এক দিকে দেশের আর্থিক ক্ষেত্রে সমস্যা বাড়ার আশঙ্কা। অন্য দিকে ইউরোপে আর্থিক টানাপোড়েন শেষ হওয়ার কোনও ইঙ্গিত খুঁজে না-পাওয়া। দুইয়ের জাঁতাকলে পড়ে মঙ্গলবার এক ধাক্কায় প্রায় ৩৬৭ পয়েন্ট নামল সেনসেক্স। থামল ১৬,৫৪৬.১৮ অঙ্কে। গত প্রায় চার মাসে ন্যূনতম। ডলারের সাপেক্ষে টাকার দামও এ দিন পড়ে ২১ পয়সা। এক ডলার হয় ৫৩.১২/১৩ টাকা।
বস্তুত, টাকার দাম পড়তে থাকায় এমনিতেই চিন্তিত লগ্নিকারীরা। কারণ এর ফলে বাড়ছে আমদানির খরচ। বিশেষত তেল কেনার খরচ। যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে মূল্যবৃদ্ধিতে। এ দিন এর উপর যোগ হয় সুদ কমানো নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ডেপুটি গভর্নর সুবীর গোকর্ন-র এক নেতিবাচক ইঙ্গিত। বর্তমান অবস্থায় দাঁড়িয়ে সুদ কমানোর সম্ভাবনা যথেষ্ট কম বলে মন্তব্য করেন তিনি। বাজার সূত্রের খবর, এর পরই দেশের আর্থিক বৃদ্ধির ভবিষ্যৎ নিয়ে ফের আতঙ্কিত হয়ে পড়েন লগ্নিকারীরা। দ্রুত বেচতে থাকেন শেয়ার। আসলে গত ঋণনীতির পর্যালোচনায় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সুদ কমিয়েছিল ৫০ বেসিস পয়েন্ট। অনেকেই এটাকে কম ঋণের জমানা শুরু হওয়ার ইঙ্গিত বলে আশা করেছিলেন। সেই আশাতেই জল ঢেলেছে গোকর্নের এ দিনের মন্তব্য।
পাশাপাশি, গ্রিসের নির্বাচনী ফলকে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাও ইউরোপে আর্থিক অবস্থাকে আরও জটিল করবে বলে এ দিন আশঙ্কা করেন লগ্নিকারীরা।
বাজারের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশেষজ্ঞরাও নিশ্চিত ভাবে বলতে পারছেন না কিছু। অনেকেই আরও বেশ খানিকটা পতন আশঙ্কা করছেন। এই অবস্থায় বর্ষা কেমন হয় সেই দিকেই তাকিয়ে সকলে। ফিনশোর ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর লক্ষ্মণ শ্রীনিবাসন বলেন, “আর্থিক ক্ষেত্রে উন্নতির সম্ভাবনা তেমন চোখে না পড়লেও, ভাল বর্ষা বাজারের হাল কিছুটা ফেরাতে পারে আশা করছি।” বিশেষজ্ঞ অজিত দে-রও মত, “দেশে এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক ক্ষেত্রে উন্নতির সম্ভাবনা চোখে পড়ছে না। ফলে চূড়ান্ত অনিশ্চিত শেয়ার বাজার।”
অন্য দিকে, সোমবার বিদেশি লগ্নিকারীদের কর ফাঁকি রোখার আইন, জেনারেল অ্যান্টি অ্যাভয়ডেন্স রুলস চালুর সময় অর্থমন্ত্রী এক বছর পিছিয়ে দেওয়ায় প্রাথমিক ভাবে খুশি হয়েছিল বাজার। কিন্তু এর বিরূপ প্রভাবও সূচকের উপর পড়তে পারে বলে মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞদের একাংশ। কারণ বাজেটে অর্থমন্ত্রীর ঘোষণা ছিল, এই আইন আনলে যারা মরিশাসে কর দিয়েছে দাবি করে সার্টিফিকেট দাখিল করবে, তাদের দাবির সত্যতা খতিয়ে দেখা হবে। ফলে যারা শুধু কর ফাঁকি দিতে ওই সার্টিফিকেট জোগাড় করবে, তারা সমস্যায় পড়বে। বাজার সূত্রে খবর, আইনটি চালুর সময় পেছানোয়, এত দিন যে সব লগ্নিকারী সংস্থা ওই ভাবে কর ফাঁকি দিয়ে ভারতে লগ্নি করত, তারা এ বার শেয়ার বেচে লগ্নি তুলে নিয়ে দেশ থেকে পাততাড়ি গুটোতে শুরু করবে। |