দলীয় কর্মীকে খুন, পুলিশকে লক্ষ করে বোমা ছোড়া-সহ একাধিক ঘটনায় অভিযুক্ত এক তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করল কেতুগ্রাম থানার পুলিশ। সোমবার রাতে কেতুগ্রামের কান্দরা থেকে জটাই বৈরাগ্য নামে ওই ব্যক্তিকে ধরা হয়। মঙ্গলবার কাটোয়া আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁকে তিন দিন পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
২০১১-এর ১৪ জানুয়ারি তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে নিহত হন কেতুগ্রাম ১ ব্লকের শ্রীপুর গ্রামের বাসিন্দা সুকুর মোল্লা। সুকুরের পরিবারের পক্ষ থেকে কেতুগ্রাম থানায় মোট ২২ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়। তার মধ্যে অন্যতম অভিযুক্ত ছিলেন জটাই। অভিযুক্তের তালিকায় নাম ছিল তৃণমূলের ব্লক কার্যকরী সভাপতি হারা শেখেরও। তাঁদের ধরতে কাটোয়ার তৎকালীন এসডিপিও জ্যোতির্ময় রায়ের নেতৃত্বে এক বিশাল পুলিশ বাহিনী কান্দরায় গেলে বাধার মুখে পড়ে। পুলিশকে লক্ষ করে বোমা ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। বোমার আঘাতে ছয় পুলিশকর্মী জখম হন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কোমরপুর গ্রামে সিপিএমের দলীয় কার্যালয় দখলের চেষ্টা-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক গোলমাল বাধানোর অভিযোগ রয়েছে জটাইয়ের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি কেতুগ্রামের কেচুটিয়া গ্রামের কাছে খুন হন কেতুগ্রাম ১ ব্লকের সাধারণ সম্পাদক কৃপাসিন্ধু সাহাকে খুনের অভিযোগ ওঠে হারা শেখ-সহ তিন জনের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তদের ধরার দাবিতে পুলিশ-প্রশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামে কৃপাসিন্ধু সাহার অনুগামীরা। তার নেতৃত্বে ছিলেন জটাই বৈরাগ্য-ই।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, জটাই বৈরাগ্যের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ থাকলেও পুলিশ তাঁকে ধরার চেষ্টাই করেনি। বরং পুলিশের সঙ্গে ওই কর্মীর ‘ভাল’ সর্ম্পক ছিল। তৃণমূল সূত্রে খবর, কৃপাসিন্ধু সাহা খুনে অভিযুক্তদের ধরার দাবিতে কয়েক সপ্তাহ আগে কান্দরা বন্ধ হয়। সে দিন পুলিশের উদ্দেশে ওই তৃণমূল কর্মী গালিগালাজ করেন বলে অভিযোগ। গত সপ্তাহে বীরভূমের বোলপুরে নানুর, কেতুগ্রাম, লাভপুর ও মঙ্গলকোটের পুলিশকর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেন বোলপুরের মহকুমাশাসক ও এসডিপিও। ঠিক হয়, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি রয়েছে এমন সব অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে হবে।
তৃণমূল কেতুগ্রাম১ ব্লক সভাপতি রত্নাকর দে-র কথায়, “জটাই আমাদের খুব ভাল কর্মী। অভিযোগ থাকলেও ও প্রকাশ্যেই ঘুরত। এত দিন কেন ওকে গ্রেফতার করা হয়নি, তা পুলিশই বলতে পারে।” তবে সিপিএমের ভাগীরথী-অজয় জোনাল কমিটির সদস্য তপন কাজির ধারণা, “কৃপাসিন্ধু সাহার খুনিদের ধরার জন জটাই আন্দোলন করছিল। ওই আন্দোলনে রাশ টানতে তৃণমূল নেতাদের একাংশের মদতে ওকে ধরল পুলিশ।”
যদিও বর্ধমানের পুলিশ সুপার সৈয়দ হোসেন মির্জার দাবি, “পুলিশ জটাই বৈরাগ্যকে সঠিক সময়েই গ্রেফতার করেছে।” |