দিনের শেষে নায়ক সেই শাহরুখ
পুণে ওয়ারিয়র্স তখন ধীরে ধীরে ম্যাচে ফিরছে। সহারা বক্সে তখন ফুরফুরে মেজাজে সুব্রত রায়ের স্ত্রী স্বপ্না রায় থেকে সহরার বড়কর্তা অভিজিৎ সরকার। ঘন ঘন স্যান্ডউইচ, আইসক্রিমের অর্ডার যাচ্ছে। ও দিকে নাইটদের বক্সে চাপা টেনসন। সবাই গম্ভীর।
আর তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি গম্ভীর মানুষটা হলেন স্বয়ং কেকেআর-এর মালিক।
তখন একের পর এক নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে মধ্যিখানের বাইশ গজে। আর তার সঙ্গে পালটে যাচ্ছে কেকেআর মালিকের মুড।
এতক্ষণ সানগ্লাস পরে ছিলেন শাহরুখ খান। দাদা বিশাল ছক্কাটা হাঁকানোর সঙ্গে সঙ্গে সানগ্লাস খুলে ফেললেন। এবং এতটাই স্থির হয়ে দাঁড়ালেন যে মনে হচ্ছিল তিনি যেন মাদাম তুসোর মিউজিয়ামে তাঁর মোমের প্রতিমূর্তি হয়ে গেছেন। স্থির এবং ভাবলেশহীন।
তার পরের বলে দাদা এক রান নিলেন। এসআরকে একবার হাততালি দিলেন।
এর পর এল অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের তিন বলে তিনটে ছক্কা। এসআরকে এ বার মাথা নাড়াচ্ছেন। মুখ থমথমে।
আর তার পর এল ম্যাচ শেষের সেই মুহূর্ত। এতক্ষণ চেপে রাখা সব অনুভূতির বাঁধ ভেঙে দিলেন শাহরুখ খান। হাত মুঠো করে ওপরে তোলা। চেঁচিয়ে যাচ্ছেন, “ইয়েস! ইয়েস”। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল শনিবারের মহারণ জিততে কতটা মরিয়া ছিলেন ডন।
ম্যাচ শেষে মেজাজ যেমন। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস
ম্যাচের শেষে এসআরকে আর দাদা ইডেন প্রদক্ষিণ করলেন একসঙ্গে। কিন্তু সেটা হল নেহাতই ওপরের ঢাকনা। তখনও শাহরুখের চোখমুখ উত্তেজনায় চকচক করছে। যেন একটু আগে শেষ হয়ে যাওয়া ম্যাচটার তীব্রতা থেকে কিছুতেই বেরোতে পারছেন না।
আসল ম্যাচ শেষ হওয়ার পর আরেকটা ম্যাচও তো হল। সেখানে কেকেআর-এর অধিনায়ক হলেন শাহরুখ আর পুণে ওয়ারিয়র্সের অধিনায়ক হলেন সুশান্ত রায়। সহারার মালিককে শাহরুখ তো বলেই দিলেন, “আপনারা কিন্তু খুব কাছে এসে ম্যাচগুলো হেরে যাচ্ছেন। আমি আশা করব আপনাদের টিম আবার ঘুরে দাঁড়াক, শেষ চারে যাক।” সে ম্যাচে অবশ্য শাহরুখরা ২২ রানে হারলেন। ওই ম্যাচে শাহরুখ, প্রসেনজিৎ ও পরমব্রত ব্যাটও করলেন।
তবে শনিবারের কেকেআর বনাম পুণে ওয়ারিয়ার্স মহাম্যাচের থেকে অদ্ভুত কিছু বোধহয় ইডেন কস্মিনকালেও দেখেনি।
এমন একটা ম্যাচ যেখানে হোম টিম কেকেআর-এর অধিনায়ক গৌতম গম্ভীর ৫০ করার পর পুরো ইডেনের ডেসিবেল মাত্রা এতটা হয়ে যায়, যে চিৎকারটা এসপ্ল্যানেড থেকে শোনা যায়। তার কিছুক্ষণ পর পুণের অধিনায়ক, ঘরের ছেলে, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যখন একটা উঁচু ক্যাচ তালুবন্দি করেন, তখনও ইডেন জুড়ে চিৎকারের ডেসিবেল পৌঁছে যায় সেই একই মাত্রায়। শরিবারের বারবেলার ইডেনকে বোঝাতে একটাই বিশেষণ প্রয়োগ করা যায়-- ক্রিকেটীয় ম্যাজিক-রিয়্যালিজম। ৬৫ হাজার দর্শকের প্রায় সবার হাতেই দুটো করে ফ্ল্যাগ। একটা কেকেআর-এর, একটা পুণের। প্রত্যেক বলে ইডেনের গ্যালারির রং পালটাচ্ছে। কখনও কেকেআর-এর বেগুনি। কখনও পুণে ওয়ারিয়র্সের সমুদ্রনীল।
