বিনোদন বদলাচ্ছে দর্শকমন, ঝুঁকির
রাস্তায় হেঁটেই হিট ‘ভিকি’

হিট-এর সংজ্ঞাটা বোধহয় বদলেই দিচ্ছে বলিউড। কেমন গল্প দর্শক পছন্দ করেন, তার চলতি ছকটা ক্রমাগত যে ভাবে ভেঙে যাচ্ছে, তাতে ইন্ডাস্ট্রির লোকজনকেও বিষয়টা ভাবিয়ে তুলছে। ইদানীং কালের পরপর তিনটি ছবির দিকে তাকিয়েই তাঁরা এমনটা মনে করছেন।
কোন তিনটি ছবি? পান সিংহ তোমর, কহানি এবং ভিকি ডোনর। সেনাবাহিনীর সুবেদার হয়ে উঠল ডাকাত, স্বামীকে খুঁজতে লন্ডন থেকে কলকাতা চলে এলেন এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলা ‘পান সিংহ...’ এবং ‘কহানি’র গল্প কোনও ভাবে ফর্মুলার দিকে যায়নি। আর এই মুহূর্তে রমরম করে চলছে ‘ভিকি ডোনর’, যার বিষয় স্পার্ম ডোনেশন বা শুক্রাণু দান।
এই রকম ঝুঁকিপূর্ণ ভিন-গোত্রীয় কাহিনি নিয়ে বাণিজ্যসফল ছবি করার কথা কিছু দিন আগে অবধিও ভাবা যেত না। কিন্তু এখন এই সব ছবিই দর্শক আনুকূল্য পাচ্ছে। প্রচলিত ছকের বাইরে গিয়ে ছবি করতে শুরু করা পরিচালকদের মধ্যে অগ্রগণ্য মধুর ভাণ্ডারকর বলছেন, “নতুন ধরনের ছবিকে স্বাগত জানিয়ে দর্শকরা এখন আমাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছেন। বুদ্ধিদীপ্ত কাহিনি যদি যথেষ্ট বিনোদনের সঙ্গে উপহার দেওয়া যায়, দর্শক গ্রহণ করছেন। ‘ভিকি ডোনর’ তারই উদাহরণ।”
বলিউড আরও বিস্মিত যে, ছবিটা সব বয়সের দর্শকই দেখছেন। যেমন কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আকাশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “খুবই ঝুঁকিপূর্ণ, প্রায় নিষিদ্ধ বিষয় নিয়ে ছবি। কিন্তু যথেষ্ট বিনোদন আছে, একঘেয়ে তথ্যচিত্রের মতো নয়।” তেমনই ক্লাস নাইনে পড়া ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে ছবিটা দেখে এসেছেন চন্দ্রাণী গুপ্ত। তাঁর কথায়, “আজকের বাচ্চারা অনেক পরিণত। আমি সচেতন ভাবেই চাইছিলাম, আমার ছেলে ছবিটা দেখুক।” নানা রকম স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে বাণিজ্যিক ছবির এই ধারা সামাজিক ভাবে কতটা উপযোগী? সমাজতত্ত্ববিদ অভিজিৎ মিত্র বললেন, “যদি গর্ভ ভাড়া দেওয়ার বিষয়টা মেনে নেওয়া যায়, তাহলে শুক্রাণু দানও মানা উচিত। এর সঙ্গে লিঙ্গসাম্যের দিকটাও জড়িত। ছবিতে এই দিকগুলো উঠে এলে তো ভালই!’’
