পাবলো পিকাসোকে হারিয়ে দিলেন এডভার্ড ম্যুন্খ।
আজ সদবি নিউ ইয়র্কের এক নিলামে উনিশ শতকের এই শিল্পীর ‘দ্য স্ক্রিম’ ছবিটি ১১.৯ কোটি ডলারে বিক্রি হয়েছে। ভারতীয় অঙ্কে যার মূল্য ৬০০ কোটি টাকা। ছবিটি কে কিনেছেন, তা প্রকাশ করেননি সদবি কর্তৃপক্ষ। তবে জানা গিয়েছে, ক্রেতা সশরীরের নিলামে উপস্থিত ছিলেন না। দর হেঁকেছিলেন টেলিফোনের মাধ্যমে।
এত দিন পিকাসোর আঁকা ‘ন্যুড, গ্রিন লিভ্স অ্যান্ড বাস্ট’ ছিল সব থেকে বেশি দামে বিক্রি হওয়া ছবি। ২০১০ সালে ক্রিস্টির নিলামে সেটি বিক্রি হয় সাড়ে দশ কোটি ডলারে।
আজ সেই রেকর্ড ভেঙে দিল নরওয়ের এক্সপ্রেশনিস্ট ধারার শিল্পী ম্যুন্খের ১৮৯৫ সালে আঁকা ‘দ্য স্ক্রিম’। নিলামের জন্য তৈরি বিশেষ পুস্তিকায় ছবিটির প্রাথমিক মূল্য ৪ কোটি ডলার ধার্য করা হয়েছিল। শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছিলেন, ৮ কোটি ডলার পর্যন্ত উঠতে পারে ছবিটির দাম। সেই অঙ্ক শেষ পর্যন্ত ১১৯,৯২২,৫০০ ডলার ছুঁয়ে ফেলে।
কেন এত বিখ্যাত ছবিটি? শিল্পী যোগেন চৌধুরীর কথায়, “এই ছবিটি এক্সপ্রেশনিস্ট শিল্পধারার, যাকে বলে, ‘আইকন’। ছবিটি বিশ্বখ্যাত শুধু নয়, সুবিদিতও।” এত দিন ছবিটির মালিক ছিলেন নরওয়ের শিল্পপতি পেটার ওলসেন। তাঁর বাবা ছিলেন ম্যুন্খের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক। সদবি সূত্রে খবর, শুরুতে দর হাঁকতে শুরু করেন সাত জন। তাঁদের বেশির ভাগই মার্কিন ও চিনা ধনকুবের। দাম যখন দশ কোটি ডলারে পৌঁছয়, ঘরে তখন সুচ পড়লেও শোনা যাবে। শেষ পর্যন্ত যে দু’জন দরাদরি চালান, তাঁরা দু’জনেই ছিলেন টেলিফোনে। ১২ মিনিটের নিলামে সদবির ভাইস প্রেসিডেন্টকে ফোন
করে শেষ পর্যন্ত ছবিটি কিনে ফেলেন অজ্ঞাতপরিচয় ক্রেতা। |
১৮৯৩ থেকে ১৯১০-এর মধ্যে একই বিষয়বস্তু অবলম্বনে, একই নামে চারটে ছবি এঁকেছিলেন ম্যুন্খ। গাল তোবড়ানো টাকমাথা একটা মানুষ, গায়ে নীল শার্ট। দু’হাতে নিজের কান চেপে চিৎকার করছে। পিছনে দু’টি মানুষের অস্পষ্ট অবয়ব। ঘটনাস্থল অসলোর রেলিং ঘেরা পাহাড়ি সমুদ্রসৈকত, সময় সূর্যাস্ত। ছবিগুলির প্রধান রং উজ্জ্বল নীল ও লাল। ম্যুন্খের আঁকা দু’টি ‘স্ক্রিম’ অসলো’র ন্যাশনাল গ্যালারি এবং তৃতীয়টি অসলোর ‘ম্যুন্খ জাদুঘর’-এ রয়েছে। সদবির এক শিল্প সমালোচকের কথায়, “আজকের নিলামে ওঠা ছবিটি প্যাস্টেলে আঁকা এবং চারটি ‘স্ক্রিম’-এর মধ্যে সব থেকে বর্ণময়।”
ছবিটির ফ্রেম ম্যুন্খ নিজেই রং করে সেখানে ছবিটির প্রসঙ্গে একটি কবিতা লিখে রেখেছিলেন। “দু’জন বন্ধুর সঙ্গে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলাম। তখন সূর্য অস্ত যাচ্ছে। হঠাৎ আকাশ রক্ত-লাল। আমি ক্লান্ত হয়ে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে পড়েছি, কেমন যেন একটা দুশ্চিন্তা আমাকে আচ্ছন্ন করে ফেলল। মনে হল, প্রকৃতির মধ্যে দিয়ে একটা অন্তহীন চিৎকার বয়ে চলেছে।” প্রথমে তিনি ছবিটির নাম দেন ‘দ্য স্ক্রিম অফ নেচার’। লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির ‘মোনালিসা’র মতোই তার খ্যাতি আকাশচুম্বী। ছবি চারটি গত এক শতকেরও বেশি সময় ধরে ‘আধুনিক’ যন্ত্রণার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে বহু বার, বহু