ইডেনের এই অদ্ভুত আচরণে আইপিএল চেয়ারম্যান রাজীব শুক্লও হতভম্ভ। ইডেনে এসেছিলেন। সব দেখেশুনে তাঁর মন্তব্য, “কোনও ক্রিকেট ম্যাচে এ রকম কিছু কখনও দেখিনি। কয়েক মিনিটের ফারাকে ইডেন গলা ফাটাচ্ছে একইসঙ্গে গম্ভীর আর দাদার জন্য। এ অভিজ্ঞতা কখনও ভুলব না।”
রাজীব শুক্ল একা নন। শনিবার দুপুরে ইডেনে যিনিই ঢুকেছেন, তাঁরই মনে হয়েছে পুরো চত্বরটা যেন উত্তেজনায় তিরতির করে কাঁপছে। এমনিতে তো মাঠে তারার মেলা। প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, যিশু সেনগুপ্ত, রুদ্রনীল ঘোষ, গার্গী রায়চৌধুরী, জুন, রাজ চক্রবর্তী, রিমঝিম মিত্র, লকেট চট্টোপাধ্যায়, অগ্নিমিত্রা পাল, কাঞ্চন মল্লিক, রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়, কনীনিকা, কাঞ্চনা, সম্পূর্ণাসবাই প্রথম বলটা হওয়ার আগে থেকেই দারুণ উত্তেজিত।
শুধু টালিগঞ্জই তো নয়। রাজনীতিকরাও তো ছিলেন ইডেনে। আবাসন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ববি হাকিম থেকে মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, প্রথম বল থেকে রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনায় কাটিয়েছেন সবাই। এবং যে মুহূর্তে পুণে ওয়ারিয়র্স হারল, সেই মুহূর্তে অরূপ বিশ্বাস মাঠ থেকেই ফোন করলেন। বললেন, “দিদি, আমরা জিতে গেছি। ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর জিতে গেছে।”
ম্যাচটা যে আইপিএল-৫-এর সবচেয়ে বড় বাজি, সে ব্যাপারটা অবশ্য সকালবেলাই বোঝা যাচ্ছিল। টিম হোটেলেই। এমনিতে বাইপাসের ধারের পাঁচতারাটি অন্যান্য দিন থাকে চুপচাপ। আজকের আবহাওয়াটা একেবারে আলাদা। অটোগ্রাফ প্রার্থীরা তো আছেনই, সঙ্গে যোগ হয়েছিল কট্টর ‘দাদা’ ভক্তদের ভিড়। দুপুর একটা নাগাদ দেখা গেল সৌরভের কন্যা সানাকে হোটেলে ঢুকতে। ঢুকেই অবশ্য ভেতরে চলে গেল মেয়ে।
তবে ম্যাচের সবচেয়ে গভীর মুহূর্তটা বোধহয় ম্যাচ শেষ হওয়ার একটু আগে তৈরি হল।
সৌরভ তার একটু আগে আউট হয়ে ডাগ আউটে ফিরেছেন। আর সারা ইডেন জুড়ে বাজছে, ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চল রে।’ অমিতাভ বচ্চনের গলায়।
কিন্তু প্রতিযোগিতামূলক খেলায় বোধহয় সূক্ষ্ম অনুভূতির কোনও স্থান নেই।
দাদা বনাম খানের মহাযুদ্ধে শনিবারের পর বোধহয় আর ‘পিকচার বাকি নেই’। এই সিনেমা বোধহয় ইডেনেই শেষ হল।
জিতল একজন নায়কই।
শনিবার যাঁর নাম ছিল শাহরুখ খান।

জিতল দ্রাবিড়ের রাজস্থান
রাহুল দ্রাবিড়ের ৩৯ বলে ৪৬ রানের দৌলতে কিংস ইলেভেন পঞ্জাবকে ৪৩ রানে হারাল রাজস্থান রয়্যালস। টানা হারের রেশ কাটিয়ে ১১ ম্যাচে ১০ পয়েন্ট নিয়ে দ্রাবিড়রা এখন আইপিএল টেবলে পাঁচ নম্বরে। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ২০ ওভারে ১৭৭-৬ তোলে রাজস্থান। দ্রাবিড় ছাড়া রান পেয়েছেন শেন ওয়াটসন (১৭ বলে ৩৬), অশোক মেনারিয়া (২৭ বলে ৩৪) এবং ব্র্যাড হজ (২৩ বলে ৩৬)। রায়ান হ্যারিস চার উইকেট নিলেও রাজস্থানের রানের গতি আটকাতে পারেনি পঞ্জাব। রান তাড়া করতে নেমে ওপেনার শন মার্শ (২৭ বলে ৩৪) ছাড়া ব্যর্থ বাকিরা।




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.