শন আর শেনের দাপটে শেষ পুণের অভিযান
ন আর শেন। পুণেকে খেলেন। অল্প কথায় ম্যাচের ভাবসম্প্রসারণ বলতে এই।
‘করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে’ ম্যাচে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ওয়ারিয়র্সদের একেবারে ‘ওয়ার জোন’-এর বাইরে করে দিলেন দুই অস্ট্রেলীয়। শন টেট। চার ওভারের স্পেলে গলা টিপে ধরলেন পুণে ব্যাটিংয়ের। শেন ওয়াটসন। যে দিন ব্যাট চলে, সহবাগ-গেইল-ওয়ার্নারদের সমগোত্রীয়। একাই ম্যাচ নিয়ে চলে যাওয়ার ক্ষমতাধারী। আজ যেমন। ব্যাট চলল নৃশংস নৈপুণ্যে। মাত্র ৫১ বলে করা ৯০ নট আউটে পুণে প্লে অফের চৌহদ্দির বাইরে আর ফের শেষ চারের লড়াইয়ে রাহুলের রয়্যালস-এর ঢুকে পড়া। পয়েন্ট তালিকায় চার নম্বরে রাজস্থান, এখন চেন্নাইয়েরও উপরে। বন্ধুর সঙ্গে ‘ডুয়েল’-টা হাসতে হাসতে বের করলেন রাহুল। সহারা কর্তারা পরের বারের জন্য নিলামের প্রস্তুতি শুরু করার কথা ভাবতে পারেন কাল থেকে। এ বারের মতো ‘টাটা বাই বাই’ হয়ে গেল নিজেদের মাঠে।
টানা ছয় ম্যাচে হার, পুণে নিয়ে বিশেষ কিছু লেখার নেই। ম্যাচে রঙিন মুহূর্ত বলতে স্টিভ স্মিথের অবিশ্বাস্য ফিল্ডিং (ইডেনে উড়ে গিয়ে ছয় বাঁচিয়েছিলেন, আজ না পারলেও একই ভাবে উড়ে গিয়ে চেষ্টাটা করেছিলেন) আর প্রথম সুযোগ পেয়ে অনুষ্টুপ মজুমদারের ২০ বলে ৩০। বাকিটা সেই থোড়-বড়ি-খাড়া, খাড়া-বড়ি-থোড়। অথচ উৎসাহের কোনও ঘাটতি ছিল না। শহর থেকে গাড়িতে অন্তত এক ঘণ্টার দূরত্বে স্টেডিয়াম, তবু সেই দুপুর দুটো থেকে এঁকেবেঁকে হাইওয়ে ধরে গাড়ির লম্বা লাইন। আর স্টেডিয়াম? টানা হার সত্ত্বেও সারাক্ষণই মাঠ জুড়ে উড়েছে আকাশি-নীল পতাকা। মুম্বই থেকে উড়ে এসেছিলেন বলিউড অভিনেত্রী আমিশা পটেল, ডায়ানা হেডেন। ডিজে বাজিয়ে যাচ্ছিলেন একের পর এক শরীর গরম করে দেওয়া গান। ওয়ারিয়র্স লাউঞ্জে সারাক্ষণ দলবল-সহ বসে শীর্ষ কর্তা অভিজিৎ সরকার। কিন্তু হারাটা যদি টিম অভ্যেস করে ফেলে, কাঁহাতক ধৈর্য রাখা সম্ভব? তার উপর এত একপেশে ম্যাচ। লোকে পয়সা খরচা করে মাঠে আসবে কেন? পরের তিনটে ম্যাচে মাঠ ভর্তি হওয়া নিয়ে সন্দেহ থাকছে। শেষ ওভার পর্যন্ত যাওয়ার বালাই নেই, টানটান উত্তেজনা নেই। ১৭ নম্বর ওভারে ম্যাচ শেষ।
শিকার সৌরভ। শিকারি টেটকে অভিনন্দন দ্রাবিড়ের। ছবি: এএফপি।
পরের তিনটে ম্যাচ অর্থহীন হয়ে গেল আজকের হারে। বাকিগুলো খেলতে হয় বলে খেলা, মাঠে নামতে হয় বলে নামা। প্রতিযোগিতায় অবশ্য এখনও থাকল পুণে। শেষ থেকে এক নম্বর হওয়ার দৌড়ে ডেকান চার্জার্সের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে। শুরুর দুটো ম্যাচ জিতে যারা টুর্নামেন্টের প্রথম সপ্তাহে টগবগিয়ে ছুটেছিল, তারাই কি না প্লে অফের দিন পনেরো আগেই ‘ঘচাং ফু’! আর সৌরভের প্রাক্তন দল শুরুর দুটো ম্যাচ হেরেও এখন ‘অশ্বমেধের ঘোড়া।’ কথায় বলে না, সব ভাল যার শেষ ভাল। ঠিক-ই বলে। শেষটা ভাল হওয়াই আসল। শুরুর ছন্দ ধরে রাখতে না পারলে পৌনে দু’মাসের ম্যারাথন লিগে যা হয়, তাই ঘটল সহারা-শ্রীর টিমে। ‘বে-সহারা’ হয়ে বিদায়।
কেকেআর ম্যাচের পরে সৌরভ টিমের কিছু জুনিয়র ক্রিকেটারের দায়বদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন। একদম ঠিক। ‘কিছু’ বলতে কে কে বুঝতে অসুবিধে হয় না। রবিন উত্থাপ্পা। বছর প্রতি এগারো কোটি টাকা নিয়ে যাচ্ছেন, পারফরম্যান্সের বেলায় লবডঙ্কা। আজও অবদান ১৯ বলে ১৩। রোজই অসংখ্য ডট বল খেলায় ডক্টরেট করে ফেলেছেন, একটাও ম্যাচ জিতিয়েছেন বলে অভিযোগ নেই। এর থেকে অনুষ্টুপকে আগে থেকে খেলালে টিমের লাভ হতে পারত। রাহুল শর্মা নাকি এনসিএ-তে অনিল কুম্বলের কাছে ট্রেনিং নিয়ে নিজেকে রাতারাতি পাল্টে ফেলা বোলার হয়ে উঠেছিলেন। অন্তত আইপিএলের আগে তাই শোনা গিয়েছিল। ম্যাচে ডাহা ফেল। পীযূষ চাওলা বা অমিত মিশ্র ম্যাচ জিতিয়েছেন, রাহুল নন। তাঁর হাবভাব ও আচার আচরণ নিয়ে টিমের অভ্যন্তরে প্রশ্ন। মাইকেল ক্লার্ককে এনেও বিশেষ লাভ হয়নি। বরং গোটা মরসুমে পুণের লাভ বলতে স্টিভ স্মিথ।

