সামান্য ঝড়েই শহরের ফুটপাথে একের পর এক গাছ উপড়ে পড়ার ঘটনা প্রতি বছর এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর ফলে বিভিন্ন এলাকায় গাছের সংখ্যা হঠাৎ কমে যাওয়ায় সেখানকার বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। সেই সঙ্কট কাটাতেই শহরের রাস্তায় এ বার ছোট চারার সঙ্গে ১২ ফুট লম্বা গাছও লাগাবে কলকাতা পুরসভা। তবে সব জায়গায় নয়, চলতি কালবৈশাখীতে শহরে যে শ’দুয়েক গাছ পড়েছে, সেখানেই ওই গাছগুলি লাগানো হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার।
কেন এই সিদ্ধান্ত? মেয়র পারিষদ বলেন,“শহরে গাছ লাগানো হয় মূলত কার্বন-ডাই-অক্সাইড শুষে নিয়ে অক্সিজেন ছাড়ার কথা ভেবে। তাই যে সব এলাকায় ঝড়ে বড় গাছ পড়ে গিয়েছে, সেখানে ছোট চারা লাগালে সেটির পক্ষে বড় গাছের ভূমিকা পালন করতে অন্তত পাঁচ বছর বা তার বেশি সময় লাগবে। অন্য দিকে, বড় গাছ পড়ে যাওয়ার ফলে ওই সব এলাকায় দূষণের ভারসাম্যে পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে। তাই সিদ্ধান্ত হয়েছে, এলাকায় দূষণের ভারসাম্য বজায় রাখতে সরাসরি বড় গাছই লাগানো হবে।” তিনি জানান, প্রতি বছর বর্ষায় যেমন ছোট চারা লাগানো হয়, সেই প্রকল্প বাতিল হচ্ছে না। বরং শহরে সবুজ বাড়াতে এ বারের বর্ষায় লক্ষাধিক চারা গাছ লাগানো হবে। |
দেবাশিসবাবু জানান, শহরে বিশেষ কয়েক ধরনের গাছ নতুন সমস্যা ডেকে আনছে। ওই সব গাছের বড় ডাল ভেঙে পড়ে অনেক সময়েই আশপাশের বাড়িগুলির বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে। তাই ঠিক করা হয়েছে, এমন বড় গাছ আর লাগানো হবে না, যাতে সেগুলি উপড়ে গিয়ে বা ঝড়ে সে সব গাছের বড় ডাল ভেঙে আশপাশের বাড়ির ক্ষতি হয়। আয়লার সময়েও শহরে বেশ কিছু গাছ ভেঙে পড়েছিল। তখনই পুরসভা ঠিক করে, শহরে আর কৃষ্ণচূড়া, রাধাচূড়া, রেন ট্রি, বট, অশ্বত্থ, পাকুড়, কদম জাতীয় গাছ লাগানো হবে না। কারণ, ওই সব গাছগুলির ডালপালা অনেকটা জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ডালগুলিও বেশ পলকা। সেই সঙ্গে, ওই সব গাছের শিকড় মাটির গভীরে যায় না। ফলে সামান্য ঝড়েই গাছগুলির ডাল ভেঙে পড়ে বা শিকড়সুদ্ধ গাছ উপড়ে আসে। এই সব পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেই পুরসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ওই ধরনের গাছ লাগানোর পরিবর্তে শহরের রাস্তায় এখন থেকে জারুল, নিম, বকুল, ছাতিম, অর্জুন, পলাশ, জাকারান্ডা গাছ লাগানো হবে। আর শহরের পার্কগুলিতে লাগানো হবে আম, কাঁঠাল, জামরুল, সবেদার মতো ফলের গাছ। ইতিমধ্যেই পুরসভা সেই সব গাছ লাগানো শুরু করেছে। উদ্ভিদবিজ্ঞানী দুলালচন্দ্র পাল অবশ্য মনে করেন, পুরসভা যে সব বিষয়ের কথা ভেবে শহরে গাছ লাগানোর নীতি তৈরি করেছে, তাতে জাকারান্ডা গাছটি না লাগানোই ভাল। বাকিগুলি মোটের উপরে ঠিকই আছে। তার সঙ্গে জাম, পুত্রঞ্জীব এবং পলাশের পরিবর্তে রুদ্রপলাশ গাছ লাগালে ভাল হবে। |