বনগাঁর মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি একটি স্থায়ী সাংস্কৃতিক মঞ্চ বা রবীন্দ্র ভবনের। অতীতে এই দাবিতে বনগাঁর সাংস্কৃতিক মহল বহুবার সোচ্চার হয়েছে। প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। সভা করা হয়েছে। কিন্তু আজও কোনও মঞ্চ না হওয়ায় বনগাঁবাসী হতাশ। তাঁদের অভিযোগ, নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলির পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় নিয়ম করে। কিন্তু নির্বাচন শেষ হলে প্রতিশ্রতির কথা কেউ মনে রাখেন না।
এ বার ওই দাবিতেই মঙ্গলবার পথে হাঁটলেন শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে শিক্ষক, চিকিৎসক সকলেই। লবনগাঁর ‘জ্যোতিশ্মরম্’ সংস্থার তরফে ওই আয়োজন করা হয়েছিল। ‘রবীন্দ্র ভবন এ দাবি তোমার আমার’ পোস্টারে এই স্লোগান লিখে শহর পরিক্তক্রমা করা হয়। গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করা হয়। |
বহু পথচলতি মানুষ তাতে স্বাক্ষর করেন। স্বাক্ষর করেছেন বনগাঁ দক্ষিণ কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসও। রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন গান, নাচের মাধ্যমে পালন করা হয় রাস্তাতেই।
বনগাঁ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ‘জ্যোতিশ্মরম্’-এর কর্মকর্তা দিলীপ ঘোষ বলেন, “বনগাঁর মানুষ রবীন্দ্রনাথের সঙ্গেই থাকতে চান। বনগাঁ একটা পুরনো শহর। কিন্তু এখানে একটি সাংস্কৃতিক মঞ্চ না থাকাটা দুঃখজনক। আমরা একটি স্থায়ী সাংস্কৃতিক ভবন চাই, যার নাম হবে কবিগুরুর নামে। এ দিন সাধারণ মানুষের কাছ থেকে যে সাড়া মিলেছে, তাতে আমাদের মনে হয়েছে, দাবিটা সব মানুষেরই।’’
পদযাত্রায় সামিল হয়েছিলেন বনগাঁর মহকুমাশাসক অভিজিৎ ভট্টাচার্যও। তিনি বলেন, “বিএডিপি প্রকল্পে বনগাঁয় সাংস্কৃতিক মঞ্চের জন্য জেলাশাসকের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে কাজ শুরু হবে।”
বিধায়ক বলেন, “রাজ্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনে বিধায়ক তহবিলের টাকায় সাংস্কৃতিক মঞ্চ তৈরি করব।” বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান জ্যোৎস্না আঢ্য বলেন, “এলাকায় ললিতমোহন বাণীভবনটি সংস্কার করে আমরা পূর্ণাঙ্গ সাংস্কৃতিক মঞ্চ তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছি। প্রক্রিয়া অনেকটা এগিয়েও গিয়েছে।” |
অশোকনগরে শান্তনু হালদারের তোলা ছবি। |
সাধারণ মানুষের বক্তব্য, বাম আমলে হয়নি। এ বার নতুন সরকারের আমলে এই দাবি বাস্তবে পরিণত হলেই ভাল। কথা সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বনগাঁয় সাংস্কৃতিক কেন্দ্র থাকবে না, এটা মেনে নেওয়া যায় না। এ দিন বনগাঁ শহরের ত্রিকোণ পার্কে রবীন্দ্রমূর্তির পাদদেশে মহকুমা তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর ও বনগাঁ পুরসভার যৌথ উদ্যোগে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করা হয়।
বনগাঁ পুরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের যুব তৃণমূলের পক্ষ থেকে ‘কবি বন্দনা’ পালন করা হয়। ঘাটবাওর বিভূতিভূষণ গভর্নেন্ট, পিটিটিআই কলেজের পক্ষ থেকে সোমবার রাতে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করা হয় নাচ, গানের মাধ্যমে। বনগাঁর কবিতীর্থ চারুকলা মহাবিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠান করা হয়। ভরতনাট্যম পরিবেশন করেন নৃত্যশিল্পী রাহুল মণ্ডল। গোপালনগর বিভূতিভূষণ পাবলিক টাউন লাইব্রেরির তরফে পদযাত্রা বের করা হয়। শশাডাঙা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তরফেও অনুষ্ঠান হয় শোভাযাত্রা বের হয়। বিভিন্ন থানায় রবীন্দ্র মূর্তিতে মাল্যদান করা হয়। হাবরা, অশোকনগর, বাগদা ও গাইঘাটাতেও বিভিন্ন সংস্থা ও তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে রবীন্দ্রজন্মজয়ন্তী উদ্যাপন করা হয়। |