সৌরভ
আমাদের শুরুতেই শেন ওয়াটসনকে ফেরাতে হতো। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সেটা পারিনি। এই উইকেটে কী ভাবে ব্যাট করতে হয় ওয়াটসন দেখাল।
আমাদের মেনে নিতে হবে যে আমরা এখন প্লে অফের লড়াইয়ের বাইরে চলে গিয়েছি। বাকি তিনটে ম্যাচে অন্তত ভাল খেলার চেষ্টা করতে হবে।
যে দল নিজেদের ইনিংসে মাত্র পাঁচটা চার আর দুটো ছয় মারে তাদের পক্ষে জেতা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের ব্যাটিংটা একেবারেই ভাল হয়নি।
দ্রাবিড়
আমরা জিতেছি খুব ভাল, কিন্তু টিমকে বলেছি পয়েন্ট টেবিলের দিকে তাকাবে না।
আমাদের বোলাররা আজ নিজেদের কাজটা দারুণ ভাবে করেছে। ওদের মাত্র ১২৫ রানে আটকে রেখেছে। এটাকে বলব ‘ক্লিনিক্যাল’।
এই উইকেটে ব্যাট করা সহজ ছিল না। কিন্তু ওয়াটসনের শক্তি আর টেকনিক থেকে পরিষ্কার হয়ে যায়, এ রকম উইকেটে কী ভাবে বড় শট খেলা সম্ভব।

পুনশ্চ: প্রসঙ্গ সৌরভ। কী পড়ে থাকছে ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম এবং চিরকালীন আইকনের জন্য? তাঁর অভিভাবকত্বে, তাঁর অধিনায়কত্বে টিম ডাহা ফেল। বাকি তিনটে অভাবিত জিতলেও ছবিটা একেবারে পাল্টাবে না। নিজে ব্যাটসম্যান হিসেবে ‘লেটার মার্কস’-এর ধারে-কাছেও নেই। ১৩টা ম্যাচ হয়ে গেল, হাফ সেঞ্চুরি এখনও অধরা। স্ট্রাইকরেট ১০০ থেকে ১১০-এর মধ্যে, যেটা টি-টোয়েন্টির নিরিখে নেহতাই নিম্ন মধ্যবিত্ত। বাকি তিনটে ম্যাচের কোনওটায় দুর্দান্ত কিছু করে ফেললেও এ ছবিটা একটুও বদলাবে না। সেই কোটলার চমকপ্রদ স্পেল ছাড়া বোলিং নিয়েও প্রশংসাসূচক কিছু বলার নেই। ফিল্ডিং আর ফিটনেস কী পর্যায়ে, সবাই দেখতে পাচ্ছে। তা হলে? কেন, এভাবে কেন আর নিজের যোগ্যতায় অর্জিত এতদিনের সম্মান আর ভাবমূর্তি বন্ধক রাখা? আইপিএল না খেললে কী এসে যায় তাঁর, এক এবং অদ্বিতীয় সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের? ছেড়ে দিলেই তো হয়, ‘দাদার কীর্তি’ তো ক্রিকেটীয় অমরত্ব পেয়েই গিয়েছে বহুদিন হল। তবে আর কেন?
পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে থাকা অগণিত ভক্তদের কিন্তু প্রতি ম্যাচে তাঁর মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে কমেন্টেটরের সামনে বাঁধা ধরা প্রশ্নের উত্তর দেওয়া দেখতে ভাল লাগে না। দেখতে ভাল লাগে না প্রিয় নায়কের হেনস্থা।
এতটা যন্ত্রণা দাদাপ্রেমীদের প্রাপ্য ছিল কি?





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.