আগামী পাঁচ বছরে আশি হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের লক্ষ্যে এ বারে বিদেশি লগ্নির খোঁজে বেরোচ্ছেন মমতা মন্ত্রিসভার শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
পশ্চিমবঙ্গে নতুন সরকারের এক বছর পূর্তির আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে শিল্পের ভাবমূর্তি ফেরাতে উদ্যোগী হয়েছেন। শিল্প অনুকূল আবহও তৈরি করার চেষ্টা করছেন। সেই সূত্র ধরে দ্বাদশ যোজনা কমিশনের সময়সীমার মধ্যে (অর্থাৎ ২০১২-১৩ থেকে ২০১৬-১৭ সাল, এই পাঁচ বছর) সংগঠিত শিল্প ক্ষেত্রে আশি হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। প্রায় তিন লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান করতে চান মুখ্যমন্ত্রী। এই সূত্র ধরে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথম রাজ্যে বিনিয়োগ টানতে বিদেশ সফরে যাচ্ছেন শিল্পমন্ত্রী। ১২ মে থেকে তিন দিনের সিঙ্গাপুর সফরে অনাবাসী ভারতীয় ও বিদেশি লগ্নিকারীদের সামনে বাংলাকে তুলে ধরবেন তিনি। যার নাম রাখা হয়েছে ‘বিউটিফুল বেঙ্গল’।
বণিকসভা সিআইআই ও সিঙ্গাপুর-ইন্ডিয়া চেম্বার অফ কমার্সের উদ্যোগে সেখানে বাণিজ্য সভায় ‘গন্তব্য পশ্চিমবঙ্গ’-কে তুলে ধরাই শিল্পমন্ত্রীর উদ্দেশ্য। সিঙ্গাপুরভিত্তিক বাঙালি শিল্পপতি প্রসূন মুখোপাধ্যায়, অন্ডাল বিমাননগরীর সহযোগী ‘চাঙ্গি’র কর্তারা ছাড়াও বেঙ্গল পিয়ারলেসের জয়ন্ত রায় এবং সেন্ট জেভিয়ার্সের প্রাক্তনীরাও থাকবেন এই সফরে। সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনারও এই ব্যাপারে সক্রিয়। শিল্পমন্ত্রী বলেন, “সময় এসেছে ঘুরে দাঁড়ানোর। বিনিয়োগের অনুকূল যাবতীয় উপাদানই মজুত রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। আন্তর্জাতিক স্তরে বাংলার সেই সম্ভাবনাকে তুলে ধরাই আমাদের উদ্দেশ্য।”
সিআইআই-এর পূর্বাঞ্চল শাখার আঞ্চলিক নির্দেশক সৌগত মুখোপাধ্যায়ের মতে, “শিল্পমন্ত্রীর এই সফরের লক্ষ্যই হল আন্তর্জাতিক মহলের কাছে পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগের সম্ভাবনাকে তুলে ধরা। বিশ্বের অনেক দেশের সঙ্গেই এ ব্যাপারে কথাবার্তা চলছে। সিঙ্গাপুরের ক্ষেত্রে তথ্য-প্রযুক্তি, হার্ডওয়্যার ও উৎপাদন শিল্পের সঙ্গে জড়িত সংস্থাগুলির কাছে বলা হবে পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগে কী কী সুবিধা রয়েছে।” বাংলাদেশ, হংকং, জার্মানি, ফ্রান্সের মতো দেশগুলির সঙ্গেও আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সিঙ্গাপুর সফরে গিয়ে শুধু বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলোচনাই নয়, বিভিন্ন প্রকল্পও ঘুরে দেখবেন শিল্পমন্ত্রী। ‘চাঙ্গি’র বিমানবন্দরটিও দেখবেন তিনি। রাজ্যে শিল্প উন্নয়ন ও পরিকাঠামো বিস্তারের ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দিচ্ছেন পার্থবাবু। বেহালা ফ্লাইং ক্লাব থেকে আসানসোল, হলদিয়া, দুর্গাপুর, কোচবিহারে কপ্টার পরিষেবা দ্রুত শুরুও করতে চান তিনি। মমতা বিরোধী দলনেত্রী থাকার সময় জমি অধিগ্রহণ নিয়ে আন্দোলন করলেও এখন সরকারের এক বছর পূর্তির আগে রাজ্যে শিল্পের আবহ তৈরি করতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী। নির্বাচনী ইস্তাহারের ঊর্ধ্বে উঠে ইনফোসিস যাতে রাজ্য ছেড়ে না যায়, তার জন্য কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মার সঙ্গে কথা বলে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের যাবতীয় সুবিধা সেই সংস্থাকে দিতে উদ্যোগী হয়েছেন তিনি। মৌলবাদীদের বিরোধিতা সত্ত্বেও মার্কিন বিদেশসচিব হিলারি ক্লিন্টনের সঙ্গে বৈঠক করে শিল্পমুখী পরিবেশ তৈরি করার চেষ্টা করছেন। ১৯৫৫ সালের ভূমি সংস্কার আইনেরও সংশোধন করা হয়েছে, যাতে পরিষেবা ও পরিকাঠামো ক্ষেত্রের মতো নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়। |