মঙ্গলবার ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হল উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায়। দক্ষিণ দিনাজপুরের কুমারগ্রামের ব্লকের সাফানগর এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। হঘ্রামপুরের বাঁশুরিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাফানগরে মাটির বাড়ি চাপা পড়ে মৃত্যু হয় এক যুবকের। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম বৈদ্যনাথ টুডু (২৯)। জখম ৬ জন। শতাধিক কাঁচা ও পাকিবাড়ি ক্ষতিদ্রস্ত হয়। প্রচুর গাছ ঝড়ে ভেঙে যায়। ক্ষতি হয় ফসলের। ক্ষতি হয় উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ, গোয়ালপোখর, ইসলামপুর, শিলিগুড়ির খড়িবাড়ি, বিধাননগর, ফালাকাটার মুজনাইয়ে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলিতে ত্রাণ বিলির কাজ শুরু হয়েছে। ওই দিন নাগরাকাটার শুল্কাপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কিছু জায়গা ঘুরে দেখেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। সম্প্রতি ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ওই এলাকায় প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। অবিলম্বে বাসিন্দারা যাতে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে পারেন তার জন্যে ব্যবস্থার নির্দেশও দেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। বুধবার এলাকা পরিদর্শনে আসেন জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের সভাধিপতি দীপ্তি দত্ত। ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যের প্রতিশ্রুতিও দেন তিনি। ঝড়ে উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ ব্লকের রাধিকাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় শতাধিক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ঘটনায় প্রায় ১৫০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ধান, পাট ও ভূট্টা চাষেরও ক্ষতি হয়েছে। বুধবার দুপুরে দুর্গতদের মধ্যে ত্রিপল, ধূতি, শাড়ি ও শুকনো খাবার বিলি করে ব্লক প্রশাসন। কালিয়াগঞ্জের বিডিও সৌমাল্য ঘোষ বলেন, “দুর্গতদের মধ্যে ত্রাণ বিলি করা হয়েছে। |
চাষের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি কৃষি দফতর খতিয়ে দেখছে। ক্ষতিগ্রস্তরা যাতে সরকারি নিয়মে ক্ষতিপূরণ পান সে বিষয়ে ব্যবস্থা হচ্ছে।” ইসলামপুর ও গোয়ালপোখরেরও বেশ কিছু এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গোয়লাপোখরের পোখরিয়া, পামল, নন্দঝাড়-সহ বিস্তীর্ণ এলাকা থেকে ব্যাপক হারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গোয়ালপোখরের সভাপতি অনিতা পাল বলেন, “একটি টিম তৈরি করে ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” ইসলামপুরের পন্ডিতপোঁতা, গাইসাল, মাটিকুন্ডা এলাকাতেও ঝড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। ইসলামপুরের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মহম্মদ ইজরাইল বলেন, “এলাকায় ক্ষতির পরিমাণ দেখতে তিনটি টিম করা হয়েছে। ব্লকে রিপোর্ট এসে পৌঁছলেই ত্রাণের ব্যবস্থা করা হবে।” ওই দিনই সন্ধ্যায় ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতি হয় মজুনাই চা বাগানে। বাগানের কয়েকশো হেক্টর চা গাছ শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ঝড়ে চা তৈরির কারখানার উড়ে যায়। বহু শ্রমিক আবাস ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বেশ কয়েক বছর বাগানটি বন্ধ থাকার পরে নতুন মালিক বাগানটির পরিচালনার ভার তুলে নেন। সেই সময় এই ধরনের ক্ষতি হওয়ায় বিপাকে পড়লেন কর্তৃপক্ষ। মুজনাই চা বাগানের পাশাপাশি মাদারিহাট গ্রাম পঞ্চায়েতেও ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিডিও হীরক মণ্ডল বলেন, “সব মিলিয়ে সাড়ে তিনশো বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে রিপোর্ট এসেছে।” এদিকে, সোমবারের ঝড়ে নাগরাকাটা ব্লকে প্রায় আড়াই কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। মালবাজারের মহকুমাশাসক দেবযানী ভট্টাচার্য বলেন, “ভুট্টার ফলনে সবচাইতে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া শাকসবজির ফলনেও বড় প্রভাব পড়েছে বলে জানা গিয়েছে।” আসন্ন বর্ষার মরশুমে এই ক্ষতি মালবাজার মহকুমায় বড় সঙ্কটের সৃষ্টি করতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়ে জেলা পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকাও পাঠানোর কাজ শুরু হয় বলে মালবাজার মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। |