উপেক্ষা করার প্রশাসনিক প্রবণতাই এই পরিস্থিতি তৈরি করেছে।”
নতুন প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদের কাছে দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের গৌরবময় ইতিহাস আর সেই পর্বে বীরেন্দ্রনাথ শাসমলের ভূমিকা তুলে ধরার জন্য কার্যত একক প্রচেষ্টায় গত দশ-বারো বছর ধরে চণ্ডীভেটি গ্রামে ‘দেশপ্রাণ মেলা’র আয়োজন করে আসছেন ফুলকুমারবাবু। নাচ, গান, আবৃত্তি, ক্রীড়া ও প্রবন্ধ প্রতিযোগিতার পাশাপাশি স্বাধীনতা সংগ্রামীর স্মৃতিচারণও হয় মেলায়। সেই ক’দিন কয়েক হাজার মানুষের ভিড়ে জমজমাট থাকে দেশপ্রাণের জন্মভিটে। তার পর আবার সেই শ্মশানের নীরবতা। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী-বর্ষে প্রয়াত স্বাধীনতা সংগ্রামী ও বিধায়ক বলাইলাল দাস মহাপাত্রের উদ্যোগে কেন্দ্রীয় সরকারের ১ লক্ষ টাকা ও দেশপ্রাণ পঞ্চায়েত সমিতির ২৫ হাজার টাকায় গ্রামে একটি স্মৃতিসৌধ তৈরি হয়। প্রশাসনিক উদ্যোগ বলতে এটুকুই।
অবিলম্বে দেশপ্রাণের জন্মভিটেকে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণার দাবি জানিয়েছে ‘দেশপ্রাণ বীরেন্দ্র স্মৃতি-রক্ষা কমিটি’। পাশাপাশি সরকারি সাহায্যে এই বসতবাটি সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন ফুলকুমারবাবু। আদর্শ গ্রাম হিসাবে গড়ে তুলতে চণ্ডীভেটিতে শিশু উদ্যান, গ্রন্থাগার, ডাকঘর, পযর্টকদের জন্য অতিথি-নিবাস তৈরিরও দাবি জানিয়েছেন তিনি। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি মামুদ হোসেন অবশ্য বলেন, “বীরেন্দ্রনাথ শাসমলের বাড়ি অধিগ্রহণ করে সংরক্ষণের দাবি জানিয়েছি আমরাও।” তিনি জানান, চণ্ডীভেটি গ্রামে একটি আপার-প্রাইমারি বিদ্যালয় চালু করা ছাড়াও কমিউনিটি হল ও দাতব্য চিকিৎসালয় তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যেই ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দও করা হয়েছে। |
|
|
|
|
|