রানওয়েতে আছড়ে পড়ল হেলিকপ্টার। বরাতজোরে প্রাণে বাঁচলেন সস্ত্রীক ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী অর্জুন মুন্ডা।
আজ দুপুরে রাঁচির বিরসা মুন্ডা বিমানবন্দরের রানওয়েতে প্রায় ২৫ ফুট উঁচু থেকে ভেঙে পড়ে হেলিকপ্টারটি। যান্ত্রিক গোলযোগেই এই দুর্ঘটনা বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর স্ত্রী মীরা মুন্ডা ছাড়াও হেলিকপ্টারে ছিলেন মাজগাঁওয়ের বিজেপি বিধায়ক বড়কুঁয়র ঘাগরাই এবং মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশ সুপার মনোজ সিংহ। এ ছাড়া ছিলেন হেলিকপ্টারের দুই পাইলট। সকলেই কমবেশি আহত হয়েছেন। তাঁদের চিকিৎসা চলছে রাঁচির একটি বেসরকারি হাসপাতালে। মুখ্যমন্ত্রী এবং তাঁর স্ত্রীর মূলত হাতে-পায়েই বেশি আঘাত লেগেছে। সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর সিটি স্ক্যান হয়। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, হেলিকপ্টারের পাইলট ক্যাপ্টেন ভি কে সিংহের আঘাত তুলনামূলক ভাবে বেশি। তবে সকলেই বিপন্মুক্ত। মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর স্ত্রীর দ্রুত আরোগ্য কামনা করে বার্তা পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। |
মাত্র ক’দিন আগে, গত ২৭ এপ্রিল অর্জুন মুন্ডার হেলিকপ্টারই সরাইকেলা-খরসঁওয়ার আকাশে দুর্যোগের মধ্যে পড়েছিল। সে যাত্রায় জামশেদপুরে জরুরি অবতরণ করেছিল হেলিকপ্টারটি। আজ অবশ্য আকাশ ছিল পরিষ্কার। রাঁচি বিমানবন্দর সূত্রের খবর, সকাল ১১টা ১৬ মিনিটে সস্ত্রীক মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে ‘আরিয়ান অ্যাভিয়েশন’-এর অগস্টা ১০৯ হেলিকপ্টারটি রাঁচি থেকে রওনা হয়। ভাড়া করা হেলিকপ্টারটির মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে সরাইকেলা-খরসঁওয়া জেলার কুচাইয়ে যাওয়ার কথা ছিল। কুচাই মুখ্যমন্ত্রীরই নির্বাচনী কেন্দ্র। সেখানে একটি অনুষ্ঠানে তাঁর যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু পথেই হেলিকপ্টারে যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দেয়। কুচাই পৌঁছেও প্রত্যন্ত গ্রামে নামার ঝুঁকি নিতে চাননি পাইলট। তিনি আবার রাঁচির দিকে রওনা হন। রাঁচি এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-কে পাইলট বলেন, “হেলিকপ্টারে যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দিয়েছে। রাঁচি ফিরে আসছি।” |
হিসেব মতো, ১২ টা ৪ মিনিটে রাঁচিতে নামার কথা ছিল হেলিকপ্টারটির। কিন্তু রাঁচি ফেরার পথে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে ওঠে। ১১টা ৫৪ মিনিটে রাঁচি এটিসি-কে পাইলট বলেন, “রাডার কন্ট্রোল লস্ট।” বিশেষজ্ঞদের মতে, এর ফলে হেলিকপ্টারের গতিবেগের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন পাইলট। এক এটিসি অফিসারের কথায়, “বিমানবন্দরের উপরে এসে পাইলট কোনও মতে গতি নিয়ন্ত্রণ করে রানওয়েতে নেমে আসার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পাঁচ বার চেষ্টা করেও সফল হননি। শেষ পর্যন্ত দুপুর ১২টা ২৪ মিনিটে রানওয়েতে সজোরে আছড়ে পড়ে হেলিকপ্টারটি।” বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের রিজিওনাল এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর (পূর্বাঞ্চল) মনোহরলাল লাকড়া বলেন, “দুর্ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের তিনটি অ্যাম্বুল্যান্স এবং দমকল বাহিনী রানওয়েতে পৌঁছে যায়। কপাল ভালো যে আগুন লেগে যায়নি। আহতদের সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে পাঠানো হয়।”
এই ঘটনায় রাঁচি বিমানবন্দরের একমাত্র রানওয়েটি বন্ধ করে দিতে হয়। ফলে দিল্লি থেকে আসা একটি বিমানকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কলকাতায়। বাতিল হয় অন্য একটি উড়ান। হেলিকপ্টারের ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে রানওয়ে সারাতে অনেকটা সময় লেগে যায়। বিকেল ৪টে ৪০ মিনিটে রানওয়ে ফের চালু করা হয়। কলকাতায় ঘুরিয়ে দেওয়া বিমানটি সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টা নাগাদ রাঁচিতে নামে।
নিয়ম অনুযায়ী, এই ধরনের দুর্ঘটনার পরে সেই রানওয়ে আবার ব্যবহারযোগ্য কি না, তার সবুজ সঙ্কেত দেয় ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ সিভিল অ্যাভিয়েশন (ডিজিসিএ)। এ ক্ষেত্রে দুর্ঘটনার তদন্ত করার কথা কলকাতায় থাকা ডিজিসিএ-র অফিসারদের। কিন্তু রানওয়ে বন্ধ থাকায় তাঁরাও প্রথমে পৌঁছতে পারছিলেন না। শেষমেশ রাঁচির এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট-এর অফিসারদের বিশেষ ক্ষমতা দিয়ে রানওয়ে পরীক্ষা ও সারাই করিয়ে তা চালু হয়। সন্ধ্যায় ডিজিসিএ-র অফিসাররা রাঁচি পৌঁছে তদন্ত শুরু করেন। |