উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থাকে (এনবিএসটিসি) পর্যটনমুখী করে তোলার বিষয়ে উদ্যোগী হলেন সংস্থার চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। বুধবার দুপুরে মাটিগাড়ার শিলিগুড়ি ডিভিশনে প্রশাসনিক ভবনে বৈঠকের পরে ওই কথা জানিয়েছেন এনবিএসটিসি’র চেয়ারম্যান। সাধারণ পরিষেবার পাশাপাশি পাহাড়, তরাই-ডুয়ার্সের বিভিন্ন পর্যটনস্থলে প্যাকেজ ট্যুর চালু ছাড়াও বিভিন্ন পর্যটনস্থলে বেশি বাস চালানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে বলে গৌতমবাবু জানিয়েছেন। তাঁর কথায়, “সাধারণ পরিষেবার পাশাপাশি পর্যটনের উপরও আমরা জোর দিচ্ছি। এক সময় সংস্থায় কিছু পর্যটন প্যাকেজ ছিল। সেগুলি বন্ধ হয়ে রয়েছে। সমস্ত কিছু নিয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে। তার পরেই এনবিএসটিসি’কে পর্যটনমুখী করা হবে।” এনবিএসটিসি সূত্রের খবর, বছর দেড়েক আগে ‘সবুজের হাতছানি’ নাম পর্যটন প্যাকেজ শুরু হয়। সিকিম, ভুটান, নেপাল ছাড়া দার্জিলিং, লাভা-লোলগাঁও, গরুমারা, জলদাপাড়া, ঝালং-বিন্দু-সহ একাধিক পর্যটন কেন্দ্রকে ঘিরে প্যাকেজ ট্যুর তৈরি করা হয়। পাশাপাশি, সুন্দরবন, শান্তিনিকেতনেরও প্যাকেজ তৈরি করা হয়। শিলিগুড়ি ডিভিশনের পাশাপাশি জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, মালদহ এবং বহরমপুর থেকে পর্যটকদের জন্য ওই ব্যবস্থা শুরু করা হয়। বিলাসবহুল নতুন বাস নামানো, আলাদা বুকিং কাউন্টার তৈরি হয়। প্রতিটি ডিভিশনে মাসে ১৫-১৬ দিন ওই প্যাকেজ ট্যুরের বুকিং হচ্ছিল। মূলত সপ্তাহের শেষে শনিবার, ররিবারকে ঘিরে তৈরি প্যাকেজে সংস্থার ৩০ শতাংশের উপর লাভও হতে শুরু করে। সংস্থার কয়েকজন অফিসার জানান, কয়েকটি সমস্যাকে ঘিরে ওই প্যাকেজ বন্ধ হয়ে যায়। মূলত সংস্থার বিভিন্ন রুটে বাস কম থাকায় পর্যটনের বাসগুলি ব্যবহার করা শুরু করা হয়। তাতে বাসের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। |
এ ছাড়া ওই প্যাকেজে কর্মী নিয়োগ নিয়ে অফিসারেরা সমস্যায় পড়েন। অনেকেই ওই ডিউটি করতে অনিচ্ছা প্রকাশও করেন। তাঁরা ১০টা-৫টার ডিউটিতে স্বচ্ছন্দবোধ করেছিলেন। তার পরে বেসরকারি পরিবহণ সংস্থা এবং ট্যুর অপারেটরেরা নতুন রাজ্য সরকার কাছে তাঁদের ব্যবসা খারাপ হচ্ছে বলে অভিযোগ জানান। তাঁদের অভিযোগ, সরকারি বাসে যাত্রীরা ঠিকঠাক পরিষেবাই পাননি। তার উপরে পর্যটনের ব্যবসা সরকারি পরিবহণ সংস্থা করলে মূল পরিষেবা আরও খারাপ হবে। এর পরে তৎকালীন পরিবহণ মন্ত্রী সুব্রত বক্সি ট্যুরগুলি বন্ধ করার নির্দেশ দেন।গত ২৩ এপ্রিল গৌতমবাবু চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিয়েই ব্যয় কমিয়ে আয় বাড়ানোর উপর জোর দেন। এদিন চেয়ারম্যান বলেন, “সংস্থার অবস্থা খুবই খারাপ। শিলিগুড়িতে আরও সিটিবাস, আন্তঃরাজ্য বাস চালানো দরকার। লাভজনক রুটে আমাদের বেশি বাস চালাতে হবে। পর্যটন শিল্পকেও কাজে লাগাতে হবে। পর্যটন নিয়ে সংস্থার রিপোর্ট নিয়ে পরিবহণ মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে সব ঠিক করা হবে।” তিনি জানান, ইতিমধ্যে ১২টি নতুন বাস নামানো হচ্ছে। পাশাপাশি ২৪০টি পুরানো বাস মেরামত করা হচ্ছে। এই ২৫২টি বাস লাভজনক রুট ছাড়া পর্যটন কেন্দ্রগুলি বেশি করে চালানো হবে। প্রশাসনিক ভবনে গিয়েই চেয়ারম্যান হিসাবে ভাতা, গাড়ি না নেবেন না বলে অফিসারদের জানিয়ে দেন। পাশাপাশি, চেয়ারম্যানের জন্য বরাদ্দ ঘরটি সাজার জন্য কোনও অতিরিক্ত খরচ না করারও ডিভিশনাল ম্যানেজার উত্তর গণকে নির্দেশ দেন। চেয়ারম্যান জানান, গত তিন মাসে শিলিগুড়ি ডিভিশনের প্রায় ২৮ লক্ষ টাকা আয় বেড়েছে। অন্য ডিভিশনগুলির অবস্থা এতটা ভাল নয়। চলতি মাসে সংস্থার আয়ের ‘টাগের্ট’ নেওয়া হয়েছে ৬.৫ কোটি টাকা। পাশাপাশি, প্রতিমাসে ৪ কোটি টাকা লোকসানের পরিমাণ আরও কমাতে হবে। |