জায়গায়। গ্যালারির দেওয়াল থেকে ছবির সেই তোবড়ানো মুখ ছড়িয়ে পড়েছে আধুনিক মননের বিভিন্ন প্রান্তে। ব্যবহার হয়েছে হরর ফিল্মের মুখোশ থেকে শুরু করে দৈনন্দিনের কফি
কাপ ও টি-শার্টে।
আন্তর্জাতিক বাজারে এত বিপুল অঙ্কে ছবি নিলাম হচ্ছে। কিন্তু ভারতীয় ছবির বাজার? যোগেন চৌধুরীর মতে, “ভারতীয় শিল্পের ক্ষেত্রে এই অঙ্কের ধারে কাছে না হোক, অন্তত বিশ্বের বিভিন্ন নিলামে আরও কিছুটা বেশি অর্থমূল্য উঠতে পারে কি না, এই প্রশ্ন অনেকেই করেন। ভারতীয় অর্থনীতি দুনিয়াতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা না পর্যন্ত সেটা হওয়া সম্ভব নয় বলেই মনে করি। চিনা শিল্পকলাকে খাটো করছি না, কিন্তু আজ বিশ্ববাজারে চিনা শিল্পের কদরের সঙ্গে চিনা অর্থনীতির রমরমার একটা সম্পর্ক আছে।” আর এক শিল্পী চিন্তন উপাধ্যায়ের কথায়, “নিলামের হাতুড়ি আজ যা বলছে, কুড়ি বছর পরে, অন্য রকম কিছু হতেই পারে। সেটাই স্বাভাবিক। আর, শিল্পকাজটা কোথায় থাকল, কত লোকে সেটা দেখল, সেটাও তো এক ধরনের মূল্য, তাই না? মোনালিসা যেমন...কত মানুষ সেটা দেখছেন।”
‘দ্য স্ক্রিম’-এর নতুন মালিক অজানা। তাই এখনই জানা যাচ্ছে না, ছবিটির নতুন ঠিকানা। আপাতত জনসাধারণের চোখের আড়ালেই থাকছে আধুনিক মানুষের জীবনযন্ত্রণার
শৈল্পিক অভিব্যক্তি।
|
বিরল হুইস্কির ‘অবদানে’ গড়ে উঠবে স্কুল
সংবাদসংস্থা • লন্ডন |
৫৫ বছর পুরনো বিরল গ্লেনফিডিশ হুইস্কির একটি বোতল ৩৫ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয়েছে লন্ডনে। উত্তরাখণ্ডে প্রতিবন্ধী শিশুদের স্কুল গড়তে ওই অর্থ তুলে দেওয়া হয়েছে এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার হাতে। যব থেকে তৈরি করা হয় ‘সিঙ্গল মল্ট’ হুইস্কি। সেই কাজে ব্যবহার করা হয় নির্দিষ্ট ধরনের পরিশোধনাগার। গ্লেনফিডিশ হুইস্কির ক্ষেত্রে সেই পরিশোধনাগারটি তৈরি করেছিলেন উইলিয়াম গ্র্যান্ট। তাঁরই নাতনি, জ্যানেট শিড রবার্টসের নামে নামকরণ করা হয়েছে এই হুইস্কির। ২০১২ সালের ৬ এপ্রিল মারা গিয়েছেন তিনি। তাঁর স্মৃতিতে গ্লেনফিডিশের ১১টি বোতল নিলাম করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নিলাম থেকে পাওয়া অর্থ ব্যবহার করা হবে বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজে। ব্রিটেনের বিভিন্ন বিমানবন্দরে দোকান রয়েছে এমন একটি সংস্থা কিনেছে সেই ১১টি বোতলের মধ্যে প্রথম বোতলটি। বিরল এই হুইস্কি হাতে পেয়ে তারা আনন্দিত। পাশাপাশি ভারতে স্কুল গড়ার অর্থ হাতে পেয়ে উচ্ছসিত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাটিও। |