দর্শকের পছন্দ-অপছন্দে এই পরিবর্তনটা গত পাঁচ-ছয় বছর ধরেই ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হচ্ছিল। চাঁদনি বার, পেজ থ্রি, রং দে বসন্তী, তারে জমিন পর, চক দে ইন্ডিয়া, পিপলি লাইভ, থ্রি ইডিয়টস, উড়ান, আই অ্যাম, স্ট্যানলি কা ডাব্বা, চিল্লার পার্টি...এমন বেশ কিছু ছবি সামাজিক বিষয়কে সফল ভাবে পর্দায় তুলে ধরেছে। চলচ্চিত্রের ইতিহাসবিদ অবিনাশ মন্ত্রীর মতে, এই জাতীয় ছবি গত কয়েক বছর ধরেই হচ্ছিল। কিন্তু বেশ কিছু দিন পরে এক-একটা করে ছবি আসত। এখন এই জাতীয় ছবি পরপর রিলিজ করছে। সেটাই একটা বড় তফাৎ গড়ে দিচ্ছে। ‘থ্রি ইডিয়টস’-ই কিন্তু এখনও অবধি হিন্দি ছবিতে সবচেয়ে বড় হিটের রেকর্ড করেছে। সেটা কী করে সম্ভব হল? চলচ্চিত্র বিশ্লেষক আমোদ মেহরার মতে, “তার কারণ, আমির খান-রাজকুমার হিরানি জুটি কেউ সিরিয়াস কথা বলতে গিয়ে জ্ঞানদাতার ভূমিকা নিয়ে ফেলেননি। ভরপুর বিনোদনের মধ্যেই সামাজিক বার্তাটা সূক্ষ্ম ভাবে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল।”
‘ভিকি ডোনর’-ও সেটাই করেছে। সাড়ে চার কোটি টাকা বাজেটের ছবির ঝুলিতে এখনই ২৮ কোটির বেশি জমা পড়েছে। হিসেব বলছে, অঙ্কটা ৫৫ কোটিতে পৌঁছবে। পরিচালক সুজিৎ সরকার বলছেন, “আমরা দর্শককে বোঝাতে চাইছিলাম, শুক্রদানের বিষয়টা রক্তদানের মতোই সহজ, স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু একটু এদিক ওদিক হলেই ছবিটা ‘ভালগার’ হয়ে যেতে পারত।” এর আগে ওনিরের ‘আই অ্যাম’ এবং বাংলায় কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘ল্যাপটপ’ ছবিতেও বিষয়টা এসেছিল। কিন্তু সেটা ছিল গল্পের একটা অংশ। ‘ভিকি ডোনর’-এ স্পার্ম ডোনেশনই কেন্দ্রীয় বিষয়। এবং ছবির প্রতিক্রিয়া এতই তীব্র যে বিভিন্ন চিকিৎসক এই নিয়ে ফোন পেতে শুরু করেছেন।
মুম্বইয়ে একটি ক্লিনিক চালান চিকিৎসক অনিরুদ্ধ মালপানি। তিনি বলছেন, “সারা দেশ থেকে আমাদের কাছে ফোন আর মেল আসছে। অনেকেই বলছেন, তাঁরা শুক্রাণু দানে আগ্রহী। কিন্তু কোথায় যোগাযোগ করতে হবে জানেন না। সমাজের কাছে অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে ছবিটা অনেকখানি সচেতনতা তৈরি করতে পেরেছে।” কলকাতাতেও ৩১টি হল-এ এই ছবির প্রায় ৯০ শতাংশ আসন ভর্তি। আইনক্স-এর পঙ্কজ লাডিয়া বলছেন, পরিবারের সকলে মিলেই ছবি দেখতে আসছেন। কলকাতার বিশিষ্ট চিকিৎসক অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “৫০ শতাংশ দাম্পত্যেই সন্তানহীনতার জন্য পুরুষের বন্ধ্যত্ব দায়ী। ‘ল্যাপটপ’ বা ‘ভিকি ডোনর’-এর মতো ছবি যদি এই নিয়ে কথা বলে, সেটা খুবই ভাল। ‘থ্রি ইডিয়টস’ দেখার পরে অনেকেই চাইতেন, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বাচ্চার জন্ম দিতে অথবা ওই ছবিতে যেমন দেখানো হয়েছে তেমনই ভ্যাকুয়াম এক্সট্র্যাকশন পদ্ধতির সাহায্য নিতে।” অভিনিবেশ চান, ‘ভিকি ডোনর’ দেখে দর্শক বুঝুন যে, রক্তদানের মতোই সহজ ব্যাপার শুক্রদান।
তার মানে অমিতাভ বচ্চন থেকে শাবানা আজমি থেকে সালিম খান যে ‘ভিকি ডোনর’ নিয়ে উচ্ছ্বসিত, সেই ছবি কী প্রমাণ করছে? এই বছরটাতে কি বলিউডে তবে ছবির বিষয়বস্তুই আসল নায়ক হতে চলেছে? ইন্ডাস্ট্রির সূত্রে বলা হচ্ছে, বিষয়বস্তু বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু এ বছরে দেখা যাচ্ছে, স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে ছবি করেও দর্শক টানা যাচ্ছে। তফাৎ এটাই। সুজিৎ নিজে এর আগে ‘ইয়াহাঁ’ ছবিটি পরিচালনা করেছিলেন। বাংলা ছবি ‘অপরাজিতা তুমি’-র প্রযোজকও তিনি। অমিতাভ বচ্চনকে নিয়ে তাঁর ‘শু্যবাইট’ মুক্তির অপেক্ষায়। তার আগেই জন আব্রাহাম প্রযোজিত ‘ভিকি ডোনর’ করে তিনি শিরোনামে। সুজিৎ বললেন, “দাবাং, রেডি, বডিগার্ড, গোলমালের মতো ছবি ১০০ কোটির উপরে ব্যবসা করেছে। এ বছর হাউসউফুল ২, অগ্নিপথ ১০০ কোটি ছাড়িয়েছে। তার মানে বড় বাজেটের বাণিজ্যিক ছবি থাকবেই। কিন্তু তার পাশাপাশি খেলার নিয়মগুলোকে বদলে দিতে থাকবে ‘পান সিংহ তোমর’, ‘কহানি’ বা ‘ভিকি ডোনর’-এর মতো ছবি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.